ফ্ল্যাপে লিখা কথা আশা নাজনীনের শাশুড়িপুরাণ এক অভিনব সৃষ্টি। একটা উপন্যাস যে এইভাবে লেকা হতে পারে, এই ভাবনাটাই তো মাথায় আনা মুশকিল। আশা নাজনীন প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছেন, বিষয়টার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটা উপস্থাপনভঙ্গি বেছে নিয়ে। তারপর আসে ভাষার কথা। আশা নাজন ীনের ভাষা খুব স্বাদু, মিষ্টি, অন্তরঙ্গ কিন্তু জোলো নয়। বিষয়টি নিলেন তিনি দারুণ, ভঙ্গিটি নিলেন অসাধারণ, তাকে গড়ে তুললেন লাগসই ভাষা দিয়ে। এরপর কী থাকে? এরপর থাকে চরিত্র, সংলাপ এবং গল্পের হয়ে ওঠা। আমরা এতদিন শাশুড়িকে দেখেছি খলনায়ক হিসেবে, আবার মাকে দেখেছি দেবি রূপে, কিন্তু মা-ই যে শাশুড়ি, যিনিই দেবতা, তিনিই অসুর, এই সাধঅরণ কথাটা আমরা কেন এতদিন ভুলে ছিলাম? আশা নাজনীন দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুললেন এই কাহিনী, যেখানে আমরা মুদ্রার দুটো পিঠই দেখব। যেখানে আমাদের এই মানবসংসারের জটিলতা-সরলতা, বিষণ্নতা-প্রশন্নতা, আলো-আঁধার- একই সঙ্গে খেলা করে। আশা নাজনীনের এই উপন্যাস ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলবে, এই পাঠকপ্রিয় হবে, সেটা যেমন চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়, তেমনি এই উপন্যাস সাহিত্যের নিরিখেও সমালোচকের প্রশংসাধন্য হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যায়। অভিষেকেই শতরান করা আশা নাজনীনকে অভিনন্দন।
আনিসুল হক কথাসাহিত্যিক
বাতাসের কানে আমি গোপন কিছু বলেছি, আকাশের বুকে ভেসে ভেসে আমি ওই সাদা মেঘেদের সঙ্গে লুটোপুটি খেয়েছি। আমি মেঘনার তীরে বাবার হাত ধরে ঘুরেছি, সন্ধ্যারাতে নানির কোলে শুয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে ওই গোলাকার চাঁদটাকে আমার ঘুমে ডেকেছি। আমি মা’র মুখে হাসি ফোটাতে রসিক টিভি’র বদলে বেরসিক টিউটরদের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আমার শৈশব আর কৈশোর পার করেছি। আমি পলে-অপলে কারো জন্যে অপেক্ষার প্রহর গুরেছি, খুব নিশীখে কী-জানি-কী না পাওয়ার বেদনায় নিঃশব্দে বহু কেঁদেছি। যৌবনে আমি একজোড়া শুভ হাতে নিজেকে সমর্পণ করেছি। আমি কখনো সৈয়দ শামসুল হক, কখনো মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কখনো আনিসুল হক হতে চেয়েছি। আমি জীবনানন্দ আর রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহও হতে চেয়েছি। নির্ভার জীবনের হিসেব কষে নয়, খেয়ালে বেখেয়ালে আমি হয়তো বেশি ঠাণ্ডা বেশি গরম জল-বাতাসের ‘বিশেষ অজ্ঞ’ বনে গেছি। অরূপ রাহী’র মতো ‘ভাল্লাগে না মরার দেশে’ ভেবে আমি দেশান্তরি হয়েছি। কামরুজ্জামান কামুর মতো ‘ভাল্লাগে তাই তোমার কথা ভাবতেছি’- এই অনুভবে আমি আবার ফিরে এসেছি আমার লেখায়, আমার প্রথম ঠিকানায়।