ভূমিকা শিল্প কি? এ প্রশ্রের উত্তরে অ্যারিস্টটল বলেছিলেন , ‘হে তেখনে মিমেইতাই তেন ফুসিন’- অর্থ্যাৎ শিল্প স্বভাবের অনুকরণ করে (Art imitates Nature) । অ্যারিস্টটলের পর পাশ্চাত্যে হোরেস, লঙ্গিনাস থেকে শুরুর করে টলস্টয় ,কাল মার্কস,বানার্ড শ্য, জঁ-পল সার্ত্রে প্রমুখ এবং প্রাচ্যে ভরত,আনন্দবর্ধন ,অভিনবগুপ্ত ,ভামহ, দন্ডি ,রবীন্দ্রনাথ, শিল্প বিষয়ে অনেক মৌলিক কথা বলেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বাংলাদেশে কবীর চৌধুরী, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বা মঈনউদ্দীন খালেদ ছাড়া উল্লেখ করার মতো তেমন শিল্পসমালোচক কোথায়? কোনো সমাজে ভালো সমালোচক না জন্মালে সে সমাজে ভালো সাহিত্যিক জন্মে না- একথা যেমন সত্য, তেমনি সত্য , ভালো কবিতা না লিখলে মৌলিক প্রবন্ধ লেখা সম্ভব না, যদি তা হয় শিল্প সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ।কেননা কবিতার দার্শনিকতা ও মৌলিক প্রবন্ধের দার্শনিকতা এক ও অভিন্ন। ‘কবিতা হবে না কখনোই মস্তিষ্কপ্রসূত’ বলেছেন বোধলেয়ার। প্রবন্ধ প্রকৃষ্ট রুপের বন্ধন হলেও শিল্প সাহিত্য বিষয়ক মৌলিক প্রবন্ধগুলো কবিতার মতোই বাঙ্ময়। রবীন্দ্রনাথ তার বড় প্রমাণ।নজরুলের প্রবন্ধও কি কবিতার মতো বাঙ্ময় নয়? কিংবা জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধ? সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যে এ রকম প্রবন্ধ আছে কি? এর উত্তরে বলা যায়-ওরকম কবি আছে কি? যিনি ওরকম প্রবন্ধ লিখবেন? তবে পলাশ হকের কবিতা এবং বর্তমান প্রবন্ধগুলো যারা পড়েছেন (প্রত্রিকায় প্রকাশের সুবাদে) তারা হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন! পলাশ হকের বহুধা পরিচয় থাকলেও তিনি মূলত কবি-যিনি বাংলা সাহিত্যে নতুন একটি কাব্যধারার (মহাকবিতার) সূচনা করেছেন। তাঁর তিনটি কাব্য গ্রন্থ ‘শিরোনামহীন কাব্যের বিরতীহী পংক্তিমালা, ‘২০০১, ‘বন্দীত্বের আবেদন (২০০২) এবং ‘শীতার্ত বৈভবে উচ্ছিষ্ট শব্দাবলির আত্নদহ ‘(২০১০)। তিনটিই একক কবিতা। একক কবিতার কাব্য সংকলন বাংলা ভাষায় দু’একটি থাকলেও মহাকবিতার রচয়িতা পলাশ হক কিন্তু একজনই। সম্ভবত সে কারনেই কি হুমায়ুন আজাদ তাঁর অসাধারণ কব্যিক ভাষায় জীবনের শেষ কবিতার অনুষ্ঠানে বলেছিলেন- ‘আমি আনি না এই পলাশ হক-ই সেই একুশ শতকের কবি কি না, তবে যেই হোক , এই অনুষ্ঠানটির কথা তাকে স্মরণ করতে হবে” (০৫/০৯/২০০৩) খৃ: তারিখ জাতীয় প্রেসক্রাবের ভিআইপি লাউঞ্জে পলাশ হকের মহাকবিতা রচনার ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতির ভাষণে ড. হুমায়ুন আজাদ)। আসলে পলাশ হক কে, তাঁর গল্প, উপন্যাস ,কবিতা , প্রবন্ধ , চিত্রশিল্প ইত্যাদি মূল্যায়নে হয়তো আরো কয়েক দশক লাগবে। কেননা কোনো মহৎ শিল্পীই সমকালে কখনোই মূল্যায়িত হননি। তবে পলাশ হক সম্পর্কে বিশেষ করে কবিতা সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন হলো-পলাশ হকের কবিতা পড়ার পর সমকালে আর কোনো কবির কবিতা পড়তে ইচ্ছে করেনা অথবা পড়লেওসে সব আর কবিতা মনে হয়না। পলাশ হকের প্রবন্ধ সম্পর্কে একই কথা বলা চলে। বর্তমান গ্রন্থের প্রথম এবং শেষ প্রবন্ধটি ব্যতীত বাকী সবগুলো প্রবন্ধই প্রায় এক যুগ পূর্বে আমার হাত দিয়ে দৈনিক আজকের কাগজের সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় পাঠক সমাজে প্রবন্ধগুলো ব্যাপক ভাবে প্রসংশা পেয়েছিল । কিন্তু লেখক অনেকেই প্রবন্ধগুলো বই আকারে প্রকাশের আগ্রহ দেখিয়েলিন। কিন্তু লেখক রাজি হননি নিজে চিত্রশিল্পী না হওয়ার কারণে । প্রবন্ধগুলো প্রকাশের কয়েক বছর পর লেখক চিত্রাংকন শুরু করেন ( এখন কেমন আঁকেন সেটা অন্যত্র আলোচনা যোগ্য) । শিল্পী হবার আগে লেখক তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানবাদীতা থেকে বিমূর্ত চিত্র এবং শিল্পীদের ভণ্ডামো সম্বন্ধে যা লিখেছেন শিল্প হবার পর তার উপলবদ্ধি হলো - ‘ আসলে তা যথার্থ ছিল। বাংলাদেশের শিল্প বিষয়ক মৌলিক প্রবন্ধ বইয়ের সংখ্যা খুবই কম , হাতে গোনা দু’একটি মাত্র । পাশ্চাত্য শিল্প দর্শন হিসেবে বর্তমান প্রন্থটি শিল্পকলার পাঠক এবং চারুকলা ও সাহিত্যের ছাত্র-ছাত্রীদের রেফারেন্স গ্রন্থ হিসেবে লাগবে বলে আমি মনে করি। ড. বেলাল হোসেন সহযোগী অধ্যাপক বাংলা বিভাগ সরকারি আজিজুল হক কলেজ ,বগুড়া। সূচিপত্র * ভূমিকা * মূল প্রবন্ধের ণেপথ্য প্রবন্ধ * শিল্পের আধ্যাত্নিকতা * শিল্পে নার্সিসাস * শিল্পে স্পষ্টতা ও ভাবশিল্প * অবক্ষয়ের শিল্প * শিল্প কলার প্রতিনিধিত্ব ও প্রসঙ্গ কথা * কনসেপচুয়াল আর্ট এবং আপাত ধারনা * শিল্পীর দ্রোহে নিষিদ্ধ সুন্দর * নির্ঘুম অবরোধ, পেরেকবিদ্ধ মুখ