ভূমিকা বাংলাদেশ নামক দেশের আমি একজন সাধারন মানুষ। এই দেশের সাধারন মানুষ ক্রিকেট দলের হারে ব্যথিত হয়- আমিও হই। সময়মত অফিসে পৌছানোর একটা তাড়া আমারও আছে। এই দেশের ব্যস্ততম নগরীতে আমার বাস। যেখানে রাস্তাঘাটে রিকশা, গাড়ি অনেকক্ষন আটকে থাকে। সেই আটকে থাকার মাঝেই চিন্তা ভাবনা মাঝে মাঝে অন্যদিকে নিয়ে যাই। বিক্ষিপ্ত সেইসব চিন্তাগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে দেই। আমার বই লেখার কাহিনি সম্ভবত সেখানেই শুরু।
একদিন বাসায় কারেন্ট নেই, ল্যাপটপে চার্জ নেই, বিশ্বকবির ছোট গল্প নিয়ে বসেছি, শুরুতেই হৈমন্তি। এই চমৎকার গল্পটি অনেকবার পড়েছি কিন্তু সেদিন জানি কি হল, কোন এক ডায়েরীতে এটার প্যারোডী লিখে ফেললাম। ব্যাপারটা এমন না যে বিশ্ব্কবির প্রতি কোনো অশ্রদ্ধা আছে, ব্যাপারটা নিছক মজা করার জন্য। তারপর একদিন ফেসবুক নোটে সেটা শেয়ার করলাম। যে জিনিসটার সাথে পরিচয় হলো সেটা অবিশ্বাস্য। মানুষ গোগ্রাসে এটা গিলছে, আর কমেন্ট দিয়ে যাচ্ছে। সামহোয়ার-ইন-ব্লগ সাইটে একটা একাউন্ট ছিল কখনো কিছু লিখতাম না। কোনরকমে অভ্রতে বাংলা টাইপ ধরেই সেটা ব্লগে দিলাম।
সামহোয়ারের 'জিকসেস' একাউন্ট থেকে দেওয়া সেই গল্পই আমাকে নতুন জগতে প্রবেশ করালো। আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা লিখি, অনেকেই দেখি মজা পায়। আমি গল্প লিখি অনেকেই দেখি বলে খারাপ না। তারপরেও লেখালেখি ব্লগেই সীমাবদ্ধ। কখনো ভাবিনি বই বের করার মত ধৃষ্টতা দেখাবো। আমি আগেও বলেছি একজন সাধারন বাংলাদেশি মানুষের মত আমি ব্যস্ততম নগরীর ব্যস্ত মানুষ। যে বিসিএস ভাইভা দেওয়ার পর ক্যাডার না পেয়ে পরবর্তী বিসিএস এর কথা ভাবে, যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মত জায়গায় ভাইভাতে কি আসবে এসব নিয়ে চিন্তা করে, যে ব্যাংকের ডেবিট-ক্রেডিট দিন শেষে ঠিক আছে কিনা এই কথা চিন্তা করে, একদিন তার কাছে কেউ এসে বলে, আপনার কয়েকটা গল্প দিন, একটা সংকলনে যাবে। প্রকাশক, সম্পাদক কাউকে তেমন চিনিনা, এর আগে পেপার টেপারে ২-৪ টা লেখা ছাপা হলেও গুরুত্ব দেওয়ার মত কিছুনা, তার জন্য এটা খারাপ না, দিয়ে দিলাম ৩-৪ টা গল্প। বন্ধু মারুফ রেহমানের হাত দিয়ে গল্পগুলো যার কাছে গেল তার নাম সার্জিল। কয়েকদিন পর আরও ব্যস্ত হয়ে গেলাম, এমবিএ এর শেষ সেমিস্টারে আছি থিসিসের কাজ করছি এমন সময় সার্জিল এসে বলে, ভাই একটা দুঃসংবাদ আছে। এসবের সাথে আমি পরিচিত, আমার ভাগ্য বেশিরভাগ সময়েই সুপ্রসন্ন থাকেনা। আমি বললাম, গল্প ছাপানো যাবেনা তাই তো?
সার্জিল বলে, না ভাই অবস্থা তার থেকেও খারাপ, আমার প্রকাশক আপনার নিজেরই একটা বই বের করতে চায়।
আমি বললাম, ও আচ্ছা। তার কয়েকদিন পর সার্জিল ফোন করে কাউকে ধরিয়ে দিল, তিনি ধমকের সুরে বললেন, ভাই আপিনার লিখা কই? তখনও আমি নিশ্চিত না যে আমার বই বের হচ্ছে না পুরা ব্যাপারটা একটা ঘোর। সেই প্রকাশকের নাম সাজিদ ভাই। 'সাজিদ' নামটা আমার জন্য সব সময় বিশেষ স্থান দখন করে। আমার এক দুলাভাইয়ের নাম এই নামে। আমি আমার জীবনে এনার মত ভাল মানুষ আর দেখিনাই। আমার দুলাভাইকে দেখার পর 'সাজিদ' নামের সবাইকে আমার ভাল লাগে।
বইয়ের প্রচ্ছদ কি আঁকা হবে? কিভাবে আঁকা হবে? কাকে দিয়ে আঁকানো হবে সেটা বোঝার আগেই বাংলাদেশের কার্টুন জগতের প্রবাদ পুরুষ আহসান হাবীব স্যার আমার প্রচ্ছদ এঁকে দিলেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা ব্যাপার। তাঁকে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে ধৃষ্টতা প্রকাশ করতে চাই না। তিনি এর থেকেও অনেক বড় সম্মানের প্রাপ্য।
প্রকাশক সাজিদ ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। উনাকে চেনানোর জন্য সার্জিল খানকে ধন্যবাদ। সার্জিল খানকে চেনানোর জন্য মারুফ রেহমানকে ধন্যবাদ।
মারুফ রেহমানকে চেনানোর জন্য মহিতুল আলম পাভেলকে ধন্যবাদ। পাভেল ভাইকে চেনানোর জন্য যে কাকে ধন্যবাদ দিতে হবে সেটা ভুলে গেছি। দেখা যাচ্ছে জীবন হলো রসায়নের জৈব যৌগের কার্বন বন্ধনের মত। 'বেকায়দা' নামকরনের তেমন কোন ইতিহাস নাই। নামটা কোনভাবে আমার মাথায় চলে এসেছে আর কি। এই বইয়ের গল্পগুলো কিছু আমার জীবনে ঘটেছে যেগুলো মজা করে উপস্থাপন করা, কিছু কল্পনাপ্রসুত গল্প। 'শয়তান' নামক লেখাটি একজনের কাছে শোনা একটা জোকের ভিত্তিতে লেখা। তবে সেটার উপস্থাপনাটা এরকম ছিলনা, আমি আমার মত করে সাজিয়ে নিয়েছি।
এই বইয়ের গল্পগুলো যদি আপনাদের ভাল লাগে তাহলে অনেক অনেক ধন্যবাদ। যদি ভাল না লাগে তাহলে আমি সত্যিই দুঃখিত। ভবিষ্যতে চেষ্টা করব মন জয় করা যায় কিনা। চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, চেষ্টার নাম জীবন। এই বইয়ের কোনকিছু কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে আমি আরও দুঃখিত এবং ক্ষমা চাই। এই বইয়ের সব লেখাই হালকা লেখা, কোন কিছুকেই এত গুরুত্ব দেওয়ার মত কিছুনা। ভাল থাকবেন।
লেখক পরিচিতি আজকালকার কর্পোরেট যুগে মানুষ নাকি হাসতে ভুলে গিয়েছে। মানুষকে হাসানোর কাজটা মোটেই সহজ কাজ না। গতানুগতিক ধারার হাসি’র মাঝে হয়ত বা ক্ষনিকের বিনোদন পাওয়া যায়, তবে সূক্ষ-রসবোধ জিনিসটার অভাবে এসব লেখা পড়ে এর স্থায়িত্ব বেশিক্ষন থাকতে পারেনা। হাসির অনুভূতি এমনই, যার স্বাদ একবার পেলে বারবার পেতে ইচ্ছা করে। তবে কিছু কিছু মানুষ আছেন, যারা মানুষের এমন অনুভূতিগুলোকে নিয়ে খুব সুন্দর করে খেলতে পারেন। সময়, অবস্থান, চরিত্রের সুন্দর মিল ঘটিয়ে মানুষকে সহজ সরলভাবে এমন কিছু বলে ফেলেন, যা শুনলে যে কেউই হেসে উঠে। এমনই একজন হলেন রাসয়াত রহমান জিকো।
বাবা-মায়ের ছোট সন্তান হিসেবে তিনি গত শতাব্দীর কোন এক শীতের মাঝে জন্ম নেন ঢাকা শহরে। লেখাপড়া তার কোন সময় ভাল না লাগলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এখন বযাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে আছেন। ব্যস্ততায় ঘেরা ঢাকা শহর ব্যস্ত সময় পার করার মধ্য দিয়ে অনলাইন জগতে ইতিমধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছেন মানুষকে বিনোদিত করার অসাধারন দক্ষতা নিয়ে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের লিটল ম্যাগাজিনে ছাপা হচ্ছে তার লেখা ছোট গল্প, ইংরেজী পত্রিকাতেও আবার গম্ভীর কলামের দেখাও মিলে।। ব্যক্তিজীবনে তিনি আড্ডাবাজ হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তবে আড্ডার মাঝে থেকেও মাঝে মাঝে নিজের কোন এক ভুবনে হারিয়ে যান।
তার কিছু প্রকাশিত-অপ্রকাশিত মজার লেখাকে তিনি একত্রিত করলেন। উপহার দিলেন পাঠককে এক বুক ( A Book) বিনোদন।
রাসয়াত রহমান হচ্ছে ভাল নাম, ডাক নাম জিকো। জন্মস্থানর ঢাকা শহরে বেইলিরোডে। প্রথম স্কুল-বেইলি প্রিপারেটরী স্কুল । ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল । কলেজ ছিল ঢাকা কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিনান্স থেকে এমবিএ (ইভিনিং) করেছেন। ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরী শুরু করেছেন ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। মা-বাবা দুজনেই গত হয়েছেন। স্ত্রী মাকসুদা আজীজ ও একমাত্র সন্তান অর্হ অপরাজিতা রাসয়াতকে নিয়েই তার পরিবার । মানুষ হিসেবে তিনি কখনো খুব গম্ভীর কখনো খুবই মজার