‘যুদ্ধ ও প্রেম ১৯৭১’ উপন্যাসের আদলে লেখা এক মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকিস্তানী বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিতা এক তরুণীর দেশপ্রেম, বুকভরা ভালোবাসা, আশা এবং আশাভঙ্গের বেদনার উপাখ্যান। অনেক রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা এসেছে। এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছে মুক্ত স্বদেশ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে অনেক ঘরের আলো, অনেক জীবনের সুখ, অগণিত প্রাণের সুর ও ছন্দ। এই উপাখ্যানের নায়ক কবীর তার নিরুদ্দিষ্টা প্রেমিকাকে ফিরে পাবার পর সুখের নীড় রচনার স্বপ্ন দেখলেও অনীহা প্রকাশ করে নায়িকা রীনা। ব্যথিত কবীর তাকে প্রশ্ন করে : এতকাল ধরে তিল তিল মাধুর্য দিয়ে তোমাকে ঘিরে যে স্বপ্নের জগত আমি তৈরি করেছি, কোন অধিকারে তুমি আজ তা ভেঙ্গে দিতে চাও? প্রেম কি শুধুই পুতুল খেলা? রীনার জবাব : না। কিন্তু প্রেমটা কি তোমার একার? তুমি ভালোবেসেছো, আমি বাসিনি? তুমি স্বপ্ন দেখেছো, আমি দেখিনি? সম্পদ চাইনি, ঐশ্বর্য চাইনি, রাজরানীও হতে চাইনি। চেয়েছিলাম ভালোবাসতে, ভালোবাসা পেতে। চেয়েছিলাম স্বামী-সন্তানের স্নেহ মমতায় ঘেরা একটি ছোট্ট সুখের নীড়। তুমি আছো, আমি আছি। তবু সে স্বপ্ন আমার ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেলো কেন? এই প্রশ্নকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে ‘যুদ্ধ ও প্রেম ১৯৭১’ এর কাহিনী।
আমির হোসেন একজন সাংবাদিক। বর্তমানে তিনি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ডেইলি সান-এর সম্পাদক। এর আগে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ টুডের নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক বাংলার বাণীর সহকারী সম্পাদক এবং সাপ্তাহিক এই সময়-এর সম্পাদক। ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তাঁর আগে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন বার্তা সংস্থা পিপিআই-এর স্টাফ রিপোর্টার। আর মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ‘সংবাদ পর্যালোচনা’র স্ক্রিপ্ট লিখেছেন এবং সাপ্তাহিক বাংলার বাণীর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাঙালি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সেই ক্রান্তিকালের এই ছয় বছর সময়ে তিনি ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ইত্যাদি কভার করেন। ইত্তেফাকে তাঁর দায়িত্ব ছিল রাজনৈতিক সংবাদ, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করা। সেই সুবাদে মাত্র ছয় বছরের মধ্যে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তরণ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর তিনি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন। তাঁর লেখা প্রথম বই মুজিব হত্যার অন্তরালে প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। কিন্তু তৎকালীন প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বইটির লেখক হিসেবে তিনি নিজের নামের পরিবর্তে ‘ইশতিয়াক হাসান’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতে বাধ্য হন। তাঁর অন্য দুটি গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন। কথাসাহিত্যেও তার পদচারণা দেখতে পাবেন পাঠক সূর্যতোরণ এবং যুদ্ধ ও প্রেম ১৯৭১ উপন্যাসের মাধ্যেমে।