<b>ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা</b><br>বইটির মূল বক্তব্য মানুষকে নিয়েই। মানুষকে ঘিরে আছে পাহাড়-পর্বত, বন, নদী, ফুলপাখি ও আকাশ-বাতাস। প্রকৃতি ও মানুষ একাকার ও সুন্দর।রাঙামাটি, শঙ্খ-চেংগী-মাইনী-সিজক নদীর কথা আছে বইয়ে। বইটির বক্তব্য যে-কোনো পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।হৃদয়স্পর্শী ভাষায় গ্রন্থকার বলে চলেছেন মানুষের মুক্তির গল্প, রাঙামাটির সৌন্দর্যের গল্প।বান্দবানে কলেজপড়া একটি পাহাড়ি মেয়েকে অটোগ্রাফ দিকে গ্রন্থকার লিখছেন, যত দূরে যাও, এই শঙ্খ নদী, শৈলপ্রপাত, পাহাড়-বন-জুমক্ষেত, চিম্বুক, কেওক্রাডাং, বাঁশের মাচাং ঘর আর মানুষদের ভালোবাসা, মনে রেখো। ভালো ছাত্রী হও, উচ্চশিক্ষিত হও, শহরে যাও, তবুও একেবারে দুলে থেকো না কোনদিন, মন ফেলে রেখো এই পাহাড়ের বুকে।এই ঢেউ খেলানো পাহাড়-বন-নদী তীরের মানুষেরা তোমার জন্য অপেক্ষায় আছে।ওদের দুঃখ-কষ্ট-বঞ্চনা দূর করতে হবে। পাহাড়ি জননীর অশ্রু মোছাতে হবে। গ্রন্থকার প্রশ্ন করেছেন, ১৯৯৭ সালে পত্রিকায় আশাভরা যে মুখগুলো দেখেছিলাম শান্তিবাহিনীর সদস্যদের ও পরিবারের, নতুন স্বপ্নে চোখ ছলছল করা সেই মানুষগুলো আজ কেমন আছেন? গ্রন্থকার আশা করেন, বুকভরা ভালোবাসা, দেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনা নিয়ে নতুন মানুষ জন্ম নেবে পাহাড়ে, এগিয়ে যাবে অন্যায় নিপীড়ন ও শোষণ প্রতিরোধে। পাহাড়ের দুঃখ দূর হবে, কোনো কষ্টই চূড়ান্ত নয়, কোনো অন্ধকারই চিরস্থায়ী নয়, সামনে স্নিগ্ধ সকাল প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে, প্রতিদিন পাহাড়ের বুকে ভোর হয়, পাখি ডাকে।<br><b>ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা</b><br>*কোচপানা রাঙামাটি<br>আমার জন্য কেঁদো না রাঙামাটি<br>*আদিবাসী অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি<br>*শংখ নদী তীরে যেন জীবনের গান গুনতে পাই<br>*কে বন ধ্বংস করে? বন বিভাগ না আদিবাসী?<br>*অস্ট্রোলিয়া সরকারের আদিবাসীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা<br>*পার্বত্য চট্টগ্রাম : যে উন্নয়নের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে<br>*পাহাড়ি মানুষের দুঃখ কোনদিন শেষ হবে না?<br>*আমাদের ভূমি, আমাদের জীবন<br>*পাহাড়ের বিজু উৎসব দেখে আশায় চেয়ে থাকি<br>*আদিবাসীদের নবর্বষ উৎসব<br>*আদিবাসী সংস্কৃতি সৌন্দর্য<br>*মূলধারার উন্নয়ন আদিবাসী জীবনে কেন দুঃখ ডেকে আনে?<br>*আদিবাসীদের ভূমি হারানোর প্রক্রিয়া থেকে নেই<br>*আদিবাসী অধিকার, অস্তিত্ব ও পরিচয়ের স্বীকৃতির প্রশ্ন<br>*পাহাড়ে মানুষের ভেঙে যাওয়া মন আর আদিবাসী চোখে আকাশভরা আলো<br>*বিজুর আগে পাহাড়ে মানুষের মন ভালো নেই?<br>*বিজুর দিনে জুমের দেশে<br>*এই দুঃখকষ্টের মধ্যেও বিজু হোক পাহাড়ে<br>*পার্বত্য চট্টগ্রাম : বদলে যাও, বদলে দাও<br>*আলোয় আলোয় ভরে যাবে এই জুম-অরণ্য-পাহাড়?<br>*মানবাধিকার, আদিবাসী ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল<br>*আদিবাসী জীবনে বিদ্রোহ আর উলগুলানের গান<br>*রিগোবার্তা মেঞ্চু ও পাহাড়ের মেয়েরা : এই দুঃখ থাকবে না
Title
কোচপানা রাঙামাটি : পার্বত্য চট্টগ্রাম, আদিবাসী সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের কথা
সঞ্জীব দ্রং-এর জন্ম গারাে পাহাড়ের কোলে সংরা গ্রামে। ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যায়। মাঘ মাসে ওই সন্ধ্যায় গ্রামজুড়ে আকাশরাঙা পূর্ণিমা ছিল। উত্তরে একটু দূরে গারাে পাহাড় বাড়ির পাশে পশ্চিমে ছােট্ট মেননেং নদী। একদিকে পূর্নিমার চাঁদ উঠছে, অন্যদিকে একটি শিশুর জন্ম হচ্ছে। আর পূর্ণিমার রাতে যে-শিশু জন্মে, তার সম্পর্কে আম্বি (নানী) উষালতা দ্রং কী যেন অদ্ভুত কথা বলেছিলেন। মৃত্যুপথযাত্রী মা গ্রন্থকারকে সে কথা বলে গেছেন। বাবা সুহৃদ গাগ্রা, মা নয়নী দ্রং উভয়ে পরলােকগমন করেছেন। জীবনে গ্রন্থকারের পরিবার শরণার্থী হয়েছেন কমপক্ষে দু’বার। বালক সঞ্জীব নিজে একাত্তরে উদ্বাস্তু হয়েছেন মেঘালয়ে। এই নিয়ে তাঁর বই লেখার ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে।। সঞ্জীব দ্রং আদিবাসী জীবনে অনেক কঠিন সময়ের মধ্যেও বুকের ভেতর আশা জাগিয়ে রেখেছেন। তার স্বপ্ন একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে, সব মানুষ ভালাে হয়ে যাবে। সকলে আদিবাসীদের প্রতি, সকল মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও ভালােবাসা দেখাবে। পৃথিবী হয়ে উঠবে খুব সুন্দর। ইদানীং সঞ্জীব দ্রং বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান। ছাত্রছাত্রী ও তরুণদের জন্য কথা বলে আনন্দ পান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেছেন। আর নরওয়ের ট্রমসাে ইউনিভার্সিটি, আমেরিকার নটরডেমে সেন্ট মেরীস কলেজ, থাইল্যান্ডের বুরাফা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন জাস্টিস, পিস এন্ড ইন্টিগ্রিটি অব ক্রিয়েশন সেন্টারসহ অসংখ্য জায়গায় বক্তৃতা করেছেন। জাতিসংঘের অধিবেশনে জেনেভা ও নিউ ইয়র্কে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কানাডা সরকার, অস্ট্রেলিয়া সরকার, ইউরােপিয়ান ইউনিয়নসহ অনেকের আতিথ্য গ্রহণ। করেছেন। ইদানিং টিভি টকশােতে তাকে দেখা যায়, এখানেও তিনি সমান জনপ্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সক্রিয় সঞ্জীব দ্রং বলেন, মানুষে মানুষে, জীবনে জীবন মেলাবার এই আয়ােজন যেন থেমে না যায়। তিনি স্বপ্ন দেখেন, বুকের মধ্যে জমে থাকা কথাগুলাে সংগীতের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। পরম যত্ন ও মমতায় আদিবাসী কথাগুলাে গান ও সুর হয়ে যাবে একদিন।