ভূমিকা রানা সিরিজের ৪১৯ ও ৪২০ তম বইয়ের কাহিনির নাম সূর্য সৈনিক। রানার কাজের কোনও শেষ নেই। কোন একটি কাজ শেষ হওয়ামাত্র আরেকটি কাজ এস হাজির হয়। ছুটিতে যাওয়ার ফুরসত নেই। কোনরকম দেরি না করে এক্ষুণি রওনা হতে হবে ত্রিপোলীর পথে। শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে লিবিয়ার মরুভূমিতে ক্র্যাশ করেছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্লেন! আসলে ঘটনাটি কি ক্রাশ, স্যাবোটাজ নাকি হাইজ্যাক....? ঘটনা এরপর শাখা মেলতে তঅকে দ্রুত। কাহিনির শেষে না পৌঁছে বোঝার কোনও উপায় নেই যে সত্যি সত্যি কী ঘটতে চলেছে। এখানে কাহিনির সামান্য অংশ তুলে দিচ্ছি: সাসপেনশনের দুলুনি থামবার আগেই দরজা খুলে নেমে পড়ল রান। এক পলক দেখল দেহটা। যা বুঝবার বুঝে নিয়েছে। আবারও উঠল ক্যাবে , গম্ভীর হয়ে গেছে। ওর মনে পড়ল লোকটা ট্রাকের দিকে গুলি করছিল। জানালা থেকে ঝুলছিল স্বর্ণা। ঘাড়ের উপর ক্ষত তৈরি হয়েছে নিশাতের। কিন্তু এসব ভেবে মন থেকে দূর করতে পারল না লোকটার এই পরিণতি। আবার সড়কে এসে উঠল ‘সুন্দরী’। সিভিলিয়ান গাড়ির সামনে গিয়ে থামল ।এখন জ্বলছে একটা পুলিশ ক্রুজার। স্বর্ণায কাছ থেকে ওয়ালথার নিল রানা,নতুন ম্যাগাজিন ভরে টেনে নিল স্লাইড। অস্ত্র হাতে ক্যাব থেকে নামল, চারদিকে নজর রেখেছে চলে গেল প্রথম ক্রুজারের পাশে। ওটার ভিতর থেকে হ্যাঁচকা টানে ছিঁড়ে নিল রেডিওর মাইক্রোফোন, ছুঁড়ে মারল মরুভূমির দিকে। এখন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে না কেউ। ফ্যামিলি সেডানের পাশে থামল রানা। একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভিতরে চাইল। গাড়ির ভিতর রক্তের আঁশটে গন্ধ.... টান টান উত্তেজনায় ভরপুর ‘সূর্য সৈনিক’ ১ও২ কাহিনির বৈচিত্রের জন্য পাঠক প্রিয়তা অর্জন করবে । উভয় খণ্ডের দৃষ্টি নন্দন প্রচ্ছদের জন্য রনবীর আহমেদ বিপ্লবকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের সাহিত্যধারাকে প্রায় একা হাতে জনপ্রিয় করে তুলেছেন যে মানুষটি তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এই সাহিত্যধারার বিশাল পাঠকশ্রেণী। বিদ্যুৎ মিত্র এবং শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। পাঠকদের কাছে পরিচিত প্রিয় কাজীদা নামে। প্রখ্যাত গণিতবিদ ও সাহিত্যিক বাবা কাজী মোতাহের হোসেন ও মা সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী শামসুদ্দিন নওয়াব। পরিবারের সঙ্গীতচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেওয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন কুয়াশা, মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দার মতো চিরতরুণ চরিত্রগুলোর। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই ‘কুয়াশা’ সিরিজের মাধ্যমেই মূলত রহস্যধারার বই প্রকাশ শুরু সেবা প্রকাশনীর। এরপর এক বন্ধুর প্রকাশিত জেমস বন্ডের ‘ডক্টর নো’ পড়ে ঠিক করেন বাংলাতেই লিখবেন এই মানের থ্রিলার। সালটা ১৯৬৫, মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে এলেন চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি। সাত মাস সময় নিয়ে লিখলেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ধ্বংস পাহাড়’। এই সিরিজের কাজী আনোয়ার হোসেনের বই সমূহ এর মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকিসবগুলোই লেখা হয়েছে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই সমগ্র রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের যে পিপাসা পাঠকের মনে তৈরি করেছে তা মেটাতে সাড়ে চারশোরও বেশি মাসুদ রানার বই প্রকাশ করতে হয়ছে সেবা প্রকাশনীকে, যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান।