ফ্ল্যাপে লিখা কথা আহমেদ তানভীর লিখেছেন কবে থেকে? জেনেছি তিনি স্নাতক পরীক্ষা দিলেন। তবে তাঁর লেখা কবে দেখেছি? সেই ছয় বছর আগে হয়তো ‘প্রথম আলো’র নবিশী পাতায়, পরে যুগান্তর ও কালের কণ্ঠও তার কবিতা লেখা দেখা গেছে। পৈত্রিক ভিটা তাঁর বাংলাদেশ গআর ভারতের সীমান্তবর্তী সুনামগঞ্জের এক প্রত্যন্ত গ্রামে, জন্ম আর বাল্যকালের লেখাপড়া নেত্রকোণার অজপাড়াগাঁ-এ। কলেজ জীবন কাঁটছে কিশোরগঞ্জে । আন্দাজ করা যায়, তানভীরের অর্জন বই পড়ে নয়, জীবনের ঘাটে আর মাঠে। তানভীর নিজে জীবনের চর্চা আরলেখাপড়ার সাথে কিছু বই পড়ে যে জ্ঞান অর্জন করেছেন, সেই থেকেই তাঁর কবিতার ক্লাস শুরু। কলেজ জীবনের প্রথমেই ইংরেজী সাহিত্যের সাথে তাঁর পরিচয়। কিছু জ্ঞানী মানুষের নিয়ত অনুপেরণায় তানভীরের লেকার হাত শক্ত হচ্ছে। রস পাচ্ছে কবিতার ভূমি। বাড়ছেগ সবুজ প্রাণজ কাব্যকথা। ২০১২ সালে এর ফেব্রুয়ারি মাসে কিশোরগঞ্জবাসীকে উপহার দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ তথা ময়মনসিংহ অঞ্চলের কথ্য ও চালু ভাষায় অথচ আধুনিক ফরম্যাটে লেখা শতাব্দীজয়ী কাব্য ‘জীবনগাঙের পরানকথা’ । সে কাব্য কিশোরগঞ্জচ বাসী পরম স্নেহে, আদর ও শ্রদ্ধায় গ্রহণ করে কবিকে দিয়েছেন অগাধ অনুপ্রেরণা। আহমেদ তানভীর তাঁর প্রকাশিতব্য কাব্যগন্থ ‘কাঠকয়লার আঁচড়; এও ঐ প্রাণজ ধারার সাথে মিশেল করেছেন দর্শন। কবিতায় দর্শন প্রচুর মেলে। কেউ কেউ মরা প্রাণে দর্শন চাপিয়ে কবিতাকে নিয়ে যায়ন রবাস্তববাদ, আধুনিক ও উত্তরাধুনিকতার লেবাসের পাশে। আহমেদ তানভীর এইসব চাপানো বুদ্ধিজাত কবিতা লেখেননি। তিনি তার মূল থেকে না নড়ে স্বাভাবিকভাবেই কবিতায় গ্রামজ ,প্রাণজ জীবনের দায় ও দক্ষিণা মিশিয়ে লিখেছেন ‘কাঠকয়লার আঁচড়’। আমি বিশ্বাস করি , বাংলা সাহিত্য তাঁর লেখাকে সাদরে গ্রহণ করবে এবং দেশের প্রকৃত কবিতাপ্রেমীদের উৎসাহে তানভীর লেখা চালিয়ে যাবেন। আহমেদ তানভীরের প্রতি রইল প্রাণঢালা ভালোবাসা। এগিয়ে যাও।
সমকালীন সাহিত্য-সমঝদারদের মতে, আত্মিক ও সহজাত কাব্যের কবি আহমেদ তানভীর। ছোটবেলার খেলার সাথী ভেবে সরল কৈশোরে ভালোবেসে ফেলেন শব্দজনপদের কবিতাকুমারীকে। সেই সে ধ্বনি-ব্যঞ্জনা-ঘোর আজও তারে টেনে নিয়ে যায় কাব্যকলার রহস্যভুবনে। তার কবিতা নানাবিধ জীবনমুখী উপাদানে ঋদ্ধ, ফলে সময়ের বহুমাত্রিক ছাপ সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয় আহমেদ তানভীরের লেখায়। কবিতাপ্রেমের দহনে-ক্ষরণে দগ্ধ এ কবি শব্দের কারুকাজে মাটি-মানুষের ছবি আঁকতে গিয়ে নিজেকে ‘শব্দরাখাল’ পরিচয় দিতে আনন্দ বোধ করেন। ভালোবাসেন সত্য-সুন্দরকে। প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে। শিক্ষাজীবনে বাচিক শিল্পী ও থিয়েটারকর্মী হিসেবে বিভিন্ন শিল্প-সংগঠনে ছিল তার সরব উপস্থিতি। মৌলিক সাহিত্যসৃষ্টির পাশাপাশি অনুবাদ করেন বিদেশি ভাষার সাহিত্য থেকে। ইদানীং গল্প ও প্রবন্ধের উঠোনে তার বিচরণ লক্ষ্যণীয়। পেশাগত জীবনে রাষ্ট্রায়ত্ত একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন আহমেদ তানভীর। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: জীবনগাঙের পরানকথা (২০১২), কাঠকয়লার আঁচড় (২০১৩), বাবুইশিল্পের ব্যাকরণ (২০২০), আষাঢ়িকা (২০২১)। সম্পাদিত সাহিত্যপত্রিকা: ‘ৎ’ (খণ্ড-ত)।