b"জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক স্মারক গ্রন্থ" বইয়ের ভূমিকার অংশ থেকে নেয়া: br/bপ্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের জীবন ও কর্ম, চিন্তা-চেতনার বর্ণনা/বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এক্ষেত্রে একটি বিষয় বিশেষভাবে অতি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে, প্রফেসর রাজ্জাক পাকিস্তান রাষ্ট্র উদ্ভবের পরবর্তী বাস্তবতার প্রতি সাড়া দিয়ে শুধু যে বাঙালির অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়েছিলেন তা-ই নয়, সত্যিকারভাবে বলতে হয়, এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন অগ্রপথিক ও অনুপ্রেরণার উৎসস্থল। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের প্রারম্ভে পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামাের অভ্যন্তরে আঞ্চলিক বৈষম্য ও শােষণ উপলব্ধি করে যারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির মূলে কাজ করেছেন, প্রফেসর রাজ্জাক ছিলেন তাঁদের দ্বারা গঠিত বিবিধ আন্দোলনের পেছনের দার্শনিক। ঠিক যেন ফরাসি বিপ্লবের রুশাে, ভলতেয়ারের মতাে।br শিল্প, সাহিত্য, চিত্রকলার প্রতিও আব্দুর রাজ্জাকের ছিল সুগভীর পাণ্ডিত্য। এ কারণে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তাঁর অন্যতম বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। মােটামুটিভাবে সুসভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তােলার জন্য যে যে জ্ঞান ও গুণ প্রয়ােজন এবং যেসব মন্ত্র দ্বারা মানুষকে সত্যিকারভাবে সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত হয়ে আলােকিত মানুষরূপে গড়ে তােলা যায়, তার প্রায় সব দ্যুতিই ছিল অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের আয়ত্তে। b"জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক স্মারক গ্রন্থ" বইয়ের ভূমিকার অংশ থেকে নেয়া: br/bপ্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের জীবন ও কর্ম, চিন্তা-চেতনার বর্ণনা/বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এক্ষেত্রে একটি বিষয় বিশেষভাবে অতি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে, প্রফেসর রাজ্জাক পাকিস্তান রাষ্ট্র উদ্ভবের পরবর্তী বাস্তবতার প্রতি সাড়া দিয়ে শুধু যে বাঙালির অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়েছিলেন তা-ই নয়, সত্যিকারভাবে বলতে হয়, এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন অগ্রপথিক ও অনুপ্রেরণার উৎসস্থল। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের প্রারম্ভে পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামাের অভ্যন্তরে আঞ্চলিক বৈষম্য ও শােষণ উপলব্ধি করে যারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির মূলে কাজ করেছেন, প্রফেসর রাজ্জাক ছিলেন তাঁদের দ্বারা গঠিত বিবিধ আন্দোলনের পেছনের দার্শনিক। ঠিক যেন ফরাসি বিপ্লবের রুশাে, ভলতেয়ারের মতাে।br শিল্প, সাহিত্য, চিত্রকলার প্রতিও আব্দুর রাজ্জাকের ছিল সুগভীর পাণ্ডিত্য। এ কারণে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তাঁর অন্যতম বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। মােটামুটিভাবে সুসভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তােলার জন্য যে যে জ্ঞান ও গুণ প্রয়ােজন এবং যেসব মন্ত্র দ্বারা মানুষকে সত্যিকারভাবে সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত হয়ে আলােকিত মানুষরূপে গড়ে তােলা যায়, তার প্রায় সব দ্যুতিই ছিল অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের আয়ত্তে।
আনিসুজ্জামান একাধারে একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, ভাষা সংগ্রামী, সংবিধানের অনুবাদক এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক। এককথায় তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। এই গুণীজন ১৯৩৭ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে এক উচ্চশিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতার পার্ক সার্কাস হাই স্কুল থেকে। কৈশোরে পরিবারসমেত বাংলাদেশে চলে আসলে খুলনা শহরের এক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ঢাকার প্রিয়নাথ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন আনিসুজ্জামান। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতক জীবনে তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং ড. মুনীর চৌধুরীর মতো কিংবদন্তি শিক্ষকদের, যাদের সান্নিধ্যে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন এবং ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি বেশ কিছু বৃত্তি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পে অংশ নেন এবং 'কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমি স্টাফ ফেলো' হিসেবে লন্ডন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন। বর্তমানে তিনি শিল্প ও সাহিত্যকলার বিভিন্ন শাখায় জড়িত আছেন। আনিসুজ্জামান এর বই সমগ্রতে তার প্রখর চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার পরিচয় মেলে। আনিসুজ্জামানের বইগুলো বেশিরভাগই গবেষণা এবং প্রবন্ধধর্মী। আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধ এবং গবেষণা গ্রন্থগুলো হচ্ছে ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’, ‘আমার একাত্তর’, ’সোশ্যাল এস্পেক্টস অব এন্ডোজেনাস ইন্টেলেকচুয়াল ক্রিয়েটিভিটি’ ইত্যাদি। আনিসুজ্জামান এর বই সমূহ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'সাহিত্যে ও সমাজে', 'কালচার এন্ড থট', 'নারীর কথা', 'আইন-শব্দকোষ' ইত্যাদি। তিনি অসংখ্য পদক-পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেছেন। সেসবের মধ্যে ১৯৭০ সালে প্রবন্ধ-গবেষণার জন্য ‘বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৮৫ সালে শিক্ষায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ‘একুশে পদক’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ২০০৫ সালে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘ডি.লিট’ ডিগ্রি প্রদান করে। ২০১৪ সালে তিনি ভারত সরকার প্রদত্ত 'পদ্মভূষণ' পদক লাভ করেন।