ফ্ল্যাপে লিখা কথা ১৯৮৭ সালের মার্চে প্রকাশিত মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকার ‘বৃক্ষসংখ্যা’র দীর্ঘতম রচনারটি আমার বিশেষভাবে নজর কেড়েছিল-আবদুশ শাকুরের ‘গোলাপ বিসংবাদ’ । সাহিত্যিকের এ এক অসাধারণ বিজ্ঞানলেখা। ফুলবিষয়ক লেখালেখিতে রঙ ফলানোর যথেষ্ট অবকাশ থাকে কিন্তু বলতেই হয় আবদুশ শাকুর অসাধ্য সাধন করেছেন। তিনি গোলাপের অধরা মাধুরী ধরেছেন অনবদ্য এক ছন্দোবন্ধনে। জ্ঞাত ইতিহাসে গোলাপের আবির্ভাবের মুহূর্তটি থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে কীভাবে আজকের বাগান শোভা পুষ্পরানী এতসব প্রকারের রূপান্তরিত হল তারই এক জ্ঞানগর্ভ তারই এক জ্ঞানগর্ভ অথচ মনোজ্ঞ আলোচনা রয়েছে এতে। সুদীর্ঘ পথ পাশাপাশি হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়ৈছেন লেখক মানুষকে আর গোলাপকে তাঁর রসমণ্ডিত গল্পকথনে সম্মোহিত করে। অন্তে যোজিত গোলাপ নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক বাহাসটি অভিনব তবে গুরুত্বপূর্ণ। কবি বেলাল চৌধুরীর পত্রিকায় প্রকাশিত সুদীর্ঘ সাক্ষাকারেরও গোলাপের নানান দিকে নতুন আলোকপাত করেছেন অতন্দ্র এই গোলাপপ্রহরী । গোলাপকে কেন্দ্রীয় চরিত্ররূপে পাওয়া যায় তাঁর কোনো কোনো গল্প-প্রবন্ধেও। এসব ঘটে এ কারণে যে গোলাপের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেবল পাঠের নয়, চাষেরও। শত শত প্রকার গোলাপের শত শত গুল্ন স্বহস্তে লালন করে তিনি ‘বাংলাদেশের জাতীয় গোলাপ সমিতি’র স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে। নির্দ্ধিধায় বলা যায় আমাদের প্রকৃতিসাহিত্যে গোলাপপ্রেমী কথাশিল্পী আবদুশ শাকুরের গোলাপবিষয়ক যাবতীয় রচনায় সমৃদ্ধ এই গ্রন্থটি মূল্যবান অবদান হয়ে থাকবে এবং প্রকৃতিবিপর্যয়ের এই দু:সময়ের লেখক দীর্ঘদিন আমাদের কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা কুড়াবেন। -দ্বিজেন শর্মা
আবদুশ শাকুর : জন্ম ১৯৪১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, নােয়াখালী জেলার রামেশ্বরপুর গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ এম.এ, হল্যান্ডের আই.এস.এস থেকে অর্থনীতিতে এম.এস। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপনা, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে যােগদান এবং বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসাবে অবসরগ্রহণ। পড়াশােনা করেন বিবিধ বিষয়ে এবং নানান ভাষায় লেখালেখির বিষয় কথাসাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ, সংগীত, সমাজতত্ত্ব ও নিসর্গ। লেখেন ঢাকার অভিজাত সকল পত্র-পত্রিকায় এবং কলকাতার বিশিষ্ট মাসিক শহর একুশ শতক’ ও ‘মিলেমিশে’ ইত্যাদিতে। তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘চিরনতুন রবীন্দ্রনাথ’ প্রকাশ করে বাংলা একাডেমী এবং সঙ্গীত সংবিৎ শিল্পকলা একাডেমী। বাকি গ্রন্থাবলির প্রকাশক ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স, ঐতিহ্য, ও রােদেলা এবং কলকাতার দীপ প্রকাশন, প্রতিভাস ও একুশ শতক || আবদুশ শাকুর ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী। অ্যাওয়ার্ড' পান ছােটগল্পের জন্য। গল্পসমগ্র'র জন্য পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি থেকে ‘অমিয়ভূষণ পুরস্কার’ পান ২০০৩ সালে। ২০০৪ সালে প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই’ পুরস্কার পান মননশীল প্রবন্ধগ্রন্থ ‘গােলাপসংগ্রহ’র জন্য। সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য ২০০৯ সালে পান ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার' এবং ২০১১ সালে ‘শ্রুতি সাংস্কৃতিক অ্যাকাডেমি পুরস্কার।