ফ্ল্যাপে লিখা কথা যা লিখি তা বুঝে লিখি, তাই লেখায় যা চাই তাও জেনেশুনেই। নিজেকে পরিচয় দিই লেখক বলে, এর বাইরে কোনো পরিচয়েই শান্তি পাইনে। কিন্তু লিখি তা শেষ করে সংবাদপত্রে প্রায় প্রতি সপ্তাহে যা সব লিখি তা আসলে এক ধরনের রোজনামচার মতো। নিজের সঙ্গেই নিজের আলাপ, কারণ আজকাল রাষ্ট্র, রাজনীতি, সমাজ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার সুযোগ খুব কম। প্রায় কেউই তেমন আগ্রহ বোধ করেন না এরকম আলোচনায়। কারণ, রাত দুপুরে টকশো দেখে দেখে মানুষ বোধ করি রাজনীতির সব খবরই পেয়ে যান, তাই কলাম লেখকদের জন্য সময় বরাদ্দ থাকে খুব কমই। তারপরও লিখি, পাঠকও পড়েন, শান্তনা এটুকুই।
তবে লিখে কোনো কাজ হয় কিংবা টকশোতে কথা বলে? এরকম প্রশ্ন আমি অনেককেই কলে দেখেছি, যারা সাধারণতঃ রাজনৈতিক কলাম লেখেন কিংবা টকশো’তে নিয়মিত হাজিরা দেন। প্রত্যেকেই হেসে ফেলেছেন আমার প্রশ্ন শুনে। উত্তরটা তাই অজ্ঞাতই থেকে গেছে। আমাকে যদি একই প্রশ্ন করা হয় তাহলে বলি, দেখুন, লেখা দিয়ে সমাজ যদি বদল করা যেতো তাহলে এতোদিন সমাজ বদলে যুধিষ্টির হয়ে যেতো। কিন্তু মানুষের ভেতর সুপ্ত থাকে যেসব চাওয়া, অপ্রাপ্তি, তাই-ই যখন আমাদের লেকায় উঠে আসে তখন মানুষ কুব আশাবাদী হয়ে ওঠে। এই আশাবাদ জাগ্রত রাখাটাই জরুরি, সেদিক দিয়ে লেখার গুরুত্ব এখনও নিশ্চয়ই আছে। পরবর্তীকালে কী হবে তা ভাবিনে খুব একটা।
আলোচ্য বইয়ে যেসব রচনা স্থান পেয়েছে তার বেশিরভাগিই ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকৈ ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কাল ধরে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত। তবে এই সময়ে প্রকাশিত লেখার সংখ্যা অনেক, সেগুলোর সবই বই আকারে বেরুনোর যোগ্যতা রাখে বলে আমি মনে করি না, কাগজের অপচয় ছাড়া। তাই সেসব রচনা থেকে একেবারে নিজের পছন্দ করা লেখাগুলো এই বইয়ে সংযুক্তি পেলো। আমার মতো পাঠকেরও যদি এই লেখাগুলো ভালো লাগে এবং এই ভালো লাগা থেকে একটু হলেও আশাবাদ সৃষ্টি করা যায় মানুষের মনে, লেখক হিসেবে সেটাই হবে আমার প্রাপ্তি। আশা করি, আমার প্রাপ্তির ঘরে শূন্য দেবেন না পাঠককূল।