ফ্ল্যাপে লিখা কথা রবীন্দ্রনাথকে সত্যরূপে চেনা জানা বোঝার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন তাঁর অনিন্দ্য ভাবমূর্তিটির বিনির্মাণ। তার পরে তাঁর মানবিক দোষত্রুটিগুলোর নির্ভুল মূল্যায়ন করে কিছু নম্বর কাটা গেলে যেতে দেওয়া। যেমন রবীন্দ্র-রক্ষবাহিনী কর্তৃক রোগান্তরিত করে কোয়ারনটিনে রাখা রবীনদ্রনাথের সব চেয়ে বেশি নম্বর কাটা যাবে পিতামহ দ্বকানাথের প্রতি তাঁর অকৃতজ্ঞতাজাত বিতৃষ্ণার জন্য। কেন এই বিস্ময়কর অঁট্রেপ্রেনটির প্রতি তাঁর সবচেয়ে বেশি দানপুষ্ট পৌত্রটির এমন অন্তহীন অবজ্ঞা? দ্বারকানাথ যথেষ্ট হিন্দু ছিলেন না বলে? আমরা দেখি যথেষ্ট হিন্দু না বরং তাঁর পুত্র ও পৌত্র। দেবেন্দ্রনাথ না -পূর্ণব্রাহ্ম, না পূর্ণহিন্দু। রবীন্দ্রনাথও তাই, শেষের দিকে মানবধর্মের নামে বস্তুত ধর্মহীন। আজ আমরা সমগ্র বিশ্বময় সাফল্যের রবমাল্য গলে উদ্যাপিত যে হিন্দুদের দেখি, তাঁরা সকলে পৌণে দুইশত বৎসর পূর্বের দ্বারকানাথ ঠাকুরের মতোই আধুনিক হিন্দু-যারা গণেশপূজা করেছেন এবং একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতৃত্বও দিচ্ছেন, যাঁরা লক্ষ্ণীপূজা করেছেন এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যের গভর্নরও নির্বাচিত হচ্ছে; যারা স্বরস্বতিী পূজা করেছেন এবং একই সঙ্গে ‘নাসা’র মহাকাশ স্টেশণের কমাণ্ডারও নিযুক্ত হচ্ছে। এঁরা সকলেই দ্বারকানাথের উত্তরসূরি ‘আধুনিক হিন্দু’ -দেবেন্দ্রনাথের বা রবীন্দ্রনাথের কেউ নন।
সূচিপত্র * রবীন্দ্রজীবনের অনুজ্জ্বল অঞ্চল * রবীন্দ্রচর্চায় বামবলয়ের ঐতিহাসিক অবদান * দরিদ্র রবীন্দ্রনাথ * অন্তরালের রবীন্দ্রনাথ * স্বদেশি রবীন্দ্রনাথ * রবীন্দ্ররক্ষীবাহিনী অনাবশ্যক * মৌলিক সংগীত ও যৌগিক সংগীত * রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রেমিকা * রবীন্দ্রনাথের চিরস্থায়ী গালমন্দ * রবীন্দ্রনাথের স্থপতি কাদম্বরী দেবী * মৃত্যুহীন রবীন্দ্রনাথ * অপাঠ্য রবীন্দ্রনাথ * রবীন্দ্র-বিদূষণের সূচনা * ব্যর্থ রবীন্দ্রনাথ * রবীন্দ্রমনের একটা খোলা জানালা * রবীন্দ্রনাথের রূপাকুল গান * মহাব্যবস্থাপক রবীন্দ্রনাথ * রবীন্দ্র-প্রিয়ম্বদা ট্র্যাজি-কমেডি * রবীন্দ্রনাথও মানু্ষেই ছিলেন * ব্রাত্য রবীন্দ্রনাথ
আবদুশ শাকুর : জন্ম ১৯৪১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, নােয়াখালী জেলার রামেশ্বরপুর গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ এম.এ, হল্যান্ডের আই.এস.এস থেকে অর্থনীতিতে এম.এস। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপনা, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে যােগদান এবং বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসাবে অবসরগ্রহণ। পড়াশােনা করেন বিবিধ বিষয়ে এবং নানান ভাষায় লেখালেখির বিষয় কথাসাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ, সংগীত, সমাজতত্ত্ব ও নিসর্গ। লেখেন ঢাকার অভিজাত সকল পত্র-পত্রিকায় এবং কলকাতার বিশিষ্ট মাসিক শহর একুশ শতক’ ও ‘মিলেমিশে’ ইত্যাদিতে। তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘চিরনতুন রবীন্দ্রনাথ’ প্রকাশ করে বাংলা একাডেমী এবং সঙ্গীত সংবিৎ শিল্পকলা একাডেমী। বাকি গ্রন্থাবলির প্রকাশক ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স, ঐতিহ্য, ও রােদেলা এবং কলকাতার দীপ প্রকাশন, প্রতিভাস ও একুশ শতক || আবদুশ শাকুর ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী। অ্যাওয়ার্ড' পান ছােটগল্পের জন্য। গল্পসমগ্র'র জন্য পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি থেকে ‘অমিয়ভূষণ পুরস্কার’ পান ২০০৩ সালে। ২০০৪ সালে প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই’ পুরস্কার পান মননশীল প্রবন্ধগ্রন্থ ‘গােলাপসংগ্রহ’র জন্য। সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য ২০০৯ সালে পান ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার' এবং ২০১১ সালে ‘শ্রুতি সাংস্কৃতিক অ্যাকাডেমি পুরস্কার।