ফ্ল্যাপে লিখা কথা জানুয়ারি ১৯৭১ হতে জানুয়ারি ১৯৭২ এই তের মাসের শুরুতে ‘৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে আনন্দ উল্লাশ করেছি। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে শাসক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র শুরু হলে প্রতিবাদে মিটিং মিছিলে অংশ নিয়েছি। ১লা মার্চ, ২রা মার্চ, ৩রা মার্চ, ৭ই মার্চ এবং ২৫ শে মার্চের কালোরাত দেখেছি। পাকিস্তান আর্মির নিষ্ঠুর পৈশাচিক আক্রমণের শিকার নিরস্ত্র মুমূর্ষ মানুষের আর্তচিৎকার শুনেছি। শুনেছি-হাজারো কামান মর্টারের গোলার শব্দ, ডিনামাইট ও হরেক রকমের কান ফাটানো বোমার শব্দ। দেখেছি- আগুন আর আগুনের লেলিহান শিখা। অলিতে গলিতে মরা মানুষের লাশের স্তুপ, ঢাকা শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া বিপন্ন মানুষের স্রোত। শহরে,বন্দরে, পাড়াগাঁয়ে পাক-বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের দৃশ্য দেখেছি । মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি, ট্রেইনিং করেছি- হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছি। যুদ্ধক্ষেত্রে বুকে গুলি খেয়ে সহযোদ্ধাকে জয় বাংলা বলতে বলতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছি। দেখেছি বাঙালি জাতির যুদ্ধ জয়ের উল্লাস। এ সব কিছুর নিরব সাক্ষি না হয়ে নতুন প্রজন্মের জন্য সবই তুলে ধরেছি আমার ‘রক্তঝরা একাত্তর’ গ্রন্থে।
এ.কে.এম. মোজাম্মেল হক কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর দিঘিরপাড় গ্রামে ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যখন শেষ বর্ষ বি.এ. ক্লাসের ছাত্র তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামে রূপ নেয়। প্রিয় মাতৃভূমি বর্বর পাক-বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতের দেরাদুনে অবস্থিত উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঠান্ডুয়া মিলিটারি একাডেমী হতে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশ শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন হলে পুনঃ লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৭২ সালে বি.এ এবং ১৯৭৫ সালে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। জীবিকার তাগিদে ১৯৭৭ সালে টেকনিক্যাল এডুকেশন ক্যাডারে পলিটেকনিকে শিক্ষকতার পেশায় যোগদান করেন এবং সফল শিক্ষক রূপে ২০০৫ সালে সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পূর্ব থেকেই জনাব হক আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্টটাইম লেকচারার হিসেবে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক নানান পত্রিকায় তাঁর বিভিন্ন লেখ্য প্রকাশিত হয়েছে। 'রক্তঝরা একাত্তর' ছাড়াও তিনি তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যও পাঠ্যানুযায়ী একাধিক পুস্তক রচনা করেছেন। সোশ্যাল সায়েন্স-১ এবং সোশ্যাল সায়েন্স-২ পুস্তক দু'টি কারিগরি শিক্ষাঙ্গনে সমাদৃত হলে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড বইগুলো প্রকাশ করে এবং পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক হিসেবে নির্ধারণ করে। তাছাড়াও টেকনিক্যাল রিপোর্ট রাইটিং, বিজনেস কমিউনিকেশন, মনোবিদ্যা, অকুপেশনাল গাইডেন্স প্রভৃতি পুস্তক রচনা করে তিনি খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেছেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পেরে তিনি সর্বদা গর্বিত। তবে একজন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি আজ মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়ে যাচ্ছে- বিস্মৃত হতে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস লিখতে এবং পড়তে সকলের প্রতি বরাবরই তাঁর আহবান।