ফ্ল্যাপে লিখা কথা মানবজাতির সৃজনশীল উত্থানের সপক্ষে যে ভূখণ্ড প্রথম সহায়ক হয়ে উঠেছিল সেই ভূখণ্ডের নাম ইরাক। একাধিক সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল এখানে হাজার হাজার বছর আগে। দজলা, ফোরাত, শাত-ইল-আরব-এই ত্রিনদীর নিবিড় শুশ্রুষায় উন্নত আবাদের প্রক্রিয়া প্রথম আয়ত্তে এনেছিল এখানকার মানুষ; গুড়ে তুলেছিল বিশ্বের প্রথম সুসংহত জনপদ, বিন্যস্ত বাগিচা-শূন্যেদ্যান তথা সমুন্নত কৃষ্টি- সংস্কৃতি। ইরাক বিশ্বকে প্রথম দিয়েছে সাম্রাজ্য ও সংবিধান, বিধিবদ্ধ কানুন, উপাসনার বোধ ও বিধান, মৃত্তিকায় উৎকীর্ণ অক্ষর, গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার। ইরাকি মানুষ প্রথম রচনা করেছে কাব্যগাথা, বানিয়েছে উন্নত লাঙল, মজবুত বর্ম ও ধারাল তরবারি। যে কোনো বিবেচনায় ইরাক সভ্যতার আদি লীলপীঠ।
প্রাচীনকাল থেকে বিস্তর উত্থান-পতন, জয়-পরাজয়, নির্মাণ-নিপাতের সাক্ষ্য ইরাকের ভূগর্তে সঞ্চিত রয়েছে বিপুল তেল সম্ভার ও মূল্যবান খনিজ। এর সবই যুগে যুগে আকর্ষণ করেছে অন্য জনপদের শাসক-শোষকদের, ইরাক নাজেহাল হয়েছে সেই সব বহিঃশত্রুর হাতে কিন্তু কারও বেয়াদবি সহ্য করেনি, শির দিয়েছে শিরস্থাণ নয়।
সেই বীরপ্রসবিনী শহীদের দেশ আজ ধ্বস্ত-অপদস্থ। বিশেষত তেলসম্পদের মোহে সেখানে হামলে পড়েছে সশস্ত্র সাম্রাজ্যবাদী শত্রু। ব্যাপক রক্তপাতসহ চালিয়েছে নির্বিচার লুণ্ঠন, উৎসন্ন করেছে জনপদ। যাদুঘরে হানা দিয়ে চুরি করে নিয়ে গেছে সভ্যতার বস্তুগত ইতিহাস এবং ভষ্মীভূত করেছে মানুষের সমন্বিত অর্জনের দুর্লভ ফসল পুস্তকভাণ্ডার। ২০০৩ সালে যুদ্ধংদেহী সম্রাজ্যবাদীদের নৃশংস আক্রমণে ফের তছনছ হয়েছে এদেশ, পুণ্যভূমি বাগদাদ। ওরা ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকেও ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়েছে। ইরাক আজ আক্ষরিক অর্থেই আহত শার্দুল, রক্তাক্ত প্রত্নভূমি।
গ্রন্থভূক্ত এ রচনাটি ২০০৩ সালে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর ইরাক আক্রমণের পরদনি থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত ঞয় দৈনিক জনকণ্ঠ-এ।
লেখক মাহমুদ শামসুল হক পেশায় সাংবাদিক। এ পর্যন্ত একাধিক সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও প্রথম শ্রেণীর দৈনিক পত্রিকায় যথাক্রমে নির্বাহী সম্পাদক, ইনচার্জ এবং সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি লিখছেন কলাম, ধারাবাহিক, প্রবন্ধ, কবিতা, রম্য, উপন্যাস ও সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিবৃত্ত। বরাবরই তিনি প্রথার বিপরীতে লেখেন, বেছে নেন তুলনামূলকভাবে কম লেখা হয়েছে এমন বিষয়। এ ব্যাপারে তিনি স্বাতন্ত্র রক্ষায় যত্নবান, প্রকাশভঙ্গিতেও। জন্ম ২০ মার্চ, ১৯৫২ সন, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে। বাবা মাে. হাতেম আলী সরকার, মা জরিনা বেগম। লেখক এসএসসি ও বি.এ পাস করেন যথাক্রমে ১৯৬৬ ও '৭০ সালে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে একাধিক বিষয়ে পড়াশােনা করে গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতায় এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৮২ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ‘তিনটি ভয়ংকর উপদ্রব ছাড়াও লেখকের অন্যান্য উল্লেখযােগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- 'যুদ্ধাপরাধের বিচার’, ‘শাহবাগ আন্দোলন ও অন্যান্য লড়াই', 'নদী’ (নদ-নদী বিষয়ক)’, ‘প্রাসাদ ষড়যন্ত্র : ক্ষমতা দখলের ইতিহাস’, ‘নারীকোষ’, নারী-নক্ষত্র’, ‘বিশ্বাসের বিবর্তন’, ‘তন রাধা মন কানু'(পদাবলী অবলম্বনে উপন্যাস), ইরাক: রক্তাক্ত প্রত্নভূমি’, ‘সেই রাধা সেই কৃষ্ণ’, ‘দ্রোহ প্রেম আনন্দ বিষাদ', 'মানুষের শক্ৰমিত্র, রসগােল্লা' (রম্য), ‘ফিরে যাই নিজের ধুলায়, (কাব্যগ্রন্থ)। লেখকের ‘দেহকাব্য : বাংলা কবিতায় অঙ্গসুষমা’ গ্রন্থটি লাভ করেছে সেরা মানের গ্রন্থ-২০১৬ বাংলা একাডেমি পুরস্কার।