ফ্ল্যাপে লিখা কথা রবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয় ও ইংরেজী অনুবাদের মাধ্যমে তাঁর কবিতার অকস্মাৎ খ্যাতিপ্রাপ্তি এবং পরবর্তী দশ বছরের মধ্যেই সেই খ্যাতির রীতিমতো স্তিমিত হয়ে পড়া এই বিষয় গুলো নিয়ে গত একশ বছরে কম লেখালেখির কাসুন্দি ঘাঁটা হয়নি। একদিকে কেউ কেউ ভক্তির ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে স্রেফ অন্ধ রবীন্দ্রস্ত্ততিতে নিমগ্ন থেকেছেন, অপরদিকে কোনো চালিয়াৎ সমালোচক এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকীর্তি, এমনকি তাঁর আন্তর্জাতিক অর্জনকেই খাটো করে দেখাবার অসৎ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। লেখা বাহুল্য, এই দুই গোত্রের সমালোচনাই ইংরেজি সাহিত্যে রবীণ্দ্রনাথের পদার্পন ও প্রস্থান সম্পর্কে আমাদের পূর্ণাঙ্গরূপে অবহিত করতে পারে না। ভক্তি বা হিংসার প্রাবল্যে সত্যিকার ইতিহাস রয়ে গেছে চোখের আড়ালেই। চলতি কাঠামোগুলোর বাইরে গিয়ে স্বচ্ছতার সাথে রবীন্দ্রজীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবহুল সময়কেই সুচারুভাবে দেখতে চেয়েচেন পলাশ দত্ত। তাঁর লেখা একই সাথ মিলবে কবির মমতা ও গবেষকের সততা। কোনোকিছুকে অযথা বড়ো বা খাটো করে দেখাতে তিনি চাননি। বহু নথি ও চিঠিপত্র যাচাই করে সত্যিকার তথ্যটাকে বের করে এনেছেন আন্তরিকভাবে। প্রচলিত বহু প্রশংসাবাণীর দীনতা যেমন ফুটিয়ে তুলেছেন, তেমনি অনেক ভুল তথ্যকেও যথাযোগ্য প্রমাণসমেত খণ্ড করে দিয়েছেন । কীভাবে পাশ্চাত্যের সাহিত্যাঙ্গন অভিমুখ রবীন্দ্রনাথের যাত্রা হলো শুরু, ইয়েচস ও এজরা পাউণ্ডের সাথে তাঁর যোগাযোগ স্থাপন ও পরে দূরত্ব সৃষ্টি হবার কারণ, তাঁর কবিতার ইংরেজি অনুবাদের ইতিবৃত্ত, নোবেল যে শুধু গীতাঞ্জলির জন্যই তিনি পেয়েছিলেন এমন বহুল প্রচারিত তথ্যের আদৌ সত্যতা আছে কিনা, ইংরেজি গীতাঞ্জলি প্রকৃতপক্ষে বেরিয়েছিল কবে, সেই সময়ে ইংরেজি ভাষায় লেখা রবীন্দ্রজীবনীগুলোর হাল-সাকিন, মেরি লাগো রচিত কবির অতি জরুরি একটি জীবনী কেন বা উপেক্ষিতই থেকে গেল, তাঁর আমেরিকা -ভ্রমণ ও নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সাথে টানাপোড়েন এরকম কিছু অজানা-অচেনা-কুয়াশাচ্ছন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোকসম্পাতী ও সারবান বিশ্লেষণ, সংশ্লিষ্ট প্রকৃত তথ্য একত্রীকরণ এবং রবীন্দ্র-জীবনের বিচিত্র সময়ের অজানা বিবরণ উপস্থাপনই বইটির মূল উপজীব্য। এসব অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ঘিরে লেখকের বিবেচনা অবশ্যই যুক্তিসিদ্ধ আর সূতীক্ষ্ণ- এ মন্তব্য আশা করি অতিকথন হিসেবে গণ্য হবে না। যে গীতাঞ্জলি রবিকে ইংরেজির রবি করে তুলেছিল সেই গীতাঞ্জলিকে অবলম্বন করে ইংরেজীর রবির জীবনের অপরিহার্য মানুষ এবং ঘটনাগুলিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে এখানে। রবীন্দ্র-অনুরাগী পাঠকেরা অনুসন্ধিৎসু বইটি থেকে পাশ্চাত্যের পটভূমিতে দাঁড়ানো এক ভিন্ন রকম রবীন্দ্রনাথের সন্ধান পাবেন।