ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের কোষগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, প্রকাশিত হয়নি শুধু মুক্তিযুদ্ধ কোষ। অথচ, গত শতাব্দীতে বাঙালিরা শ্র্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধে বিজয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসরদের পরাজিত করে প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন বাংলাদেশ। বাঙালির দীর্ঘ ইতিহাসে , এই প্রথম বাঙালি নিজের রাষ্ট্র গঠন করে। বাংলা ভাষা লাভ করে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে (২৬ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ত্রিশলক্ষেরও বেশি বাঙালি শহীদ হন আর ছয়লক্ষের মতো নারী হন ধর্ষিত। আহত অগুনন। মুক্তিযুদ্ধ অভিঘাত হেনেছিল প্রায় প্রতিটি বাঙালি পরিবারে। একদিকে যেমন মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন, তেমনি অবরুদ্ধ দেশে থেকেও প্রায় সব বাঙালি মুক্তি অর্জনে সহায়তা করেছেন। তাদের সবার দু:খ-বেদনা, আত্নত্যাগ, বিজয়, আনন্দের গাথা এবং হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার ,আলবদর, আলশামস, শান্তিকমিটির অবর্ণনীয় অত্যাচার ,গণহত্যার বিবরণ ১২ টি খণ্ডে মুক্তিযুদ্ধ কোষ। ২০০৫ সালে প্রথম পাঁচ খণ্ডে মুক্তিযুদ্ধ কোষ প্রকাশিত হয়েছিল । আজ আট বছর পর প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ,লেখক, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সম্পাদনায় আবারও পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত হয়ে ১২ খণ্ডে প্রকাশিত হলো মুক্তিযুদ্ধ কোষ। এ দেশের প্রকাশনা শিল্পেও এটি একটি বড় ঘটনা। বলা যেতে পারে, স্বাধীনতার চারদশক পর আমরা পেলাম ১২ খণ্ডে প্রায় পূর্ণাঙ্গ একটি মুক্তিযুদ্ধ কোষ। যেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে বাঙালির গৌরব গাথা। বাঙালির গৌরব গাথা নিয়ে এমন একটি কোষ গ্রন্থ সংকলন ও প্রকাশের কথা এর কেউ ভাবে নি।
সূচিপত্র * ভূমিকা * ভুক্তি * ভুক্তিসূচি * লেখক সূচি * নির্দেশিকা * শব্দসূচি
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।