"সড়ক নভেল" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বিদেশী সাহিত্যে পিকারেস্ক বলে উপন্যাসের একটি শাখা আছে, যেখানে নায়ক সড়ক পথে (জলপথেও) দীর্ঘ ভ্রমণকালে নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে । ইংরেজিতে এই ধরনের উপন্যাসের মধ্যে হেনরি ফিল্ডিং-এর টম জোনস্ এবং মার্ক টোয়েন-এর অ্যাডভেঞ্চারস অফ হাকলবেরি ফিন’র। দৃষ্টান্ত দেওয়া যায় । স্প্যানিশ ভাষায় সারভেন্তেসের ডন কুইক হিতােও এই শ্রেণীর উপন্যাস বলে বিবেচিত। হাসনাত আবদুল হাই পিকারেস্ক উপন্যাসের কথা স্মরণ রেখে লিখেছেন তার সাম্প্রতিকতম বই সড়ক নভেল, যেখানে। নায়ক ট্রাক ড্রাইভার মজিদ সড়ক পথে যাওয়া-আসা করে। নিয়মিত । তার সহকারী হেলপার জব্বর সাঙ্কো পাঞ্জার মতাে একই ভূমিকায় না হলেও সঙ্গী হিসেবে তার দায়িত্ব পালন। করে হাসি মুখে । আসা-যাওয়ার পথে ট্রাক ড্রাইভার মজিদের একবার যে অভিজ্ঞতা হয় তা অভূতপূর্ব এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হয় তার নিজের এবং আরাে কয়েকজনের জীবনে । নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনের একটি বিশেষ পটভূমির। চিত্র আঁকা হয়েছে এই উপন্যাসে এমনভাবে- যেখানে রয়েছে গতি, আপাতবিচ্ছিন্ন ঘটনার সমন্বয়, চরিত্রের বৈচিত্র্য এবং কাহিনীর চমকপ্রদ পরিণতি। উপন্যাসের ‘সড়ক’ শেষ পর্যন্ত আক্ষরিক অর্থে বস্তুগ্রাহ্য না হয়ে দেখা দেয় জীবনের প্রতিরূপ হিসেবে।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।