ভূমিকা হুমায়ূন আহমেদ সুরসিক ছিলেন গল্পের মায়াযাদুতে মুহূর্তেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের অসম্ভব ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। সাহিত্য কিংবা আড্ডায় তাঁর কৌতুকবোধ ছিল তীব্র ফলে তিনি যখন কৌতুক করে কিছু বলতেন তখন শ্রোতারা পক্ষে হাস্যসম্বরণ কঠিন হতো। বিস্ময়কর হলো, সেই হাস্যরসে ভাঁড়ামোর ছাপ খুঁজে পাওয়া যেতন না। বরং অসামান্য পরিমিতিবোধের কারণে হাস্যরসেও লুকিয়ে থাকত গভীর এক অনুভূতির স্পর্শ। হুমায়ূন আহমেদের জাদুকরী কথাকথোনে মুগ্ধ হয়ে কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আগ্রহভরে তাঁর কথাগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে বলেছিলেন। টেপরেকর্ডার দিয়ে সে চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু স্বাভাবিক কারণেই তিনি বিষয়টি পছন্দ করেননি। বইটি যখন লিখতে শুরু করলাম হঠাৎ মনে হলো, স্যার কি এই বইটি পছন্দ করতেন! হায়! এখন আর এ প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব নয়।
সমকালীন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক তিনি। ফলে তাঁকে নিয়ে ভক্ত-পাঠকের আগ্রহ গগনচুম্বী। কে না জানে কল্পকাহিনী। বেইটিতে সংকলিত প্রতিটি গল্প শোনা, পড়া গল্প। তাঁকে নিয়ে শোনা গল্প বা ঘটনা সযত্নে, সচেতনভাবেই এড়িয়ে গিয়েছি। ফলে বইটি কোন কল্পকাহিনী স্থান পায়নি এটা বলা যায়।বইয়ের শেষে গল্প বা ঘটনাগুলোর উৎসের উল্লেখ রয়েছে। অনুসন্ধিৎসু পাঠক চাইলে সেখান থেকে গল্পের আগে ওপরে ঘটনা পরম্পরা জেনে নিতে পারবেন।হুমায়ূন আহমেদ ছোট ছোট বাক্য লিখতেন। অতুলনীয় তাঁর সেন্স অব হিউমার। চরিত্র তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার কোনো তুলনা হয় না। সেই চরিত্রে জীবনে দিতেও খুব বেশি শব্দ তিনি ব্যয় করতেন না-এ কথাগুলো পাঠকের অজানা নয়। কিন্তু ব্যক্তি হুমায়ূন কেমন ছিলেন? কেমন ছিল তাঁর শৈশব , প্রথম কর্ম জীবন? এই সংকলনের মাধ্যমে পাঠক সামান্য হলেও ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদকে জানার সুযোগ পাবেন। এবং অবাক বিস্ময়ে পাঠক লক্ষ্য করবেন ,তাঁর রচিত সাহিত্যে আবেগ ,অনুভূতি,হাস্যরস, নাটকীয়তা যেমন পরিমিত ছিল তেমনি ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রেও ছিল আশ্চর্য এক নির্মোহ পরিমিতি দৃষ্টিভঙ্গি। কোনো গল্পে তিনি অসম্ভব অভিমানী, আবার কোনো গল্পের তাঁর শিশু মনের পরিচয় পাওয়া যায়। ভোজনরসিক ছিলেন, কিন্তু কম খেতেন। বই পড়তেন গোগড়্রাসে। বলতেন স্বচ্ছন্দে ,দ্বিধাহীন চিত্তে। একা চলতে পারতেন না। অথচ চারপাশে দুর্ভেদ্য এক দেয়াল তুলে তার ভেতর সম্পূর্ণ একা বাসকরতেন এই মানুষটি। আর মানুষকে চমকে দিতে ভালোবাসতেন।
আর? আর সবকিছু বিচার করতেন লজিক দিয়ে।
হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অযুত, লক্ষ পাঠকের অনুসন্ধিৎসা মেটাতে বইটি সামান্য হলেও সহায়ক হবে। তাছাড়া প্রিয় লেখক সম্পর্কে কল্পকাহিনী ভ্রান্তিবিলাস থেকে বেরিয়ে এসে শুদ্ধবিলাতে মেতে ওঠার জন্য এই সংকলনের প্রয়োজন ছিল বলেই আমার মনে হয়েছে।
স্যার, আমার এই লজিক কি আপনার পছন্দ হচ্ছে? তাপস রায়