ছাত্রজীবন শেষ হতে না হতেই একেবারে নিজস্ব সিদ্ধান্তে সে বিয়ে করে ফ্যালে এক সহপাঠীকে। আয়উপার্জনের নেই ঠিক ঠিকানা। তবু ঘর বাঁধে। চার দেয়ালের ঘর। ভালোবাসার নিটোল জমিন। আস্থার অটুট বন্ধন। দীর্ঘ সাত বছরের নিষ্ফলা দাম্পত্যজীবনের অবসান ঘটিয়ে মেঘনীল গর্ভবতী হতে তার শরীরজুড়ে ঢল নামে, চারদেয়ালের ঘরে কোথায় যেন অদৃশ্য ফাটল ধরে। সূক্ষ্ম সে ফাটল ভয়ানক অন্তর্ভেদী, চোখে পড়ে আবার পড়ে না।
এ সময়ে, এই গর্ভবহনের কালে কি নারী শরীর থেকে বিশেষ কোনো ঘ্রাণ ছড়ায়? নারী এবং বৃক্ষে তফাৎ কতটুকু? বৃক্ষ ফুল দেয়, ফল দেয়, ছায়া দেয়, নারী কি তা দেয় না? এমন কি মাটি আঁকড়ানো শেকড় যেমন বৃক্ষের চরিত্রে দেয় দৃঢ়তা, নারীও কি সংসার জমিনের সব ফাটল বন্ধ করে দৃঢ়বন্ধন এনে দেয়নি? তাহলে ঘ্রাণ থাকবে না কেন?
বৃক্ষের যেমন বয়সে রঙ বদলায় ঘ্রাণ বদলায়; নারীর ক্ষেত্রেও তা হলে পারে বই কী! চারাগাছের বর্ণগন্ধ আর ফুলে ভরা বসন্তবেলার বৃক্ষের কি একই বর্ণগন্ধ হয়? নারীও তাই। যতদিন সে বালিকা তার এক প্রকার ঘ্রাণ, ঋতুমতি হওয়ামাত্র সেই ঘ্রাণে যুক্ত হয় মধু এবং বিষ, আমিয়-গরল। তারপর নারী হয়ে ওঠার কাল এবং তারও পরে মাতৃত্বের সর্বপাবি ঢল নামার মৌসুম। এক এক স্তরে নারী এক এক রকম ঘ্রাণ ছড়ায়।
কে জানে কুহক মদির সেই ঘ্রাণ চার দেয়ালের ঘরের কোথাও কখনো দীর্ঘশ্বাস ছড়ায় কি না! কেঁপে ওঠে কিনা কোনো দেয়াল!
রফিকুর রশীদ। জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, মেহেরপুর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৮৩ সালে সিলেটের এক চা-বাগানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। মন টেকে না সেখানে। যােগ দেন কলেজ। শিক্ষকতায়। দীর্ঘ ৩৩ বছর শিক্ষকতা শেষে মেহেরপুরের গাংনী কলেজ থেকে তিনি সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেন। নিভৃতে কাব্যচর্চা দিয়ে শুরু হলেও সত্তর দশকের শেষভাগে পত্র-পত্রিকায় গল্প লিখেই তাঁর আত্মপ্রকাশ সাহিত্যজগতে। দেশের উল্লেখযােগ্য প্রায় সব কাগজে বিরামহীন লিখে চলেছেন গল্প আর গল্প, সঙ্গে উপন্যাসও। ছােট-বড় সকলের জন্যে। নির্মোহ চরিত্র চিত্রণ এবং বর্ণনার বিশ্বস্ততাই কথাশিল্পী হিসেবে তাকে এনে দিয়েছে বিশিষ্টতা। ছােটদের জন্য লেখা গল্প এবং উপন্যাসে রফিকুর রশীদ এনেছেন বিপুল বিষয় বৈচিত্র্য। প্রিয় প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ তাে আছেই, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কৌতূহলে ভরা বিচিত্র বর্ণে বর্ণিল ছােটদের নিজস্ব ভুবনের আলােকিত উপস্থাপন ঘটে চলেছে তার লেখা শিশু ও কিশাের সাহিত্যে। স্বপ্নজয়ের কথাশিল্পী রফিকুর রশীদ এরই মাঝে অর্জন করেছেন এম. নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক মােহাম্মদ খালেদ শিশু সাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি শিশু ও সাহিত্য সম্মাননা, কাজী কাদের নওয়াজ জন্মশতবর্ষ সম্মাননা, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অরণি সাহিত্য পুরস্কার, কাঙাল হরিনাথ পদক ও পুরস্কার, বগুড়া লেখকচক্র স্বীকৃতি ও সম্মাননা, সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমি সম্মাননা, সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার, দ্বিজেন্দ্র পুরস্কার (ভরত) প্রভৃতি।