ফ্ল্যাপে লিখা কথা যতীন সরকার একালের অগ্রনী চিন্তাবদ -একথা নিদ্বিধায় বলা যায়। তিনি সেই বিরল প্রাবন্ধিকদের অন্যতম যাঁর রচনা সমমনাদের উদ্দীপত করে , ভিন্নমতাবলম্বীদের চিন্তার খোরাক যোগায়। সাহিত্যের কীর্তিমান অধ্যাপক হলেও তার লেখালেখি শুধু সাহিত্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সংস্কৃতি , সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি ,দর্শন ও ধর্মের বিস্তৃত জগতেও তাঁর অবাধ বিচরন । গত পাঁচ দশকে তাঁর রচনা এদেশের সমাজ-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভাষ্যে পরিনত হয়েছে। চিন্তার স্পষ্টতায়, বিশ্লেষণের তীক্ষ্ণতায়, বক্তব্যের ঋজুতায় ও জীবনদর্শনের বলিষ্ঠতায় তাঁর প্রবন্ধ হয়ে উঠেছে বাংলা প্রবন্ধসাহিকেত্যর অমূল্য সম্পদ। ‘যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক ও বাংলাদেশের উপন্যাস’ সাম্প্রতিক কালের একটি অনণ্য সংযোজন। ভূমিকা এ- বইয়ের সংকলিত প্রথম প্রবন্ধটি ১৯৬৭ সনে রচিত, এবং সে সময়েরই বাংলা একাডেমীর পত্রিকায় প্রকাশিত।এরপর কবি আহসান হাবীব ‘তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকায় এটি ধারাবহিক ভাবে পুনঃপ্রকাশ করেন। এই প্রবন্ধটির জন্যই আমি বাংলা একডেমী থেকে ‘ডক্টরস মুহাম্মদ এনামুল হক স্বর্ণ পদক’ লাভ করি। প্রবন্ধটি সুধী পাঠক মহলের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করে।এদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেরশের উপন্যাস নিয়ে রচিত প্রায় সকল গবেষণা্মূলক গ্রন্থের রচয়িতা গণই যথাযথ স্বীকৃতি সহকারে আমার এই প্রবন্ধটি থেকে অনেক উপাদান গ্রহণ করেছে। এ-বইয়ের অন্য প্রবন্ধগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রায় -অব্যবহিত পরেকার রচনা। এই প্রবন্ধগুলোতে প্রাক-স্বাধীনতাকালের ও স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী চার/পাঁচ বছরে রচিত ও প্রকাশিত কিছু উপন্যাসের পরিচয় তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। কেবল মাহমুদুল হকের ‘কালো হরফ’ উপন্যাসের আলোচনটি ১৯৯২ সালে রচিত। নন্দিত কথা কথাশিল্প হুমায়ূন আহমেদের লেখক জীবনের যাত্রা শুরুতে তাঁর মাত্র দুটো উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে যখন, তখনই ‘সোমেন চন্দের উত্তর সাধক চাই’ লিখিতে এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র মুখপত্র ‘বই’ এ (আগস্ট -সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩) প্রকাশিত।এর পর প্রায় চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ অজস্র রচনার ভাণ্ডার রেখে জীবন মঞ্চ থেকে বিদায় গ্রহন করেছেন। ভাবীকালের সুধী সমালোচকবৃন্দের হাতে তাঁর রচনার যথার্থ মূল্যায়ন হবে যেদিন , সেদিন হয়তো আমার লেখাটি নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর বলেই বিবেচিত হবে। তবু, নিতান্ত অপটু হাতে হলেও আমি যে প্রথম হুমায়ূনের কথা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার অবতারণা করেছিলাম- এ কথা ভেবে খুবই গৌরবান্বিত বোধ করি। ইতো মধ্যে সেলিনা হোসেন বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ আসন অধিকার করে নিয়েছেন। তাঁরও লেখক জীবনে প্রায় গোড়ার দিকে রচিত একটি উপন্যাসের যে সমালোচনা আমি লিখেছিলাম এবং যেটি সে-সময়কার ‘সমকাল’ এ ছাপা হয়েছিল, সেটিই আমার এ- বইয়ের শেষ প্রবন্ধ।ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেনের সমগ্র সাহিত্যকৃতির সুষ্ঠু মূল্যায়নে এগিয়ে আসবেন উপযুক্ত অধিকারী সমালোচক বৃন্দ- এমনটাই প্রত্যাশা করি। আমি গত কয়েক বছর যাবৎ দুরারোগ্য আর্থরাইটিসে আক্রন্ত হয়ে গৃহবন্দি। আত্নজ-প্রতিম শ্রীমান রাজীব সরকারের উদ্যোগেই আমার পুরনো লেখাগুলো সংগৃহীত ও প্রকাশিত হচ্ছে।তাকে আন্তরিক স্নেহশিস জানাই। প্রকাশক মিলন নাথের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা অন্তহীন। বিনীত যতীন সরকার অক্টোবর২০১২ ‘বামপ্রস্থ সাতপাই, নেত্রকোনা
সূচিপত্র *পাকিস্তানোত্তর পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা উপন্যাসের ধারা *আবুল মনসুরের জীবন দর্শন: ‘জীবন ক্ষুদার দর্পনে’ *মানবতন্ত্রী আবুল ফজল ও তাঁর রাঙ্গা প্রভাত *ঐতিহাসিক রস, ঐতিহাসিক উপন্যাস ও সত্যেন সেন *যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক ও বাংলাদেশের উপন্যাস *মাহমুদুল হক ও তাঁর ‘কালো হরফ’ *সোমেন চন্দের উত্তরসাধক চাই *‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ : একটি উপন্যাসিকা
Jatin Sarker জন্ম : নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে ২ ভাদ্র ১৩৪৩, ১৮ আগস্ট ১৯৩৬ । দীর্ঘ চার দশক ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা, বাংলাদেশের কবিগান, বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম, মানবমন মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব, গল্পে গল্পে ব্যাকরণ, দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞানচেতনা, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার, আমাদের চিন্তাচৰ্চার দিক-দিগন্ত, ধৰ্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূত ভবিষ্যৎ ভাষা সংস্কৃতি উৎসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন, সত্য যে আমার যেটুকু সাধ্য । সম্পাদিত গ্ৰন্থ : সোনার তরী, প্রসঙ্গ : মৌলবাদ, জালালীগীতিকা সমগ্ৰ । বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সভাপতি এবং ত্রৈমাসিক সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পত্রিকার সম্পাদক । মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনবদ্য আত্মজীবনী পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দৰ্শন ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই-এর পুরস্কারে সম্মানিত। সর্বোচ্চ রাষ্ট্ৰীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।