প্রাবন্ধিক ও সমাজচিন্তক। পিতা : প্রয়াত নিধুবন ঘোষ ও মাতা : ভগবতী ঘোষ। জন্মাস্থান : নয়াগাঁও, মুন্সিগঞ্জ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণ এবং বাংলাভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর। তিনি অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর সাড়ে পাঁচ শতাধিক প্রবন্ধ ও কলাম প্রকাশিত। তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা চল্লিশ। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ : মানুষের স্বরূপ, মানুষকেন্দ্রিক জগৎ, নিষ্ক্রিয় মনুষ্যত্ব ও সক্রিয় বর্বরতা, মুক্তচিন্তা, কবিতাবিষয়ক কথা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি, স্বদেশ সমাজ সাহিত্য, বিশ্বায়নের রাজনীতি, রাজনীতিহীন রাজনীতি, আলোকিত বাংলাদেশের পথ, বাংলাদেশের রাজনীতি : প্রত্যাশা ও বাস্তবতা, সুশাসন প্রত্যাশা, ভাষা-আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা। সাক্ষাৎকারগ্রন্থ : মুখোমুখি সংলাপ, কথনবিশ্ব, সরদারের সংলাপ, কিংবদন্তীর সাক্ষাৎকার, কথোপথনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও চৌত্রিশ নোবেল বিজয়ীর সাক্ষাৎকার। সম্পাদনা গ্রন্থ : বাংলাদেশ সংখ্যালঘু, বহুমাত্রিক বিশ্বায়ন, উত্তরাধুনিকতা, পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র, নোবেল বিজয়ীদের নির্বাচিত প্রবন্ধ, মানুষের স্বরূপ সন্ধানে, বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা। তিনি প্রবন্ধের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত। Blog : agrosorobd.blogspot.com
উত্তর আধুনিকতা বিষয়টি যে কত জটিল ও অনির্দিষ্ট তা বুঝার জন্য বইটি ফপড়া যেতে পারে। বইটি কেউ পড়তে আগ্রহী হলে পল শাহিন ও ইহাব হাসান এর লেখা দুটি দিয়ে পড়তে শুরু করুন। - আনিস উল হক,সৈয়দপুর,নীলফামারী।
Read More
Was this review helpful to you?
By Shafique Hasan,
22 Sep 2015
Verified Purchase
ড. ছন্দশ্রী পাল : উত্তরাধুনিকতা নিয়ে সমাকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি-সমাজ ও দর্শনের চিন্তাধারার ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। উত্তরাধুনিক জ্ঞানপ্রক্রিয়ার ধারণাগুলো সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ও সুস্পষ্ট চেতনা না থাকলে সঠিক ব্যাখ্যা-বিশেষণ করা যায় না। উত্তরাধুনিকতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যারা মূলগ্রন্থ, প্রবন্ধ এবং রচনা প্রকাশ করেছেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও বক্তব্য জানা জরুরি। উত্তরাধুনিক চিন্তার আলোকে জ্ঞানের নতুন বিন্যাস এবং দৃষ্টিকোণ গড়ে উঠলেও আমাদের সমাজে এ বিষয়ের জ্ঞানতরঙ্গ তেমন দ্রুতবেগে বিস্তৃত হয়নি। যে-কোন নতুন অভিজ্ঞান, নতুন ধারণার মর্মমূল, বিনির্মিত ধারণা ও বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি আমরা সহজে অনুধাবণ করতে সচেষ্ট হই না। এসব বহুমেরুর জ্ঞানসংক্রান্ত গতিধারা ১৯৬০ সাল থেকে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে দ্র“তবেগে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বহুদেশে। এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যধারাও এ ব্যাপারে খুব অগ্রসর হয়নি। উত্তরাধুনিকতার জ্ঞানপ্রপঞ্চ ইংরেজি ভাষায় বহুকণ্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হলেও বাংলাভাষায় এর অনুবাদ ঘটেছে সামান্যই। শিল্প-সাহিত্য, ইতিহাস-দর্শনের ¶েত্রে উত্তরাধুনিক ধারণার যথেষ্ট প্রয়োগ বাংলাভাষায় ঘটেনি। এছাড়া উত্তরাধুনিক জ্ঞানের ও বিষয়ের সর্বমাত্রিক ধারণার বিকাশ তেমন পরিসর অর্জন করেনি বাংলায়। প্রাবন্ধিক রতনতনু ঘোষ উত্তরাধুনিক চিš—কদের মূল রচনার কিছু বঙ্গানুবাদ সংকলিত করে গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেছেন “উত্তরাধুনিক চিš—াধারা : দ্ব›দ্ব-সংঘর্ষ” শিরোনামে। এতে সংযোজিত হয়েছে মিশেল ফুকো, রোলাঁ বার্থ, জাক দেরিদা, জাক লাঁকা, এডোয়ার্ড ডবিউ সাঈদ, য়ুরগেন হাবারমাস, ইহাব হাসান, ফ্রেডারিক জেমসন, টেরী ঈগলটন, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, মানস রায়, পল শীহান, লিন্ডা হাচেওন, স্টিভেন হেওয়ার্ড- প্রমুখের মূল প্রবন্ধসমূহের বিশ্ব¯— অনুবাদ। গ্রন্থশেষে অনূদিত রচনার উৎসনির্দেশ ও অনুবাদকদের নাম উলেখ করা হয়েছে যা গবেষকদের কাজে লাগবে। উত্তরাধুনিক চিš—কদের পরিচিতি সুবিন্য¯— হয়েছে এ গ্রন্থে। সর্বশেষে সংযোজিত হয়েছে উত্তরাধুনিক পরিভাষা। উত্তরাধুনিক ধারণাসমূহ জেনে এ বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে সহায়ক হবে এ গ্রন্থ। সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন ও শিল্পকলার সঙ্গে জড়িত ও নিবেচিত লেখক- গবেষকদের নিকট এ গ্রন্থের গুর“ত্ব অনেক বেশি। যারা উত্তরাধুনিক বিষয়ের মূল রচনার সঙ্গে সুপরিচিত হতে আগ্রহী এবং এ বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভ করতে চান তাদের জন্য এ বই একটি সহায়ক বন্ধু। এ গ্রন্থে সংযোজিত প্রবন্ধগুলো অনুবাদ করেছেন সাহিত্যের ¶েত্রে বিচরণশীল গবেষক, সাহিত্যিক, অধ্যাপক ও চিš—কগণ। ¶মতার দার্শনিক ও জ্ঞানতাত্তি¡ক মিশেল ফুকোর প্রবন্ধ ‘লেখকটি কে’? লেখক ও লিখনকর্ম সম্পর্কে উত্তরাধুনিক অভিসন্দর্ভ এতে প্রকাশিত। ‘লেখকের মৃত্যু’ নিয়ে রোলাঁ বার্থের গুর“ত্বপূর্ণ প্রবন্ধটিতে আছে রচয়িতার মৃত্যু আর পাঠকের জন্মের কথা। কীভাবে সেটি সম্ভবপর তা প্রবন্ধে বিশেষিত হয়েছে। জাক দেরিদার (অ) বিনির্মাণ এবং তার অনুশীলন নিয়ে লিখিত প্রবন্ধটি পাঠ করলে বিনির্মাণ বিষয়ক ধারণার স্পষ্টতা অর্জিত হতে পারে। সাহিত্যকৃতি ও সমালোচনাকর্মে বিনির্মাণ ধারণার অব্যাহত প্রয়োগ এতে রয়েছে। ভাষা, জ্ঞান ও অজ্ঞান বিষয়ক ধারণার সংশিষ্টতা নিয়ে জাক লাকাঁর রচনাটি বেশ তাৎপর্যপুর্ণ ও বিশেষণসাপে¶। ফরাসী মনোসমী¶ক ও চিš—াবিদ লাঁকার অভিসন্দর্ভে কল্পলৌকিক ও সাংকেতিকতার মধ্যকার দ্বা›িদ্বকতা মনোসমী¶ণকে নতুনভাবে সূত্রায়িত করেছে। সমাজতাত্তি¡ক ও দার্শনিক হিসেবে সুপরিচিত য়ুরগেন হাবারমাস আধুনিকতা ও আলোকায়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সন্ধান করেছেন “জ্ঞান ও মানুষের ¯^ার্থ’ বিষয়ক একটি সাধারণ পরিপ্রে¶িত রচনার মাধ্যমে। মোট সাতটি পরসিরে তা তুলে ধরা হয়েছে টীকা-ভাষ্যসহ। আমেরিকান সাহিত্যতাত্তি¡ক ও গবেষক ইহাব হাসান উত্তরাধুনিক সাহিত্যের পরিপ্রে¶িত এবং আধুনিকতা ও উত্তরাধুনিকতার পার্থক্য তুলে ধরেছেন “অর্ফিয়ূসের বিভক্তিকরণ” শীর্ষক প্রবন্ধে। “মার্কসবাদী বির্তকে আদর্শিক অবস্থান” এবং উত্তরাধুনিকতার সংকট, সম্ভাবনা ও বি¯—ার নিয়ে সুবি¯—ৃত বিশেষণ করেছেন তিনি। এতে তার বিতর্কপ্রবণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাংস্কৃতিক অবলোকন টীকা-ভাষ্যসহ আলোচিত হয়েছে। ধ্র“পদী চিš—াবিদ, দার্শনিক ও সংস্কৃতিবিশারদ এডোয়ার্ড ডবিউ সাঈদ লিখেছেন ‘ওরিয়েন্টালিজম-এর ভ‚মিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ। প্রাচ্যবাদী জ্ঞান ও সংস্কৃতি এবং বুদ্ধিজীবী হিসেবে তার অভিজ্ঞতা ও সম্ভাবনা এতে বিশেষণ করা হয়েছে। নানা ঘটনাক্রম ও ব্যক্তিগত চিš—ার পরিপ্রে¶িত নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। “উত্তরাধুনিকতাবাদীদের উৎস কোথায়?” শীর্ষক প্রবন্ধ লিখেছেন জ্ঞান ও সংস্কৃতির বহুত্ববাদী পন্ডিত এবং বামপন্থী বিশ্ববী¶ার আলোকে সাহিত্য বিচারক টেরী ঈগলটন। তিনি মার্কসবাদী পন্ডিত হিসেবে খ্যাত। উত্তরাধুনিকতাবাদের দ্বা›িদ্বক মূল্যায়ণ এবং সমোলোচনামূলক বিশেষণ করেছেন তিনি। সাব অল্টার্ন তথা নিম্নবর্গ বিষয়ক গবেষক, সমাজবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক- এর প্রবন্ধ ‘সাব অল্টার্ন কি কথা বলতে পারে’। তাঁর প্রবন্ধে গুর“ত্ব পেয়েছে নিম্নবর্গীয়দের সমালোচনা ও গুর“ত্বহীন বিষয়বস্তু। বিশেষত নিম্নবর্গীয় নারী ও প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কে তিনি স্পষ্টবাক ও ¯ে^াচ্চার। গবেষক ও প্রাবন্ধিক মানস রায় লিখেছেন “উত্তরাধুনিকতার ফাটল থেকে: আলোকজান্দর ক্লুগের সিনেমা” শীর্ষক প্রবন্ধ। এতে আলোচিত হয়েছে “ওবের হাউজেন থেকে মিউনিখ:রাষ্ট্রপ্রযোজিত রাজনৈতিক ছবির দ্বিধার আখ্যান”, “ক্লুগে ইতিহাসের চিত্রমালা” “উত্তরাধুনিকতা: স্মৃতিফলক ও মরণগীতির পরে”, “ইতিহাসপন্থী এবং উত্তরাধুনিকতা; ক্লুগে: মার্ক্সবাদ ও উত্তরাধুনিকতার মধ্যিখানে”, চিহ্নতাত্তি¡ক অš—র্ঘাত, “ক্লুগে এবং অসংগঠিত ব্রেখট”, ক্লুগের মাতৃতান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতি” প্রভৃতি শিরোনামযুক্ত বক্তব্য। অধ্যাপক, চিš—ক ও সমালোচক স্টিভেন হেওয়ার্ড লিখেছেন “বহু অর্থ, বহু ¯^র, বহু দৃষ্টিকোণ” শীর্ষক প্রবন্ধ। ‘হেটারোগসিয়া’ ধারণার সর্বাত্মক বিশেষণ এতে আলোচিত হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনুবাদকের টীকাভাষ্য ও বিশেষণ। গবেষক ও চিš—ক পল শীহান লিখেছেন ‘শেষের পর: উত্তর মানব হয়ে ওঠা” শীর্ষক প্রবন্ধ। এতে উত্তর-মানবের অবস্থা-পরিস্থিতি সম্পর্কে কল্পনা ও চিš—াধারা বিশেষিত হয়েছে। মানবোত্তর পৃথিবী কেমন হতে পারে, ইতিহাসের সমাপ্তির পরে কেমন হতে পারে জীবনসংস্কৃতি তার উপস্থাপন এবং সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে বিভিন্ন জনের ধারণাও বিশেষিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন তথ্যসূত্র ও টীকাভাষ্য সংযোজিত হয়েছে। উতরাধুনিকতা বিষয়ের আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থের রচয়িতা এবং ইংরেজি ও তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক লিন্ডা হাচেওন লিখেছেন “উত্তরাধুনিকতাবাদের প্রয়োগ” শীর্ষক প্রবন্ধ। এতে আলোচিত হয়েছে: উত্তরাধুনিকতা কী, উত্তরাধুনিকতাবাদের প্রদর্শন ও রাজনীতি। সাহিত্যে উত্তরাধুনিকতার প্রতিফলন সম্পর্কে তিনি বিশেষণ করেছেন। সর্বমোট চৌদ্দটি মূল প্রবন্ধের বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করে সম্পাদক ও অনুবাদকবৃন্দ বাংলাভাষা ও সাহিত্যের ¶েত্রে উত্তরাধুনিক রচনার সংযোজন করেছেন। এতে বাংলাভাষা-ভাষী সাহিত্যানুরাগী, গবেষক, পাঠক, সমালোচক উপকৃত হতে পারেন। এ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য সম্পাদক ও প্রকাশককে ধন্যবাদ দিতে হয়। পাঠকসমাজ উত্তরাধুনিকতা বিষয়ে মূলগত ধারণার আলোকে এবং নতুন জ্ঞানবিন্যাসে নিজেদের ধারণাকে আরও স্পষ্প করবেন এ গ্রন্থ পাঠ করে এটুকু আশা করা যায়।