ফ্ল্যাপে লিখা কথা জানবার কথা শিখতে তো ছেলেমেয়েরা ইস্কুলে যাচ্ছে। তাহলে আবার ‘জানবার কথা’ কেন? একটা সাদা মাটা জবাব আছে। ইস্কুলের বই ছাড়াও ছেলেমেয়েরা আরো কিছু কিছু বই পড়তে চায়। পড়েও। ইস্কুলেও পড়ে , ইস্কুলের বাইরেও পড়ে। আমরা ইস্কুলের আঙিনার বাইরেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসর জমাতে চেয়েছি। এ-আসরে বোঝা না-বোঝার সঙ্গে পাস ফেলের সম্পর্ক নেই। ওরা তাই সহজ হয়ে শুনছে, আমরাও সহজ করে বলছি। বিদেশী বুক অফ নলেজ ধরনের বইগুলির মতো ‘জানবার কথা’ প্রধানতই পাতা উলটে ছবি দেখবার বই নয়। ছবির বই আর পড়বার বই দুইই। এতো হাজার বছরের চেষ্টায় মানুষ যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পেয়েছে তারই সারাংশ সহজ করে বলা হয়েছে ‘জানবার কথা’য়। --দেবীপ্রসাধ চট্রোপাধ্যায়
ভূমিকা জানবার কথার তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হলো। এতে বলা আছে মানুষেল প্রথম যুগের ইতিহাসের কথা। প্রথম মানুষ থেকে প্রাচীন সভ্যতা পর্যন্ত মিশরের নীল নদীর পার বরাবর প্রথম নগর সভ্যতা থেকে পাওয়া যায় মানুষের নিজের হাতে লেখা,নিজের তুলিতে আঁকা, নিজের হাতে গড়া নিজস্ব ইতিহাসের চিহৃগুলো। কিন্তুর তার আগে? মানুষ নিজের কথা কিছুই বলে যেতে পারে নি। বিজ্ঞানীদের নামতে হয়েছে মানুষের ঠিকানা খুঁজতে। কোথায় একটা হাড় ভাঙ্গা, কোথাও একটা ধারালো পাথর, কোথাও মাটির নিচে খুঁজে পাওয়া একটা পাত্রের ভাঙ্গা টুকরো এরকম ছোটো খাটো ছিড়ে যাওয়া গল্পের সূত্র ধরে মানুষের এগিয়ে যাওয়ার গোটা ছবিটা আঁকতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের । এখন সব ফাঁক মেলেনি, আরো অনেক জানা বাকি, আরো অনেক গল্প খুঁজে পাওয়া প্রয়োজন। এ কাজ চলেছে, এখনও চলছে। আজ তেকে ৩০ বছর আগে যখন জানবার কথা দুই প্রকাশিত হয়েছে তার থেকে আমরা কিছু বেশি কথা এখন জেনেছি, কিন্তু মূল গল্পটা প্রধানত: একই আছে। যেমন প্রথম পৃ্ষ্টার দ্বিতীয় লাইনেই বলা আছে মানুষ এই প্রানীটির বয়স আড়াই লক্ষ বছর। কথাটা একদিক দিয়ে সত্য আবার আর একদিক দিয়ে সত্যি না। যদি হাতিয়ার ধরাটাই মানুষের প্রথম লক্ষণ হয়ে থাকে তবে প্রথম মানুষ হলো অস্ট্রেলোপিথেকাস ,যারা পৃথিবীতে এসেছিল ২৬ লক্ষ বছর আগে। এমনকি মেষ ৫০০০ বছর যারা লিখিত ইতিহাস জানা যায় সেক্ষেত্রেও সব কথা এখনও আমরা জানি না। হরপ্পা আর মোহেনজোদারোর লিপিও আজও কেউ পড়তে পারেনি। যেদিন পড়তে পারবো আমরা কত নতুন কথা জানতে পারবো। ৫৫ পৃষ্টায় লেখা আছে মোহেনজোদারো আর হরপ্পার পর হাজার বছর ধরে ইতিহাস বোবা হয়ে আছে । না এখন আর তা বোবা হয়ে নেই। আজ থেকে ৩৮০০ বছর আগে হরপ্পা সভ্যতার অবসান, কিন্তু তার মাত্র ৩০০ বছর পরেই দেখা যাচ্ছে ক্যাস্পিয়ান সাগরের কূল থেকে আসা আর্য ভাষাভাষি মানুষদের স্থায়ী বসতির চিহৃ্ এবং ভঙ্গুর হরপ্পা সভ্যতার পতনের ক্ষেত্রে এই বিদেশেী আর্য ভাষাভাষিদের আক্রমণকারীর ভূমিকা ছিল। তুলনায় অনেক সভ্য হওয়া সত্ত্বেও হরপ্পার সভ্যতার মানুষরা বেদুইন আর্যদের কাছে হেরে গিয়েছিল ঘোড়া আর লোহার ব্যবহার জানতো না বলে। কিন্তু উন্নত হরপ্পা মানুষদের কাছ থেকে সভ্যতার পাঠ নিয়েছিল আর্য ভাষাভাষীর। শিখেছিল উন্নত চাষবাস, সংস্কৃতি এমনকি ধর্মও। আদিম দেবতার অন্যতম শিবের পূ্র্বপুরুষের খোঁজ মিলেছে মোহেনজোদারোর মাটির নিচে। এখনও অনেক কথাই জানা হয় নি, কিন্তু যা জানা হয়েছে তাই বা কম কিসে। যা জানি তার ওপর দাঁড়িয়েই তো আরো নতুন কথা জানতে পারবো। আর এরজন্যই তো ‘জানবার কথা’ যাতে বড় হয়ে তোমরা আরা জানতে পারো, জানাতে পারে পৃথিবীকে এমন নতুন কথা যা আজও পৃথিবীর কেউ জানে না।
Debiprasad Chattopadhyaya (জন্ম: ১৯ নভেম্বর, ১৯১৮ - মৃত্যু: ৮ মে, ১৯৯৩) ভারতের একজন প্রখ্যাত মার্কসবাদী দার্শনিক। তিনি প্রাচীন ভারতের দর্শনের বস্তুবাদকে উদ্ঘাটন করেছেন। তার সবচেয়ে বড় কাজ হল লোকায়তের প্রাচীন দর্শনকে তিনি বিরুদ্ধপক্ষের বিকৃতি হতে রক্ষা করেন এবং তা সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তিনি প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের পদ্ধতি সম্পর্কেও গবেষণা করেছেন বিশেষ করে প্রাচীন চিকিৎসক চরক ও শ্রুশ্রুত সম্পর্কে।