ফ্ল্যাপে লিখা কথা খ্রিস্টের জন্মের ৮৫০ বৎসর পূর্বে রচিত হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসি দুটি স্বতন্ত্র মহাকাব্য হলেও একই মূল কাহিনীর দ্বারা এই দুটি মহাকাব্য বিধৃত এবং সে কাহিনী হলো ট্রয়যুদ্ধ ও তার আনুপূর্বিক ঘটনাবলী। ট্রয়যুদ্ধের কোন ঐতিহাসিক সভ্যতা পাওয়া না গেলেও এসিয়া মাইনরের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল, কিয়স ও স্মার্ণার উত্তর দিকে এক বিস্তীর্ণ অিঞ্চলে একবার এমনই এক সর্বাত্মক যুদ্ধ বাধে যাতে ভূমধ্য সাগরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সমস্ত রাজন্যবর্গ যোগদান করেন। হোমেরের জীবিতকালে সংঘটিত অথবা লোকপরম্পরায় শ্রুত সেই সর্বাত্মক যুদ্ধের কাহিনী বীণাযন্ত্রযোগে গীত হলে গ্রীসদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে সমদৃত ও আস্বাদিত হবে- এই ধারণার বশবর্তী হয়েই ইলিয়াড ও ওডিসি রচনা করেন হোমার।
হোমারের জীবনবোধের মত তাঁর সৌন্দর্যবোধও এক মহাজাগতিক চেনার বলিষ্ঠ ও বহুব্যাপক ভিত্তিভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত। স্বর্গ, মর্ত্য, পাতালকে পরিব্যাপ্ত করে এক সহজ স্বচ্ছন্দ পদচারণায় বিস্তৃত ছিল তাঁর কল্পনাশক্তি। দেবকুল অধ্যুষিত স্বর্ণশিখরবর্তিনী অলিম্পাস পর্বত ও বহুপ্রস্রবণসমন্বিত সতত-শীতল অবণ্যসমাচ্ছন্ন আইডা পর্বতের এক ছবি আঁকার পর মুহূর্তের হোমার ছুটে গেছেন অসংখ্য অশ্বক্ষুরোৎকি।ষপ্ত ধূলিরাশির দ্বারা সৃষ্ট সঘন মেঘমালায় আবৃত ট্রয়ের রণপ্রান্তরে। আবার হয়ত বা তারপর অন্ধকার মৃত্যুপুরীর এক দৃশ্য বর্ণনা করেছেন যেখানে রক্তগর্ভ এক পরিখার চারপাশে রক্তের লোভে ভিড় করেছে প্রেতাত্মারা। মত্ত প্রবঞ্চনের দর্পভরে বিক্ষুব্ধ সমুদ্রের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের শান্ত রূপটিকে সমান দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন হোমার। যে সব দৃশ্যের বর্ণনা বড় চমৎকার। কিন্তু বর্ণনার মধ্যে কোথাও কোন আতিশয্য নেই। আবেগানুভূতির যে কঠোর মিতব্যয়িতা ও সংযম ক্লাসিকাল শিল্পরীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য সে মিতব্যয়িতার সীমা কখনো অতিক্রম করেননি হোমার, সে সংযমের মাত্রা কখনো হারাননি তিনি। হোমারের- ইলিয়াড ও ওডিসির মহাকাব্যের অনুপম অনুবাদ করেছেন একারের বরণ্যে গবেষক ও অনুবাদক জুলফিকার নিউটন। বলিষ্ঠ, সমৃদ্ধ ও সৃজন সম্ভাবনাময় গদ্যে- অনুদিত ‘হোমারের- ইলিয়াড ও ওডিসির’ বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের স্থায়ী সম্পদ রূপে বিবেচিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার বারেরা গ্রামের বনেদী কাজি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্কুল, কলেজ এবং বিশ^বিদ্যালয়ে কৃতিমান ছাত্র ছিলেন এবং প্রথম শ্রেণীর সাথে অনার্সসহ এম.এ. ডিগ্রি এবং পরবর্তীতে বিশ^ভারতী বিশ^বিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শনের ওপর উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসুর) সাবেক সাহিত্য সম্পাদক, সিনেট সদস্য, নন্দন পত্রিকার সম্পাদক এবং পরবর্তীতে দেশ বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, আমন্ত্রিত বক্তা, গবেষণা ও বিশেষজ্ঞতার ভূমিকায় সংযুক্ত ছিলেন। গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ এবং প্রবন্ধ-গবেষণা, সাহিত্যতত্ত্ব, দর্শন, সংগীত, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমকালীন ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিক্ষেত্রেই জুলফিকার নিউটনের সংবিৎ সক্রিয় ও সুপ্রকাশ। তাঁর গল্প-উপন্যাস যেমন প্রীতিপদ, অনুবাদ সাহিত্য যেমন সুখপ্রদ, প্রবন্ধ ও গবেষণা তেমনই কোন না কোন দিক থেকে চমকপ্রদ। সব সময়ই তাঁর আলোচনায় থাকে চিন্তাকে উসকে দেবার মত অজস্র উপাদান, নতুনতর দৃষ্টি কোন বিচারে উদ্বুদ্ধ করার মত ক্ষুরধার বিশ্লেষণ। জাতীয় ও আন্তজার্তিক ভিত্তিতে সাহিত্যে মৌলিক গবেষণা অনুবাদ ও জীবনবাদী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের জন্য আনন্দমেলা, বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ, রংধনু স্বর্ণপদক, রূপসী-বাংলা স্বর্ণপদক, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, গান্ধী গবেষণা পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু একাডেমী, রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল একাডেমী, সুভাষচন্দ্র পদক এবং কবীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।