ভূমিকা বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রোয়াল ডাল নামটি তেমন পরিচিত নয়। এর প্রধান কারণ, বাংলা ভাষায় তাঁর বইয়ের অনুবাদ তেমন হয়নি। সালেহা চৌধুরী অনুবাদ করেছেন তাঁর কয়েকটি গল্প আর ছোটোদের জন্যে লেখা একটি উপন্যাস। আর মাতিলদার অনুবাদকর্ম যখন শেষ পর্যায়ে, তখন জানি এই বইটিও নাকি অনূদিত হয়েছে। করেছেন শিমন শারমিন। এ-ছাড়া আর কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তো , বাজারে এর একটি অনুবাদ থাকা সত্ত্বেও আমি কেন আরেকটি ক’রতে গেলাম, সে-ব্যাপারটা তদন্তের ভার অনুসন্ধিৎসু পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম। সে ভার ছোটোদের নয় কিন্তু, তবে ছোটোরা যখন বড়ো হবে, তখন ভিন্ন কথা!
রোয়াল ডাল-এর ছোটোদের জন্যে লেখা বইগুলো আমাদের ছোটোদের পড়া দরকার। তাঁর উদ্ভট রসের মজার মজার গল্পগুলো থেকে ওদেরকে বঞ্চিত করা হবে ‘দণ্ডনীয় অপরাধ’ । তাঁর যে কয়টি বই এ পর্যন্ত পড়েছি , তাতে আমার এই বিশ্বাসই জন্মেছে। অনুবাদ করা কর্তব্য, রোয়াল ডাল এর এমন বইয়ের সংখ্যা নগণ্য নয়। তাহলে মাতিলদাই কেন? কারণ, আমাদের ছোটোদেরকে বড়োদের হামবড়া থেকে রক্ষা করতে এবং বড়োদেরকে ছোটো হয়ে যাওয়ার অভিশাপ থেকে রেহাই দিতে এ রকম গল্পের বড়ো প্রয়োজন!
পৃথিবী অতি অদ্ভুত এক জায়গা! এখানে সকল মা বাবার মমতা যেমন আছে, তেমনি তাঁদের কারও কারও ক্রূরতাও আছে! এটি অবিশ্বাস্য, তবে বাস্তব! সেইরকম এক বাস্তবতার গল্প এই মাতিলদা। গল্পের রম্য দিকটি খুব প্রবল হলেও তার পেছনে বাস্তবটুকুও যে আড়াল করা যায় না! মাতিলদায় আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয় । এবং বলা যায়, সেটিই মাতিলদার লক্ষ্য।রোয়াল ডাল বলেছিলেন যে, জীবনটাকে ছোটোদের চোখ দিয়ে দেখতে হলে একবার হাঁটু ভেঙে মেঝেতে হাত লাগিয়ে হামা দিতে হবে, চোখ তুলে দেখতে হবে বড়োরা কেমন সদর্পে মাথা তুলে আছে আর সহেতু-বিনাহেতু মুহুর্মুহু হুকুম জারি করছে। মাতিলদায় ছোটোদের জন্যে রয়েছে অনেককাহিনী গল্প এবং একটুখানি শিক্ষা আর বড়োদের জন্যে অনেকখানি শিক্ষা এবং একটুখানি গল্প। বড়োরা ছোটোদেরকে পড়াতে চান শিক্ষামুলক বই আর ছোটরা পড়তে চায় গল্পের বই। (তাতে একটু আধটু শিক্ষা গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও ওদের খুব একটা আপত্তি হবে বলে মনে হয় না) কিন্তু ওনারা ভুলে যান, শিক্ষার প্রয়োজন যে শুধু ছোটদের, তা নয়। বড়োদের শিক্ষার প্রয়োজনটা বরং বেশি। অথচ মজার ব্যাপারটা হচ্ছে, ‘অশিক্ষিত’ বড়োরাই ছোটদেরকে নানারকম শিক্ষা দিয়ে ‘শিক্ষিত’ করে তুলবার কাজে আদাজল খেয়ে লাগেন। (আশা করি , ছোটোরা এই ভূমিকা পড়[বে না। গরুর রচনার ভূমিকা আর উপসংহার মুখস্ত ক’রতে ক’রতে ওদের নিশ্চয় ওই দুটোর ওপর থেকে ভক্তিটক্তি উঠে গেছে। ভাগ্যিস , এই বইয়ে অন্তত কোনও উপসংহার নেই!)
ভূমিকার নামে ম্যালা তেলেনা হলো। এমনিতেই যে অনুবাদ করেছি, তাতে কারও নজরে পড়লে বাসায় ঢিল পড়বার আশঙ্কা আট আনা, সেটাকে আর ষোলো আনায় টেনে তুলতে চাইছি না! কাজেই এই বলেই চূড়ান্ত দাঁড়ি টানছি যে , বইটি পড়ে যদি ছোটোরা হয়ে যায় মাতিলদা আর বড়োরা হতে চায় হানি আপু, তবে আমার পরিশ্রমটা নেহাত পণ্ডু যাবে না!