ফ্ল্যাপে লিখা কথা ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রকৃতই একটি জনযুদ্ধ। কারণ এতে এ দেশেল নারী-পুরুষ সমানভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশ মাতৃকার স্মান রক্ষার্থে, দেশের মান রাখতে গিয়ে পাকিস্তানি হানাদার, রাজাকার, আল-বদর, আল-শাসসের হাতে বাঙালি নারীদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছিল, হারিয়েছিল তাদের মূল্যবান সম্ভ্রম। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই চরম জনম দুঃখী নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ আখ্যা দিয়ে সমাজে যথাযথ পুনর্বাসনের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সমাজ কি তাদের গ্রহণ করেছিল?
‘বীরাঙ্গনাদের কথা’, ‘একাত্তরে নির্যাতিত নারীদের ইতিহাস’ এবং ‘১৯৭১ সম্ভ্রম হারানো নারীদের করুণ কাহিনী’ গ্রন্থে সুরমা জাহিদ সমাজের নানা স্তরে বীরাঙ্গনাদের দীন-হীন অবস্থাকে উপস্থাপন করেছেন। ইতিহাসের প্রয়োজনে এখানে উঠে এসেছে এমন সব লোমহর্ষক অজানা তথ্য যাকে এড়িয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নির্মাণ অসম্ভব।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রায় চার দশক যখন পূর্ণ হচ্ছে তখনই ‘১৯৭১ সম্ভ্রম হারানো নারীদের করুণ কাহিনী’ গ্রন্থটি আমাদেরকে অতীতের সাথে সাক্ষাৎ ঘটানোর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবস্থানকে নতুন আরোয় উদ্ভাসিত করবে।
ভূমিকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের কথ্য ইতিহাস সংগ্রহের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন সুরমা জাহিদ। তাঁর ‘বীরাঙ্গনাদের কথা’ প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। তারপর লেখেন ‘একাত্তরের নির্যাতিত নারীদের ইতিহাস’ (২০১২)। এখন প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে ‘১৯৭১ সম্ভ্রম হারানো নারীদের করুণ কাহিনী’ (২০১৩)। সবগুলি বইতেই বীরাঙ্গনারা নিজের মুখে তাঁদের কথা বলে গেছেন। সম্পাদক নিজে অল্প কথা বলেছেন, বলতে দিয়েছেন তঁঅদেরকেই, যাঁদের নিয়ে এ বইগুলি লেখা।
কী মূল্যের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ করেছি, ১৯৭১ সম্ভ্রম হারানো নারীদের করুণ কাহিনী তা আবার আমাদের মনে করিয়ে দেবে। মনুষ্যত্বের কী অবমাননা ১৯৭১ সালে ঘটেছিল, কী আত্মত্যাগ করেছিলেন আমাদের মা-বোনেরা, তার মর্মস্তদ কাহিনী আমাদের জানতে হবে। কেননা তা আমাদের ইতিহাসের অংশ। এ বই পড়ে সকলেই শিহরিত ও আন্দোলিত হবেন। এসব বিবরণ সকলকে জানতে হবে, পড়তে হবে। নইলে নিজের দেশের সঙ্গে পরিচয় সম্পূর্ণ হবে না।
বীরাঙ্গনাদের আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। সুরমা জাহিদকে জানাই অভিনন্দন। তিনি এমন একটি জাতীয় কর্ম সম্পাদন করেছেন যা অবিস্মরণীয়।
সুরমা জাহিদ ছােটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। শুরু হয় কবিতা দিয়ে। সাহিত্যের প্রায় সকল আঙ্গিনায় বিচরণ করছেন যা প্রকাশ পায় তাঁর কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অন্যরকম চাওয়া’, অপর সৃষ্টি পাঠকপ্রেমীর নিকট সমাদৃত উপন্যাস ‘খণ্ডক’ । পরবর্তী প্রকাশ সহজ-সরল, প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত উপন্যাস আজ বসন্তের দিন। আরাে প্রকাশিত হয় ছােটগল্প ‘না আর যাবাে না', গল্প ‘সােনার। পালঙ্কে আমি একা, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। নির্যাতিত নারীদের নিয়ে গবেষণাধর্মী আলােড়িত প্রকাশনা 'বীরাঙ্গনাদের কথা। স্কুল জীবন থেকেই বাংলাদেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে জড়িত থেকে সক্রিয় ভূমিকা রেখে। চলেছেন। বাংলাদেশের নারীদের বিভিন্ন সংকট, সংখ্যাতিময় অবস্থার প্রেক্ষাপটে লেখনীর দ্বারা হয়েছেন তিনি সােচ্চার। ইতােমধ্যে তিনি কুমারখালী সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, দক্ষিণ বাংলা সাহিত্য সাংস্কৃতিক পদক এবং কবি সুফিয়া কামাল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন। সুরমা জাহিদের জন্ম ১৯৭০ সাল। জন্মস্থান : রাজাবাড়ি, রায়পুরা, নরসিংদী। বাবা : মরহুম আলফাজ উদ্দিন আহমেদ, মাতা : আম্বিয়া আক্তার। স্বামী : মােঃ জাহিদ হােসেন। ছেলে : মােঃ নাদির হােসেন লুই ও মেয়ে : নুর-এ-জান্নাত জুই। শিক্ষাজীবন শুরু করেন রায়পুরা উপজেলার জিরাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তারপর মরজাল কাজী মােঃ বশির উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গডিডমারী উচ্চ বিদ্যালয় শেষ করেন কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে।