ফ্ল্যাপে লিখা কথা তার হওয়ার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আর সে কিনা হয়ে গেল লেখক! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও যে লেখক হওয়া যায়, সে জানে। কিন্তু সংসার ভালো বেসে, সন্তানকে ভালো বেসে, হয়ে গেল নির্ভেজাল গৃহিনী। কিন্তু অধ্যায়নকালের লেখালেখির অঙ্কুরটা যে আস্তে আস্তে বড় করছিল সে- নিজের ভেতর, নিজের সত্তায়, মস্তিস্কে, সর্বোপরি অস্তিত্বে। দৈনিক পত্রিকায় প্রতিযোগিতামূলক লেখা ছাপিয়ে পুরষ্কার পাওয়া, গল্প লেখা, আবৃত্তিতে প্রথম হওয়া- আরো কত কী! তারপর একটু বিরতি নিয়ে হুট করে আবার লেখালেখি শুরু। শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় গল্প, বিভিন্ন ম্যাগাজিনে বিভিন্ন স্বাদের মজার রচনা এবং শেষ পর্যন্ত উপন্যাস। এই হচ্ছে ফারজানা ঊর্মি, সেই ছোট্টটি থেকৈ মেধার স্বাক্ষর বইতে বইতে শেষে ফার্স্ট, উদ্ভিদবিজ্ঞানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
একটা বই উৎসর্গ করেছিলাম তাকে-
ছোট ঘাসফুলটাও আমরা ছুঁয়ে দেখি একসঙ্গে, ঘর থেকে বের হলেও দুজন একসঙ্গে- কোনো খাবারঘরে, ক্রেতা হয়ে কিংবা কোনো আত্মীয় আবাসে। কারণে-অকারণে হেসে উঠি মুহূর্তে মুহূর্তে, বোধ আর বোধহীনতা বোধগম্য না হলে কথা একান্তে। দুঃখ না যতটা ভাবায় আমাদের, আনন্দ আর সুখ ভাবায় বেশি- এত আনন্দ কেন জীবনে, এত সুখ কেন তা যাপনে!
খুব সত্য একটা কথা বলব এখন। আমি আমাকে নিয়ে যতটা না নিশ্চিত, তাকে নিয়ে অনেক বেশি নির্ভার। তার লেকা তো আমি পড়ি, কঠোর সামলোচক হয়ে পড়ি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ে যাই মুগ্ধ, আনন্দিতও।
কিন্তু এই মেয়েকে নিয়ে আমার দুঃখ আছে- লিখতে গেলে যে রান্নাটাও করতে হয়, তা অবশ্য সে করে, তবে মাঝে মাঝেই কিছু পুড়ে যাওয়ার গন্ধ আসে নাকে। অপরাধী বদনে সে আমার সামনে এসে দাঁড়ায় তখন। লেখার মগ্নতায় যে মেয়ে এক নিমগ্ন, ভোজনরসিক হয়েও, ওই পুড়ে যাওয়া জিনিস মুখে দিয়েও আমি চেহারাটা হাসি হাসি করে রাখি। তার কাছে যে আমার একটাই চাওয়া- লিখতে লিখতে একদিন সে আমাকেও ভুলে যাক!
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।