ফ্ল্যাপে লিখা কথা ....ছোট্র ছেলে খোকা মায়ের উপর অভিমান করে ঘটনাক্রমে উঠে পড়ে ট্রেনের বগিতে। পেট্রন তাকে টেনে নিয়ে যায় বগিতে। ট্রেন তাকে টেনে নিয়ে যায় দিগন্তহীন দিগন্তের দিকে। সন্তানের পথ চেয়ে সময়ের পরিক্রমায় মা কমেলা পরিচিতি পায় পাগলী হিসেবে। অসীম শূন্য দৃষ্টি নিয়ে বসে থাকে নদীর কিনারেখোকার অপেক্ষায়। খোকা আসে না। আসে না ১৯৭১ সাল । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সাহাপুর গ্রামেও তার ঢেউ লাগে। চাঁচকৈড় নেয় তারই ঘনিষ্ট মুসলমান বন্ধু সাহাপুর গ্রামের আফের সরকারের বাড়িতে। আফের সরকার বীরেনকে লুকিয়ে রাখে। রাতের আঁধারে স্বর্ণের হাতছানিতে সরকারের মধ্যে জেগে উঠে আদিম এক হিংস্রতা। একদিন বীরেনকে মেরে ফেলে সোনার পোটলা বাগাবার জন্য এই ঘটনার একমাত্র স্বাক্ষী থাকে সরকারের বাড়ির চাকর মেনাজ। কিন্তু বীরেনকে মেরে আফের সরকার সোনা যায় না। একমাত্র স্বাক্ষী মেনাজকেও দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয় আফের সরকার এবং গ্রামে প্রচার করে মেনাজ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। সন্তান স্বামী হারিয়ে কমেলা পাথর হয়ে যায়ং। যুদ্ধের ডামাঢোলে আফের সরকার পিস কমিটির মেম্বর হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এলাকায় মিলিটারি আসে । আফের মিলিটারিদের পালের গোদা মেজরকে বাড়িতে নিয়ে আসে তমহা আয়োজন করে। নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সরকার রাতের জমাট অন্ধকারের মধ্যে মেজরের হাতে তুলে দেয় স্বামী -সন্তানহারা কমেলা পাগলীকে।
সময় গড়িয়ে যায়। একদিন কমেলার রাতের আধারে নদীর ধারে প্রসব করে ‘পাপের দলা’। সন্তান হারিয়ে যেমা পাগল সেও আপন পেটের নারি ছেড়া ধন দেখে চমকে উঠে। এ কোন হানাদের বাচ্চা তার পেটে? তার স্বামী গেছে যে দেশের জন্যে যুদ্ধ করতে সেই দেশের শত্রুর বাচ্চা তার পেটে । ঘৃণায় এক দলা থুথু চলে আসে কমেলার মুখে। মনে হয় তারপাশে পড়ে আছে ‘এক দলা পাপ’। উঠে দাঁড়ায় কমেলা। অসীম শক্তি তার পায়ে। লোহার চেয়ে শক্ত তার বাহু। পাথরেরচেয়ে ঠাণ্ডা চোখ । তুলে নেয় সদ্যজাত বাচ্চাকে। হাত ধরে নয়। আদর করে নয়। ঘৃণায় তার বজ্রমুষ্ঠিতে। কমেলা উঁচু করে ধরে সদ্যজাত সন্তানের দু’পা।দোল দেয়ে কমেলা, ডান থেকে বামে। না হলো না। দোলের গতি বাড়ায়। এক দুই তিন-ছিটকে ফেলে দেয় ‘পাপের দলা’কে দ’য়ের জলে।হঠাৎ বিজলীর চমকে কমেলাদেখে সেই পাপের দলা কুণ্ডলী পাকিয়ে ছিটকে পড়েছে পানিতে। তারপর শুধু ‘ঝপাৎ’ শব্দ। তারপর?