ভূমিকা ১৯৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তওর বাংলার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর এদেশের শাসন ভার বলতে গেলে পুরোপুরিই ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়। ব্রিটিশদের প্রায় দুশো বছরের শাসন শোষণের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালি জাতি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির মুহূর্ত থেকেই বাঙালির স্বপ্ন ভঙ্গের বীজ তার অন্তরে নিহিত ছিল এবং সে রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব সম্ভাবনা ছিল একান্তই দুর্বল। পাকিস্তান রাষ্ট্র ধ্বংসের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবন্ও নিহিত ছিল, যে দুটি বিচ্ছিন্ন ভূখন্ড নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল তাদের মধ্যকার সরলরৈখিক দুরত্ব এর চেয়েও বেশি। সর্বোপরি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে এক ধর্ম ছাড়া আর কোনো কিছুতেই সামঞ্জস্য ছিল না । তাদের ইতিহাস আলাদা, ভাষা ও সংস্কৃতি স্বতন্ত্র, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ, এমনকি পোশাক -পরিচ্ছদ ও জীবনাচরণ আলাদা।পাকিস্তানী ধর্মান্ধ রাজনৈতিক নেতাদের প্রথম থেকেই উদ্দেশ্য সৎ ছিল না। তারা ভাবল, বাঙালি জাতিকে দমিয়ে রাখার জন্য ভাষা ও সংস্কৃতিতে আঘাত হানতে হবে । তারা তাই করলেন। ১৯৪৭ সালের ২৯ জুলাই আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহম্মদ উর্দুকে পাকিন্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দিয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিক দাবি পেশ করেন। তাদের কর্মসূচির আওতায় এনে জাতির সামনে তা উত্থাপন করেন, শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক বিতর্ক। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদ অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে পরিষদের ভাষা করার দাবি জানালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী লিয়াকত আলী খান বলেন, পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্র এবং মুসলমানদের ভাষা উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা। তাকে সমর্থন করেন পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া তমদ্দুন মজলিসও রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নগুলো সামনে নিয়ে আসে। ১৯৪৮ সালের ২০ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আগমন করে ২১মার্চ বিশাল জনসভায় ঘোষণা দেন -উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার সাথেসাথে ঢাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের পর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মুসলিম লীগের বিশ্বাসঘাতক চরিত্র পূর্ব বাংলার জনগনের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। ১৯৪৮, ‘৪৯, ‘৫০, ও ‘৫১-র বছর গুলো ছিল একদিকে মুসলিম লীগ সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতার এবং অপরদিকে জনগনের স্বপ্ন ও নিদ্রাভঙ্গের কাল।পাকিস্তান আন্দোলনকালে ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের সময়ে থেকে ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্টে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত পূর্ব বাংলার জনসাধারণ ভবিষ্যৎ স্বাধীন আবাসভূমিকে ঘিরে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন-তা অচিরেই তছনছ হয়ে গেল। শারমিন খান সুবর্ণ ইডেন কলেজ,ঢাকা।
সূচিপত্র প্রবন্ধ * বাঙ্গালা ভাষা?।। বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় * বাংলা ভাষার পরিচয়----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর * পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা------- মুহম্মদ শহীদুল্লাহ * ভাষা আন্দোলনের পটভূমি------- আবদুল হক * একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন------ আবুল কাসেম ফজলুল হক * শহীদ মিনার ---------রফিকুল ইসলাম * মহান একুশে অমর শহীদেরা----------মজহারুল ইসলাম * একুশে ফেব্রুয়ারি ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ--------- সন্তোষ গুপ্ত কবিতা * কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি---মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী * বর্ষার তীক্ষ্ণ ফলার মতো----- হাসান হাফিজুর রহমান * একুশে ফেব্রুয়ারি------সিকান্দার আবু জাফর * বর্ণমালা , আমার দুখিনী বর্ণমালা-------শামসুর রহমান * স্মৃতিস্তম্ভ- আলাউদ্দিন আল আজাদ * মাগো, ওরা বলে-আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ গান * জাতীয় সংগীত------- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর * একুশে গান---------আবদুল গাফফার চৌধুরী * একশের গান ----------- তোফাজ্জল হোসেন * একুশের গান ---------- জসীমউদ্দীন * একুশের গান ------------আবদুল লতিফ * মোদের গরব, মোদের আশা-------------অতুলপ্রসাদ সেন * মায়ের ভাষার গান------------প্রতুল মুখোপাধ্যায় নাটক * কবর-------মুনীর চৌধুরী * জেগে আছো বর্ণমালা-------কৃষ্ণধর * একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন করে আন্তর্জাতিক দিবস হলো-----মোহাম্মদ হাননান * ভাষা আন্দোলনের ক্রমপঞ্জি