ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহ-প্রদত্ত এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এটি এমন ধর্ম, যা পার্থিব ও অপার্থিব, লৌকিক ও অলৌকিক জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধ নির্মাণ করে মানুষের আপাতসীমিত জীবনকে এক মহাজীবনের সঙ্গে, এক শাশ্বত অমর জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেয় এবং মানুষের পার্থিব জীবনের মূল্যবোধকে অসীমলোকে উন্নীত করে। পার্থিব ও লৌকিক জীবনকে অসীমলোকে উন্নীত করার সাধনাকেই সংক্ষেপে আমরা সুফীবাদ বলতে পারি। তবে একই সঙ্গে এ কথাও সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, সুফীসাধনা ইসলামী শরীয়তের বাইরে অবশ্যই নয় এবং হতে পারে না। কুরআন ও হাদীসের যাহেরী ও বাতেনী শিক্ষাই সুফীসাধনার মূল ভিত্তি। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-ই প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ সুফীÑএকটি ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট। রাসূলুল্লাহ (স.) নবুয়তপূর্ব অবস্থাতে গারে হেরায় মোরাকাবা-মোশাহেদার সাধনা করতেন। নবুয়তের পরেও এ নীতিতে কোনো ভাঙন ধরেনি। তাসাউফে ইসলাম গ্রন্থে হযরত আয়শা সিদ্দিকী (রা.)-এর বর্ণনাতে রয়েছে যে, এক সময় হযরত আয়শা (রা.) হযরত নবী করিম (স.)-এর নিকট যখন উপস্থিত হন, তখন হুজুর (স.) ওজদের হালে ছিলেন। তিনি হযরত আয়শা (রা.)-কে দেখে জানতে চান, “তুমি কে?” হযরত আয়শা (রা.) তার উত্তরে বলেন, “আমি আয়শা।” পুনরায় নবী করিম (স.) প্রশ্ন করেন, “আয়শা কে?” হযরত আয়শা (রা.) জবাব দিলেন, “আমি আবু বকর (রা.)-এর মেয়ে।” নবী করিম পুনরায় প্রশ্ন করেন, “আবু বকর (রা.) কে?” হযরত আয়শা (রা.) জবাবে বলেন, “নবী করিম (স.)-এর বন্ধু।” নবী করিম (স.) পুনরায় জানতে চাইলেন, “নবী করিম (স.) কে?” হযরত আয়শা চুপ হয়ে গেলেন। কারণ, তিনি বুঝতে পারলেন যে নবী করিম (স.) ‘হাল’ বা ভাবোচ্ছ্বাসে আছেন। এতে বোঝা যায় যে, নবী করিম (স.) তখন এমন ভাবে বিভোর ছিলেন যে, তাঁর কাছে নিজের অস্তিত্ব অবগতির অবকাশও ছিল না। সুফীসাধনার মূল লক্ষ্য হলো দীদার-ই-ইলাহী। আল্লাহ মাশুকের সঙ্গে মিলিত হওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা ও মিলন। এ কেবল অনুভবের। এই গ্রন্থে আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হতে সুফীগণের সুতীব্র আকাক্সক্ষার কথা, জগৎশ্রেষ্ঠ সুফীগণের কথা এবং সুফীবাদ ও তার বিভিন্ন দিকের কথা বলা আছে।