“দূরগামী কথার ভেতর" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ কথার ভেতর দিয়ে সৃজনশীল মানুষকে জানার কৌতূহল আমার দীর্ঘদিনের। যার আনুষ্ঠানিক নাম সাক্ষাৎকার । এমন সাক্ষাৎকার যেখানে কথা হবে নানা মাত্রায়, বিস্তারে। কথা হবে উপরিতল ছাড়িয়ে গভীরে, কথা হবে দূরগামী। তেমন কিছু সাক্ষাৎকার একসময় নিয়েছিলাম আমার পছন্দের কিছু সৃজনশীল মানুষের। সেই সঙ্গে অনুবাদ করেছিলাম শিল্প-সাহিত্য, রাজনীতির আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান নানা ব্যক্তিত্বের আলােচিত সাক্ষাৎকার। সেগুলাে গ্রন্থিত হয়েছে আমার কথা পরম্পরা' বইয়ে। এরপর আমি নিজে সক্রিয় হয়ে উঠেছি সৃজনশীল সাহিত্য চর্চায়। দু'দশকের উপর ধরে সাহিত্যচর্চা করছি। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গবেষণা মিলিয়ে কথাসাহিত্যের নানা শাখায় বই প্রকাশ করেছি। কেউ আগ্রহী হয়েছেন আমার লেখালেখি, ভাবনা ইত্যাদি বিষয়ে আলাপচারিতায়। এবার আমি সাক্ষাৎকারগ্রহীতা নই উপস্থিত হয়েছি সাক্ষাৎকারদাতা হিসেবে। সেইসব সাক্ষাৎকারে কথার ভেতর দিয়ে যেমন নিজেকে জানাবার সুযােগ পেয়েছি তেমনি কথা বলতে বলতে নিজেও নতুন করে জেনেছি নিজেকে। এই বইয়ে সংকলিত হয়েছে। সাহিত্যামােদী তেমন কয়জনের সঙ্গে আমার কথপােকথন। যেখানে সাহিত্য, রাজনীতি, জীবন নিয়ে কথা হয়েছে নানা মাত্রায়, বিস্তারে। যেখানে কথা হয়েছে দূরগামী।
সমসাময়িক বাংলা কথাসাহিত্যে মননশীল সাহিত্যিক হিসেবে শাহাদুজ্জামানের অবস্থান অনন্য ও অগ্রণী। গল্প, উপন্যাসেই বেশি পরিচিত হলেও শাহাদুজ্জামানের উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে প্রবন্ধ, অনুবাদ, ভ্রমণ এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও। লেখকের মতে, তিনি আল বেরুনীর মতো দীর্ঘ নয়, বরং বিস্তৃত জীবনের আকাঙ্ক্ষা করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন কথাশিল্পী শাহাদুজ্জামান। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করেন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্পে। উচ্চতর শিক্ষার জন্য পরবর্তীতে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে শাহাদুজ্জামান দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ বিভাগে। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণা কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন। পারিবারিকভাবে সাহিত্যের যে ঘোর শৈশবেই আচ্ছন্ন করেছিলো তা-ই শাহাদুজ্জামানের সাহিত্যিক হয়ে ওঠার পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৯৬ সালে মাওলা ব্রাদার্স আয়োজিত কথাসাহিত্যের পান্ডুলিপি প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম ও ছোটগল্পগ্রন্থ ‘কয়েকটি বিহ্বল পাখি’। শাহাদুজ্জামান এর বই সমূহ ঠিক প্রচলিত উপন্যাসের গৎবাঁধা আঙ্গিকে ধরা যায় না। অনেক সাহিত্যবোদ্ধা তাই তাঁর লেখাকে ফিকশন-নন ফিকশন, পদ্য-কথাসাহিত্য, সবকিছুর মিশেলে ‘ডকু ফিকশান’, আবার অনেকে ‘মেটাফিকশান’ বলে রায় দিয়ে থাকেন। শাহাদুজ্জামান এর বই সমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্রাচের কর্নেল, আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে, একটি হাসপাতাল একজন নৃবিজ্ঞানী কয়েকটি ভাঙ্গা হাড়, ক্যাঙ্গারু দেখার শ্রেষ্ঠ দিন এবং অন্যান্য অনুবাদ গল্প, কয়েকটি বিহ্বল গল্প, মামলার সাক্ষী ময়নাপাখি, কাগজের নৌকায় আগুনের নদী, এবং কবি জীবনানন্দ দাশের উপরে লেখা উপন্যাস ‘একজন কমলালেবু’। কমলা রকেটসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন শাহাদুজ্জামান। ২০১৬ সালে বাংলা কথাসাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।