"আমি সরদার বলছি " বইয়ের ফ্ল্যাপের লিখা কথা বিশিষ্ট চিন্তাবিদ সরদার ফজলুল করিম বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের অন্যতম পৃথিকৃত। জ্ঞান-পিপাসু এই বিপ্লবী মানুষটি নানা অর্থেই এক অসামান্য চরিত্র। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই বৈচিত্রে ভরপুর। বৈপ্লবিক আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে চাকরি ছেড়েছেন, জীবনের সকল চাওয়া পাওয়াকে তুচ্ছ করে আজীবন জড়িয়ে থেকেছেন আন্দোলন-সংগ্রামে। চারবার কারাবন্দী হয়ে ১১টি বছর বন্দী অবস্তায় ছিলেন। দীর্ঘদিন লগাকুজীবন কাটিয়ে লেখালেখিকে নিলেন লড়াই-সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে। দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন প্রচুর। এই দেশকে আপন করে নেয়ার অমৃতকথা আমরা তাঁর রচনায় পাই। আমি সরদার বলছি সরদার ফজলুল করিমের আত্মজীবনীমূলক একটি গ্রন্থ। এতে ওঠে এসেছে তাঁর শৈশব-কৈশোর, যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠা, বরিশাল থেকে রাজধানী ঢাকায় আগমণ, দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তাঁর নানা স্মৃতি, আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির কথা, আন্দোলন-সংগ্রাম, বন্দীজীবনসহ বৈচিত্র-বৈভবে পরিপূর্ণ একটি জীবনের নানা কথা।
গ্রন্থের প্রতিটি অধ্যায় এতই বৈচিত্রে ভরা, পাঠকের মনে হবে, যেন কোনো মহাঝীবন-ভিত্তিক কাহিনী পাঠ করছেন। সেই কাহিনী থেকে পাঠক সমৃদ্ধ হবেন, আহরণ করতে পারবেন জীবন, জীবন-উপভোগের, জীবনের আদর্শের নানা সূত্র। পাঠক বুঝতে পারবেন, সরদার ফজলুল করিম জীবনকে কীভাবে দেখেছেন। পাবেন মানুষের জন্য উপভোগ্য একটি জীবনের সন্ধান।
মে ১, ১৯২৫- সালের পহেলা মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তাঁরা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে৷ ম্যাট্রিকুলেশন শেষে তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সনে তিনি তার আই.এ. পাঠ সমাপ্ত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে '৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তিতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ১৫ জুন, ২০১৪ তারিখে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়মারা যান৷