কয়েক দশকের ধারাবাহিকতায় আমরা এসে পৌঁছেছি এমন এক সময়ে, আমরা তৈরি করেছি এমন এক সময় যে সময় পরিমলের। এখন বা এইক্ষণ তাই হয়ে উঠেছে পরিমলের। পরিমল ধর্ষক। একই সঙ্গে সে অনৈতিক, মিথ্যুক, বিশ্বাস ভঙ্গকারী। পরিমল নির্মম ও নিষ্ঠুর। সে নৈরাজ্যের সূচক। এ সমাজ পরিমলের রূপ পেয়েছে। এ সময়কে বুঝতে হলে তাই পরিমলকে বুঝতে হয়। পরিমল যেমন অন্ধ ও বোধহীন পুরুষাঙ্গ, শারীরিক ও মানসিক উভয় অর্থে পুরুষাঙ্গ সর্বস্বতার প্রতীক, আমাদের এই সমাজ এই চারপাশ তেমন পরিমলের প্রতীক। আমরা বিস্ময়ে বিমূঢ় যেমন হই, সন্ত্রস্তও হই, যখন দেখি আমাদের চারপাশ এক অন্ধ পুরুষাঙ্গের অনুগত হয়ে আছে। এক অদ্ভুত বয়ান কৌশলে এই রচনাটি রচিত। এই উপন্যাসটি শুরু হয় এক লেখকের উপন্যাস রচনা শুরুর মধ্য দিয়ে। তারপর পাঠক খেয়ালও করেন না, কখন কী সহজে সব চরিত্র মিলেমিশে গেছে। কোনটি স্বয়ং লেখক, কোনটি বাস্তব জীবনের কেউ, কোনটি উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্র, এর আর ভেদাভেদ থাকে না। পাঠক এর কারণে সমস্যা বোধ করবেন না, বরং ক্রমান্বয়ে টের পাবেন, এ সময়কে ধরার জন্য এর চেয়ে অধিকতর উপযোগী বয়ান কৌশল আর কিছু হতে পারে না! বাংলা সাহিত্যে এ উপন্যাস স্বাতন্ত্র্য মর্যাদায় সব সময়ই বিবেচিত হবে।
মঈনুল আহসান সাবেরের জন্ম ঢাকায়। ২৬ মে ১৯৫৮। পৈতৃক ভিটে একদা বরিশাল ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পিরােজপুর। দেশের বহু বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে, যাওয়া হয়নি ওই পিরােজপুর। বাবার ফেলে আসা ভূমি সাজানাে আছে সাবেরের কল্পনায়। জন্মের পর এই ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। সংসার জীবনও। যদিও এক সময় ইচ্ছা ছিল, থিতু হবেন না, পথে পথে থাকবেন, আজ এখানে তাে কাল ওখানে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তিনিও সেই ওদের মতাে, যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত না টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বর। বড়দের জন্য প্রথম লেখা ১৯৭৪-এ। প্রকাশিত হয়েছিলাে সে সময়কার সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তারপর ৪০ বছর ধরে এই একটিই কাজ, বিরতিসহ বিরতি ছাড়া। প্রথম বই গ্রল্পগ্রন্থ “পরাস্ত সহিস বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে। চাকরি না করে উপায় নেই। তাই করছেন, সাংবাদিকতা। এখন অবশ্য বেকার। বেকার থাকার অভিজ্ঞতা তার আছে। বাসনা বেকারই থেকে যাওয়ার। বেড়াতে ভালােবাসেন। একা থাকতেও পুরস্কার পেয়েছেন সামান্য কয়েকটি। বাপি শাহরিয়ার শিশুসাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। স্ত্রী নাহিদ নিগার, দু পুত্র আহসান সেনান ও আহসান সাজিদকে নিয়ে তার সংসার।