বাংলাদেশের লোক-সংস্কৃতির এক বড় অঙ্গ গ্রামীণ মেলা। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় তা এক গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার। অতি প্রাচীনকাল থেকেই তা বিশেষ বিশেষ উৎসব পাল-পাবর্ণ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর মূলে রয়েছে উৎসব। তাকে আরও আনন্দঘন করে তোলার উদ্দেশ্যেই এ মেলার আয়োজন। উৎসবের উৎস খুঁজতে গেলে একেবারে উজিয়ে চলে যেতে হয় মানব সমাজে প্রত্যুষকালে। মানব জাতির বয়স যতদিন উৎসবের বয়সও প্রায় ততদিন। সমাজ যত এগিয়েছে উৎসবের বয়সও প্রায় ততদিন। সমাজ যত এগিয়েছে উৎসবেরও তত রূপ বদল ঘটেছে। কালের বিবর্তনে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মেলা। অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে এসব গ্রামীণ মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। তা আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির এক মূল্যবান সম্পদ। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের পূর্ব পুরুষদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার হাজারো স্মৃতি। যুগ যুগ ধরে একে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি ও লোক-ঐতিহ্যের ধারা। এক্ষেত্রে খুলনা একটা লোক-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ অঞ্চল। এর অঙ্গ হিসেবে মেলাও অনুকূল পরিবেশ পেয়ে পুষ্ট হয়েছে, বিকশিত হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি পালটে গেছে। পারিপার্শ্বিক আস্থার চাপে তার অধিকাংশই এখন ম্রিয়মাণ, অবক্ষয়ের শিকার। অনেক মেলা ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যা আছে তাও বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বর্তমান গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য বৃহত্তর খুলনা জেলায় টিকে থাকা মেলাগুলোর তালিকা তৈরি ও তার বিবরণ গ্রন্থবন্ধ করা এবং এর গুরুত্বের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো। আসলে আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির প্রয়োজনেই এসব লোকোৎসব মেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নিজেদের মৌলিক সত্তার সন্ধানে ফিরে যেতে হবে তার অনাবিল আনন্দের জগতে যার কোন বিকল্প নেই। এ মহামিলনের স্রোতেই তৈরি হবে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। এক্ষেত্রে পাঠক এ গ্রন্থ দ্বারা কিছুটা হলেও উদ্বুদ্ধ হবেন বলে আশা করা যায়।
ড. শেখ গাউস মিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ২ মার্চ, বাগেরহাট জেলার সদর থানার বাদেকাড়াপাড়া গ্রামে। পিতা শেখ আব্দুল লতিফ, মাতা মেহেরউন্নিসা বেগম। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স এবং ১৯৭০ সালে মাস্টার্স করেন। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পি-এইচ,ডি ডিগ্রি পান। কর্মজীবনে তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন অধ্যাপনাকে। অধ্যাপক হিসেবে পাঠদানের সাথে সাথে শুরু থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে লেখালেখির সাথে যুক্ত সাহিত্যের অধ্যাপক হলেও তাঁর প্রিয় বিষয় ইতিহাস। বিশেষ করে আঞ্চলিক ইতিহাস তাঁর সবচেয়ে পছন্দের বিষয়। তার পি এইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরােনাম ছিল খুলনার লােক সাহিত্যে সমাজ সংস্কৃতি ও ইতিহাসের উপাদান। এ পর্যন্ত স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের পত্র-পত্রিকা ও গবেষণা পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা চার শতাধিক। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা আট । এগুলাে হল, বাগেরহাট লােক সাহিত্য, বাগেরহাটের ইতিহাস-প্রথম খণ্ড, বাগেরহাটের। ইতিহাস-দ্বিতীয় খণ্ড, মহানগরী খুলনা : ইতিহাসের আলােকে মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধ-বাগেরহাট জেলা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-খুলনা জেলা প্রভৃতি। সরকারিভাবে নিয়ােগপ্রাপ্ত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনী শীর্ষক জাতীয় পর্যায়ের গ্রন্থ। রচনা সমাপ্ত করেছেন। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষণার। স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিশু একাডেমী স্মারক, বাগেরহাট ফাউণ্ডেশন স্বর্ণ পদক, রুমা স্মৃতি পদক, মেয়র পদক-২০০৯ সহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী নূরজাহান বেগম একজন শিক্ষিকা। বর্তমানে তিনি খুলনা শহরের বাসিন্দা।