ফ্ল্যাপে লিখা কথা এককালে আমাদের এই দেশটা গ্রামপ্রধান ছিল। আস্তে আস্তে শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম আমরা। এই শহুরে জীবনের নাম হল মেট্রোপলিটন জীবন। এই মেট্রোপলিটন জীবনকে ঘিরেই আমাদের মাঝে ঘটতে থাকল নানান ঘটনা। ষোলজন নবীনেরা এগিয়ে এল এই মেট্রোপলিটন জীবনের নানান কাহিনীকে গল্পাকারে সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে। আর এই গল্প-গুচ্ছকে নিয়েই এই বইয়ের আয়োজন। মেট্রোপলিটন গল্প-গুচ্ছ।
সম্পাদক পরিচিতি ফার্মগেট টু কাওরানবাজার হাঁটার সময় তুচ্ছ ও ‘অতুচ্ছ’ অনেক কিছু চোখে পড়ে। বিলবোর্ডে মোবাইল কোম্পানীর কমলা-হলুদ বিজ্ঞাপনের নিচে, শুয়ে থাকা পথমানবদের ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট নিদ্রা। কোনটা তুচ্ছ আর কোনটা উচ্চ- ভাবতে ভাবতে গন্তব্যে পৌঁছে যাই। ভাবনার কূল-কিনারা পাওয়া হয়না আর। একদিন ভাবলাম- আচ্ছা উপরের বিজ্ঞাপনগুলোর মত রঙিন করে দেওয়া যায় না ওই মানুষগুলোর জীবন! কিছু একটা করা চাই। অন্তত শিশুগুলোর জন্য। যারা পৃথিবীতে একেবারেই নবাগত। বিশ্বকে দেবার মতো বহুকিছু রয়েছে এই শিশুদের ভান্ডারে। ধপ করে বসে পড়লাম ফুটপাথে ওদের পাশে। অবাক হবার কিছু নেই। কিছু একটা করার জন্য কেউ কেউ বসে পড়েন। আবার কেউ কেউ দাঁড়িয়ে যান। দাঁড়িয়ে যান নিজেই নোঙর হয়ে। যাতে আশেপাশের সম্ভাবনাময় তারুণ্যকে ভেসে যেতে না হয় মহাকালের স্রোতে। তেমন দাঁড়িয়ে যাওয়া একজনের নাম সার্জিল খান। নিজেও ঝরঝরে তরুণ। কাগজ/কলমে লিখছেন গল্প-নিবন্ধ। আর ভার্চুয়াল জগতে ব্লগিং। কিন্তু নবাগত তরুণ লেখকদেরকে নিয়ে সেই ‘কিছু একটা’ করার দুর্ধর্ষ সদিচ্ছাটি বুকে পুষে বেড়াচ্ছেন। এবং সেই পুষে রাখা সদিচ্ছার বীজ থেকে বের হতে শুরু করেছে ফসল। এবারের বইমেলায় বেরিয়েছে তার সম্পাদিত গল্প সংকলনঃ “মেট্রোপলিটন গল্প গুচ্ছ।” যাতে স্থান পেয়েছে মূলতই নবীন ষোল জন গল্পকারের ষোলটি গল্প। নিজের কলমের সঙ্গে তিনি যুক্ত করেছেন আরো কয়েকটি শক্তিশালী কলম। পালন করেছেন প্রকৃত সংগঠকের ভূমিকা। আর এই একটি ‘ভূমিকা’ই একজন মানুষকে করে তোলে অন্যদের থেকে আলাদা।
বাবা হাসানুজ্জামান খান ও মা সুফিয়া সুলতানার ছোট ছেলে তিনি। পৈতৃক নাম সাদী খান। ১৯৯২ সালের ২রা জুলাই(অবশ্য এসএসসি সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৯৯৪ সাল) জন্মগ্রহণ করা এই তরুণ বর্তমানে কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশুনা করলেও তিনি নিজেকে কম্পহিউম্যারের স্টুডেন্ট বলে দাবী করেন পড়াশোনার বাইরে স্বভাবসুলভ রসিকতার জন্য। পাঠ্যবইয়ের চেয়ে তার বেশি প্রিয় বৃষ্টির টুপটাপ আওয়াজ, গোধূলি লগ্ন, কুয়াশাভেজা সকাল, তারাভরা রাতে জোছনা কিংবা হাস্নাহেনার মাতাল গন্ধ। মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখে তাদের আপন করে নেওয়ার প্রবণতা এই মানুষটির একটি বিশেষ গুন। লেখালিখিতে প্রথম অনুপ্রেরণা দেন তাঁর প্রিয় শিক্ষক অক্ষয় স্যার। এরপরে হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা পড়ে হাতে কলম নেয়া। বর্তমানে ‘উন্মাদ’ এর সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব দিয়ে চলেছেন নিরলস অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ।
এ বছর বইমেলায় মেট্রোপলিটন গল্প গুচ্ছের পাশাপাশি আরো পাঁচটি বইয়ে গল্প সম্পাদনার প্রাথমিক কাজ করেছেন, সায়েন্স ফিকশন, ভৌতিক, রম্য, গোয়েন্দা ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছোট গল্পের সমগ্র। বের হয়েছে নিজের একক ছোটগল্পের সংকলন “কল্পনার গল্প” এবং নিজের প্রথম উপন্যাস “রঞ্জিত জননী” একগুচ্ছ কাশফুল, শুভ্র কুয়াশা, পূর্ণিমাস্নান আর মেঘের দৌড়ঝাপ কিংবা কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে নিজেকে চিনে ফেরা, গোধুলী লগনে সূর্যস্নান। বেঁচে থাকতে এর বেশি আর কিইবা প্রয়োজন…!
ভূমিকা নিখিল বিশ্বের কৃপণ সংঘের অসাধারণ সভাপতি অঞ্জন মিয়া বিগত বছরের ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে, পিতামহের উইল করে যাওয়া পাঞ্জাবীর খোলস ছেড়ে এ বছরের ঈদে নতুন পাঞ্জবী কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এই পাঞ্জাবী কেনা নিয়ে বাকী ঘটনা জানতে পড়ুন রম্য গল্প "পাঞ্জাবীর বদলে দুধ"।
একটি পাড়াগাঁয়ে জরূরী এক সমাবেশের কাজ শেষে ফিরবার সময় বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জামিল সাহেবের গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরবার সিদ্ধান্ত নিলেও যথা সময়ে ট্রেন না আসাতে রাত কাটাতে হয় স্টেশনের প্লাটফর্মে বসে। এক আগন্তুককে ঘিরে ঘটে বিচিত্র কিছু ঘটনা। সেসব ঘটনা আছে ভৌতিক ছোট গল্প "অশরীরী"তে।
অতি সামান্য বেতনের কর্মচারীর ছেলে রাকিব। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত এই জীবনে তবু বাবা যেন এক সুখের আশ্রয়! সন্তানের প্রতি চিরন্তন এক ত্যাগ আর ভালবাসার গল্প- "আনন্দধারা বহিছে ভুবনে"।
কার্টুন নেটওয়ার্ক থেকেই যেনো বের হয়ে এসেছে "পাপাই"! কিন্তু নিজের শত দুষ্টুমির মধ্যেও দুষ্টু লোকের বিরুদ্ধে তার ম্যাসিভ অ্যাকশন কমেনি একটুও! আট বছর বয়েসি এই নতুন পাপাইকে পাওয়া যাবে "পাপাই দ্যা সেইলর ম্যান"-এ!
প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করে রাজু আর বর্ষা। প্রথমে বাসায় মেনে নেয় না। তারপর শুরু করে নিজেদের মতন করে সংসার। তাদের এই সংসারকে ঘিরে নানান কাহিনী ঘটতে থাকে "মৃত বসন্ত" গল্পটিতে।
দুর্ণীতিগ্রস্থ জলিল সাহেব নিজেকে সব সময়ই একজন ভালো মানুষ মনে করেন। দাঁড় করান তাঁর সব কাজকর্মের পেছনে কিছু যুক্তি। একদিন একটি টিকটিকি এসে পাল্টে দেয় তাঁকে! কিন্তু কিভাবে? "দ্বিতীয় জীবন প্রথম মৃত্যুর আগে" গল্পটা না পড়লে তা জানা যাবে না...।
ঘরের কাজের মেয়েটা গতকাল দুপুর থেকে ধরেই বাসায় নেই। চারদিকে খোঁজ খোঁজ রব। পাওয়াও যায় তাকে এক সময়! কিন্তু একি তার পরিনতি! এ কাহিনীর বাকীটুকু আছে "গুম" গল্পটিতে।
অজানা-অচেনা একটি ছেলে একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়। তাকে ঘিরে তার সব কল্পনা। আস্তে আস্তে তাদের মাঝে পরিচিতি বাড়ে। একসময় ছেলেটি মেয়েটির সম্পর্কে সবকিছু জেনে ফেলে! "শুভ্র ছায়া" গল্পটিতে আছে তার পড়ের ঘটনা।
নবদম্পতি হানিমুনে আসে বান্দরবনে। হানিমুনে থাকা অবস্থাতেই স্বামীর একটি জরুরী কাজ পড়ায় চলে যায় ঢাকায়। দুইদিন পার করে ফিরবার পর সম্মুখীন হয় বাঁধনের সাথে। কিন্তু বাঁধনের একি রকম আচরণ! উত্তর পাওয়া যাবে "অপ্রকৃতস্থ" গল্পটিতে।
চাকরীর খোঁজে ঢাকায় আসা এক ছেলে আশ্রয় নেয় তার বড় ভাইয়ের বাসায়। ভাবীর কটাক্ষ কথা শুনে তাঁকে প্রায়ই পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। একসময় সে বুঝতে পারে দু' টাকার একটা অচল নোটের সাথে খুব একটা তফাৎ নেই তার! "বৃষ্টি বিলাস"-এ আছে সমাজের তেমনি এক অচল নোটের গল্প...
সারাবছরের মতন ঈদের দিনেও কাজ থাকে ট্রাফিক পুলিশদের। তবে ঈদে ছুটি পেয়ে যায় মইন। কিন্তু এরপরেও ছুটিতে বাড়িতে যায় না। কাটিয়ে দেয় ঢাকাতেই। এর কারণ কি? এটাই কি তবে- "হলুদ, লাল আর সবুজে জীবনের গল্প"?
বিশ্বের দুর্ধর্ষ স্বর্ণচোর ভিক্টর কারনেস পৃথিবীর নানান দেশের আনাচে কানাচে লুকিয়ে রাখে তাঁর সম্পদ। এফবিআই-এর এজেন্ট রোনাল্ড হফম্যান বাংলাদেশের রায়হানের শরণাপন্ন হয়। কারণ, বাংলাদেশ-ই এবার ভিক্টরের স্বর্ণ চুরির গোপন নিরাপদ স্থান। "গোল্ডেন বার" নামক গোয়েন্দা কাহিনিতে আছে সেই সোনার খোঁজ!
৫ বছর বয়সে রোড অ্যাক্সিডেন্টে কোমায় চলে যাওয়া রুদ্র ২৫ বছর পর জ্ঞান ফিরে পায়। এই কোমায় থাকাবস্থায় তার মস্তিষ্কে ঘটে অদ্ভুত সব ঘটনা। স্বপ্ন আর বাস্তবকে ঘিরে নানান ঘটনা! অসাধারন সেই অদ্ভুত ঘটনা জানতে হলে কিন্তু কল্পবৈজ্ঞানিক ছোট গল্প "স্বপ্নচোর" না পড়ে কোন উপায় নেই!
জীবনের মায়াকে তুচ্ছে করে আত্মহত্যা করে একটি ছেলে। মৃত্যুর পর বুঝতে পাড়ে তার সিদ্ধান্তটি ভুল ছিলো। মৃত মানুষের জবানবন্দী থেকে লেখা অনুভূতিগুলো আছে “মূমুর্ষ রূপকথা”গল্পে।
চুরির দায়ে মাঝ রাতে বাসা থেকে বের করা দেওয়া কাজের মেয়ে পাখি নিরুদ্দেশ হয়ে ঘুরে রাতটি পার করে। পরদিন পাখিকে ঘিরে একটি সংবাদ ছাপা হয়। পুরো কাহিনী জানতে “বৃষ্টিঝরা রাত, পাখির কান্না ও একটি বিচ্ছিন্ন সংবাদের গল্প” পড়তে হবে নিজ দায়িত্বে!
পঙ্গু হাসপাতালে বাবাকে দেখতে যাওয়ার সময় একজন আটকা পড়ে রাস্তার মাঝে। বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কিছু ছাত্র। কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে তাদের এক সহপাঠী! কিন্তু কি হল তারপর? “মেধাবী কেচ্ছা"-তে আছে সেই প্রশ্নের উত্তর... সূচিপত্র *পাঞ্জাবীর বদল দুধ *অশরীরী *আনন্দধারা বহিছে ভুবনে *পাপাই দ্যা সেইল্যার ম্যান *মৃত বসন্ত *দ্বিতীয় জীবন, প্রথম মৃত্যুর পূর্বে *গুম *শুভ্র ছায়া *মুমূর্ষু রূপকথা *হদুল লাল আর সবুজে জীবনের গল্প *গোল্ডেন বার *স্বপ্নচোর *অপ্রকৃতস্থ *বৃষ্টিঝরা রাত, পাখির কান্না ও একটি বিছিন্ন সংবাদের গল্প *মেধাবী দর্শন
হুমায়ুন আহমেদ পড়ে হাতে কলম নেয়া শুরুটা শখের বশে হলেও উদ্যমী এই তরুণ লেখার মধ্যেই এখনাে ঢেলে চলেছেন নিজের সবটুকু মেধা আর পরিশ্রম দেশসেরা স্যাটায়ার ম্যাগাজিন “উন্মাদ”-এর সম্পাদক আহসান হাবীব দিয়ে চলেছেন নিরলস অনুপ্রেরণা। সাহিত্যকে অন্য নবীন লেখকদের সাথে পরিচয় করাতে এরই মধ্যে জন্ম দিয়েছেন নবীন গল্পকারদের নিয়ে করা সিরিজ বই মেট্রোপলিটন গল্প গুচ্ছ। দেশসেরা স্যাটায়ার ম্যাগাজিন উন্মাদু এ কাজ করছেন রম্য লেখক হিসেবে। শখের বসে গবেষণা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে লেখার আগ্রহ লালন করে আসছেন লেখালেখিতে হাতেখড়িরও আগে। সেই ধারায় প্রকাশিত লেখকের প্রথম উপন্যাস রঞ্জিত জননী’র পটভূমি হিসেবেও তাই বেছে নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধকেই। এ বছর বেরােচ্ছে দেশসেরা সাহিত্যিকদের সাথে নবীন গল্পকারদের মিশেলে সম্পাদনার বই “মুক্তিযুদ্ধের গল্প সংকলন।” এছাড়াও গতবছর প্রকাশিত হয়েছে দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পরপার। এ বছর ভৌতিক ও সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসের দিকে ঝুঁকে লিখেছেন অস্পৃশ্য ও অচেনা জগত। ১৯৯২ সালের ২রা জুলাই জন্ম নেয়া এই তরুণ একটি বেসরকারি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন কম্পিউটার প্রকৌশলে। ভার্চুয়াল লাইফে আর অ্যাকচুয়াল লাইফে সমান তালে দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন নিজের ক্ষুরধার লেখনী শক্তির বলে । খেয়ালী এই তরুণের ভালাে লাগে জোছনা, ঝুম বৃষ্টি, গােধুলী লগ্ন, কুয়াশা। তবে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন লিখতে, লিখে চলেন নিজের। মনের খােরাক মেটাতে। সেই ভালােবাসার জায়গা থেকেই লিখে যাচ্ছেন। অনবরত। সাহিত্যে সৃষ্টি করে চলেছেন নতুন সব সম্ভাবনার দুয়ার।