"ঈশ্বর গুপ্ত থেকে শহীদ কাদরী" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ঈশ্বর গুপ্ত থেকে শহীদ কাদরী বইটিতে আধুনিক বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কবির কবিতার সমীক্ষণ একত্রিত করা হয়েছে। আমরা জানি, আধুনিক বাংলা কবিতা বৈভবে-বৈচিত্রে তার আগের মধ্যযুগ ও প্রাচীন যুগকে বহুগুণে অতিক্রম করে গেছে। সেই অতিক্রমণের চিহ্ন আছে ঊনবিংশ-বিংশ এই দুই শতাব্দীর অগণন গৌণ-অগৌণ কবির রচনায়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ এরকম কয়েকজন প্রধান কবির রচনাতেই একটি সাহিত্যের কাব্যধারা তৈরি হতে পারে না, সৃষ্টিশীলতার আরো বহু উপনদীশাখানদী বেয়েই কবিতা প্রবাহিত হতে থাকে। সাহিত্যের ইতিহাস এই ধারাবাহিকতাকে নির্ণয় করে, কিন্তু সেখানে সুযোগ থাকে না বিস্তারিত কাব্যালোচনার। বর্তমান গ্রন্থে আবদুল মান্নান সৈয়দ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে নানা অর্থে তাৎপর্যময় ও বিশিষ্ট কবিদের নিয়ে স্বতন্ত্র পর্যালোচনায় নেমেছেন। তীব্র আলোপাতে এক-একজন কবির বিশিষ্টতাগুলি রেখায়িত-রূপায়িত হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আনুষঙ্গিক আরো কিছু বিষয়। যুক্তি, বিশ্লেষণ, তুলনামূলকতা, ইতিহাসচেতনা ও ধ্রুপদী বন্ধন-এইসব হচ্ছে আবদুল মান্নান সৈয়দের সমালোচনাত্মক বিশিষ্টতা। ফলত অতি অল্প সময়ের। মধ্যে মান্নান সৈয়দের প্রবন্ধ-সমালোচনার বিষয় ও শৈলির প্রভাব বিস্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের সাহিত্যে। আবদুল মান্নান সৈয়দের এই নতুনতম প্রবন্ধগ্রন্থটিতে যেমন আছে কবিদের সম্পর্কে নতুন বিশ্লেষণ, তেমনি এ বইয়ে খচিত হয়ে থাকল বাংলা কাব্যসমালোচনার একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।
আবদুল মান্নান সৈয়দ (৩ আগস্ট ১৯৪৩ - ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাহিত্য-সম্পাদক। তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের "পোয়েট ইন রেসিডেন্স" ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর ষাট দশক থেকে বাংলা সমালোচনা-সাহিত্যে তার গবেষণাধর্মী অবদান ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের উপর তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম রয়েছে। তিনি ফররুখ আহমদ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, সমর সেন, বেগম রোকেয়া, আবদুল গনি হাজারী, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, প্রবোধচন্দ্র সেন প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক-সম্পাদককে নিয়ে গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশের সাহিত্যমহলে তিনি 'মান্নান সৈয়দ' নামেই পরিচিত ছিলেন।