ফ্ল্যাপে লিখা কথা ফকির লালন শাহ বাংলার ভাবান্দোলনের প্রাণপুরুষ, লোকদর্শনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। লালন সাঁইজ বিশ্বে বাঙালির দর্শন দারিদ্র ঘুচিয়েছেন। লালন সাঁইজিকে নিয়ে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছে এবং দিনদিন লালনচর্চা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কিন্তু লালন সাঁইজির দর্শনকে সঠিকভাবে উপস্থাপন এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে হয়ে উঠেনি। লালনচর্চার সবচেয়ে দুর্বল যে দিক, তা হলো লালন সাঁইজি যা হতে চাননি আমরা জোর করে তাঁকে তাই বানাতে চেয়েছি। ফলাফল লালন দর্শন এখনো রয়ে গেছে রহস্য ঘেরা, আমাদের জানার বাইরে। বাউল দর্শন তথা লালন সাঁইজির দর্শন আজ সারা বিশ্ব মাতাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ লালন দর্শনের প্রতি ক্রমেই কৌতুহলী হয়ে উঠছে এবং লালন দর্শনকে বুঝবার জন্য বাংলাদেশমুখী হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়- বিদেশীরা যখন লালন দর্শনকে বুঝবার জন্য বাংলাদেশে আসছে, তখন আমরা বাঙালি হিসেবে লালন দর্শনকে কতটা বুঝেছি, বুঝবার চেষ্টা করছি?
লালন দর্শন ইতোমধ্যে জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বস্বীকৃতি লাভ করেছে। জাতিসংঘের ইউনেস্কো ২০০৫ সালে বাউল দর্শন দর্শন তথা লাল দর্শনকে ‘A Masterpiece of the Oral and Intangible Heritage of Humanity' হিসাবে আমাদের কর্তব্য আমাদের জাতীয় দর্শন বাউল দর্শন তথা লালন দর্শনকে যথাযথভাবে চর্চার মাধ্যমে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা যতোটা যত্ন সহকারে বিদেশী দর্শন পাঠ করি, ততোটা যত্ন নিয়ে আমাদের আপন দর্শন বাউল দর্শন তথা লালন দর্শনকে আত্বস্থ করবার চেষ্টা কি আমাদের রয়েছে? এ প্রশ্ন এখন সার্বজনীন। লালনকে আমরা চিনি শুধুই গান রচয়িতা হিসাবে। আমরা বিনোদনের জন্য লালনের গান শুনে থাকি। কিন্তু গানের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যময় দর্শনকে কি কখনো বুঝবার চেষ্টা করি? বোধ হয় না।
‘বাউল দর্শন ও লাল তত্ত্ব’ গ্রন্থে লালনের দর্শনকে বুঝবার প্রয়াস রয়েছে। আশা করি এ গ্রন্থ পাঠে পাঠক লাল সাঁইজিকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারবেন।
সূচিপত্র * তাইতে বাউল হইনু ভাই * আদি বাউল বীরভদ্র * বাউল দর্মনে লোকায়ত দর্শনের প্রভাব * লালনের ঘর-সংসার * লালন দর্শনে বস্তুবাদ * লালন দর্শনে মানবতাবাদ * লালনের সামাজিক আন্দোলন * লালন দর্শনে ভক্তি ও যুক্তি * প্রচার মাধ্যমে লালন * লালন শাহ : ঊনিশ শতকের বিদ্রোহী কবি * ভাষা-আন্দোলনে ও মুক্তিযুদ্ধে বাউল অবদান * রবীন্দ্রবাউলের একতারা * আমি ভাই খ্যাপা বাউল * বাউল বৈষ্ণব এক নহে তো ভাই * নির্বাচিত লালনের গান * সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
আবু ইসহাক হােসেন জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ থানার তালম গ্রামে ২৫ নভেম্বর ১৯৭৪ সালে। তবে মায়ের দেওয়া তথ্য মতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় তার জন্ম । চাচার কাছে পড়াশােনার হাতেখড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স । একই বিভাগে ফকির লালন সাঁইয়ের উপর পিএইচডি গবেষণারত। কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে লেখালেখি শুরু হলেও উপন্যাস, গল্প, ছড়া লিখছেন সমানভাবে। তবে তাকে সবচেয়ে বেশি টানে একাডেমিক গবেষণা। ইতােমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষক হিসেবে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছেন । তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ । লালন ফকিরের উপর রচিত তাঁর মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ দেশে বিদেশে সমাদৃত । তিনি ক্রমেই নিজেকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় । ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিতভাবে অচিন মানুষ নামে বাউল দর্শনের উপর গবেষণাধর্মী অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করে আসছেন। প্রায় দীর্ঘ সাত বছর তিনি নতুন কল্লোল সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে একতারা নামক একাডেমিক জার্নাল সম্পাদনা করছেন। গবেষণার জন্য জাতীয় মানবধিকার সােসাইটি স্বর্ণপদক, বজ্রকণ্ঠ সম্মাননা ও বাউল বাজার সম্মাননা তিনি লাভ করেছেন।