ফ্ল্যাপে লিখা কথা এ বইয়ের লেখক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান একজন ভাষা সৈনিক। তাঁর ভাবনাজগতের বৃহৎ এক এলাকা জুড়ে থাকে ভাষা ভাবনা,ভাষা প্রেম। ভাষার আপন পর গ্রন্থেও এর পরিচয় মিলবে। তবে অন্য অনেকের মতো ভাষা বিষয়ে ,সে তাঁর মাতৃভাষা বাংলা হোক বা বিশ্বের অন্য যেকোন ভাষাই হোক, তাঁর একদেশদর্শী মনোভাব নেই। বরং প্রতিটি ভাষা, সে ছোট বা বড় ,এমনকি বিলুপ্ত হতে বসা আদি কোন ভাষাই হোক, সে ব্যপারে রয়েছে তার অশেষ কৌতূহল। সে কৌতূহলের বশবর্তী হয়েই তিনি এ গ্রন্থের সাতটি প্রবন্ধে ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরেছেন মাতৃভাষা বিষয়ে এমন সব প্রশ্ন ,যা শুধু ভাবনারই সঙ্গী করে না। , আমাদের শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনচর্চায় আন্তরিক ব্যবহারে উদ্যোগী হতেও সমভাবে প্রাণিত করে। দেশ ও কালের চলমান প্রবাহ থেকেই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক পরিসর থেকেও তিনি তুলে ধরেছেন মনীষীবৃন্দের মাতৃভাষা চর্চাবিষয়ক দৃষ্টান্তের পর দৃষ্টান্ত। ফলে এ বইয়ের পাঠ আমাদের সামনে উন্মুক্ত করে এমন ভাবনার জগৎকে , যার আন্দোলনে আমরা উদ্দীপিত হই প্রতিটি মুহূর্তে।
সূচিপত্র * অমর একুশের ষাট বছর * ভাষার আপন পর * বাংলা ভাষার সংগ্রাম চলবেই চলবেই * অপদার্থতার এক মিনার * হালের শবপোড়া মড়াদাহের ফল * আদি বাসীদের ভাষা সমস্যা * ভাষা ও মাতৃভাষার কবিতা
বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের একজন অন্যতম শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও বিচারক। ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মুহাম্মদ জহির উদ্দীন ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং আইনজীবী। শৈশব থেকেই রাজনৈতিক বিষয়াদি ও সংস্কৃতির দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল। ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর তাঁরা তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পরবর্তীতে রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বি.এ. (সম্মান) এবং ১৯৫১ সালে এম.এ. পাস করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তাঁর কর্মজীবনের শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে যোগ দিয়ে। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের। সহকারী এডভোকেট জেনারেল, হাইকোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য পদে দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৭৬ সালে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি হন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান একাধারে একজন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ এবং অভিধানপ্রণেতা। তিনি একজন ভাষা সৈনিক; ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর বই সমূহ ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগেরই বহিঃপ্রকাশ। তিনি উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বই সমূহ হলো ‘রবীন্দ্র সম্বন্ধে সঞ্জনা ও পার্থক্য বিচার (১৯৬৮)’, ‘যথা-শব্দ (১৯৭৪)’, ‘কোরআন সূত্র (১৯৮৪)’, ‘ভাষার আপন পর (২০১২)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত প্রবন্ধগ্রন্থের সংখ্যা ৪০টি। সাহিত্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (১৯৮৪), একুশে পদক (২০০৭) সহ আরো বেশ কিছু সম্মাননায় ভূষিত হন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর বই সমগ্র পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।