ভূমিকা আদমের জন্য অপেক্ষা আমার লেখা দ্বিতীয় উপন্যাস। যতদূর মনে পড়ে, এটা প্রথমে ছিল গল্পের আকারে। প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে। পড়ে এটিকে বড় করা হয়। সেটা সম্ভবত ১৯৮০ সালে। পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ তে। এর আগে অবশ্য ‘মামুলী ব্যাপার’ নামে অন্য একটি লেখা উপন্যাস হিসেবে পত্রিকায় ও বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। আদমের জন্য অপেক্ষা বই হিসাবে প্রথম বের হয় ১৯৮৬ সাল। এর পেছনে অবশ্যই মুক্তধারা ও চিত্তরঞ্জন সাহা, অর্থ্যাৎ চিত্ত বাবু বা চিত্তদা’র ভূমিকাই প্রধান ছিল।
আমার প্রথম বই পরাস্ত সহিস, গল্পসংকলন, বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে। সেটি ছিল নিজস্ব উদ্যোগ। এরপর আরো একটি বই এক বন্ধুর উদ্যোগে। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন সুব্রত বড়ুয়া বললেন, একটা পাণ্ডুলিপি তৈরি করো, তোমাকে মুক্তধারায় চিত্তবাবুর কাছে নিয়ে যাব। পাণ্ডলিপি তৈরি করতে সময় লাগল না, প্রায় তৈরিই ছিল। সুব্রত দা নিয়ে গেলেন চিত্তবাবুর কাছে। তার হাসিমুখ এখনো মনে পড়ে । তিনি বললেন, পাণ্ডুলিপি দুজন রিভিউ করবেন, মনোনীত হলে তারপর একজন ব্যাকরণ ও বানানবিদের কাছে যাবে। সেই অনেক আগে চিত্তরঞ্জন সাহা এই প্রয়োজনীয় আধুনিক ব্যবস্থাটি চালু করেছিলেন। মুক্তধারা থেকে গল্পগ্রন্থ ‘আগমন সংবাদ’ বের হলো ১৯৮৪-র জুনে।
পরে পাণ্ডুলিপি চিত্তদা নিজেই চেয়েছিলেন। সেটিই আদমের জন্য অপেক্ষা। আজ জহর লাল সাহা ও সজীব সাহার উদ্যোগে সেই মুক্তধারা থেকে আদমের জন্য অপেক্ষা এখন নতুন করে বের হচ্ছে, এক ধরনের আবেগ ও সুখস্মৃতি অনুভব করছি।
আর, বহুদিন পর বইটি আবার নেড়েচেড়ে দেখতে পাচ্ছি, এই লেখাটিতে অনেক আবেগ, লেখাটি অনেক সরল, কিন্তু পূর্ণমাত্রায় আন্তরিক। সবার জন্য শুভকামনা। মইনুল আহসান সাবের মে-২০১২
মঈনুল আহসান সাবেরের জন্ম ঢাকায়। ২৬ মে ১৯৫৮। পৈতৃক ভিটে একদা বরিশাল ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পিরােজপুর। দেশের বহু বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে, যাওয়া হয়নি ওই পিরােজপুর। বাবার ফেলে আসা ভূমি সাজানাে আছে সাবেরের কল্পনায়। জন্মের পর এই ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। সংসার জীবনও। যদিও এক সময় ইচ্ছা ছিল, থিতু হবেন না, পথে পথে থাকবেন, আজ এখানে তাে কাল ওখানে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তিনিও সেই ওদের মতাে, যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত না টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বর। বড়দের জন্য প্রথম লেখা ১৯৭৪-এ। প্রকাশিত হয়েছিলাে সে সময়কার সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তারপর ৪০ বছর ধরে এই একটিই কাজ, বিরতিসহ বিরতি ছাড়া। প্রথম বই গ্রল্পগ্রন্থ “পরাস্ত সহিস বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে। চাকরি না করে উপায় নেই। তাই করছেন, সাংবাদিকতা। এখন অবশ্য বেকার। বেকার থাকার অভিজ্ঞতা তার আছে। বাসনা বেকারই থেকে যাওয়ার। বেড়াতে ভালােবাসেন। একা থাকতেও পুরস্কার পেয়েছেন সামান্য কয়েকটি। বাপি শাহরিয়ার শিশুসাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। স্ত্রী নাহিদ নিগার, দু পুত্র আহসান সেনান ও আহসান সাজিদকে নিয়ে তার সংসার।