“জীবন ও মানুষ : ব্যাংক ও ব্যাংকিং" বইটির প্রথম দিকের কিছু অংশঃ জীবন কী? জীবন একটা অনুভব— যার সত্তা আছে কিন্তু অবয়ব নেই, যা এগিয়ে চলে, পেছায় না। যার গতি আছে, প্রকৃতি আছে কিন্তু আকৃতি নেই। আমার মতে, জীবন একটি শক্তি, অদৃশ্য শক্তি। জীবন মানে দৌড়। জীবন মানে লড়াই। ভয় না পাওয়ার লড়াই। দায়িত্ব না এড়ানাের লড়াই। জীবন কখনও ভাঙে, কখনও মচকায়, আবার কখনও ভাঙে ও গড়ে নদীর কূলের মতাে; যেমন 'একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে, এই তাে নদীর খেলা। আসলে, ভাঙাগড়া জীবনেরও একটি খেলা। এই খেলার গুটি জীব। জীবনের অবস্থান, সর্বত্র সচল এবং সক্রিয়। আবার কখনও কখনও তা নিষ্ক্রিয়ও হয়ে পড়ে এবং ধুকে ধুকে চলে। ঠেলে চালাতে হয়, বয়ে নিয়ে যেতে হয়। তখন, জীবন হয়ে ওঠে খুবই দুর্বিষহ। আবার জীবন চঞ্চল। চপলা হরিণীর মতাে। আসলে জীবনকে অনুভব দিয়ে ছোঁয়া যায়, কিন্তু হাত দিয়ে ধরা যায় না। জীবন কখনও কখনও ফানুসের মতাে, ইথারে ভাসে। জীবন যেখানে যেমন, সেখানে তেমন। দুনিয়া এবং জীবন চলে সৃষ্টিকর্তার নিয়ন্ত্রণে। মানুষের জীবন বিচিত্র। যদি প্রশ্ন করা হয়, জীবন কিসের জন্য, কেউ বলবে জীবন ধারণের জন্য, কেউ বলবে জীবন যাপনের জন্য, কেউ বলবে জীবন ভােগের জন্য, আবার কেউ বলবে জীবন ত্যাগের জন্য। কোন্টা সঠিক? এ প্রশ্নের জবাব জটিল। এক এক মানুষ জীবনকে এক এক ভাবে নেয়, পায়, পরিস্থিতির কারণে, পরিবেশের প্রভাবের কারণে। তাই তাে জীবন সম্পর্কে মানুষের এমন ভিন্ন ধারণা, যা সবই ক্ষেত্রবিশেষে সঠিক। এসব ভাবতে ভাবতে, বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকার গানটির কথা মনে পড়ে যায়। তার এই গান জীবনের একটি নির্দিষ্ট পথ সম্পর্কে আলােকপাত করেছে। যেমন- মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না' গানের এ দু'টি লাইন জীবনের মূল্যবােধকে একনিষ্ঠভাবে সবকিছু ইতিবাচকভাবে নিতে শিখবে, নেবে এবং করবে। আপনি তাদের আদর্শ হবেন। অতএব, জীবন মানে পরাজয় নয়, জয়। এটাই চরম সত্য কথা, এবং এটাই জীবনে পরম পাওয়া। ২. নিজেকে বড় ভাবার কুফল মানুষের একটা স্বভাবজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে নিজেকে বড় ভাবা এবং অন্যে তাকে বড় ভাবুক বা বলুক তা যে কোনাে মূল্যে আদায় করা। এরূপ স্বার্থপর মানুষের কাছে, ঠগ-তােষামােদকারীদের সাত খুন মাফ। কারও অনুরােধ পেলেই, ওই স্বার্থপর ব্যক্তি গর্বে গলে যান। শত অপরাধ করে কেউ প্রথমেই তার কাছে গেলে তিনি ন্যায়-অন্যায় না দেখে তাকেই সাপাের্ট করেন। এতে অনাচার হয়, অন্যায়কারী প্রশ্রয় পায় এবং তার ভিকটিমরা অন্যায্যভাবে কষ্ট পায়। যে বস বা অগ্রজ এরূপ করেন, তিনি দুর্বল চিত্ত। নিজের যােগ্যতার ওপর তার আস্থা কম, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভােগেন। তার চিন্তা-চেতনা সর্বতাে কল্যাণকর হয় না। এতে তার চতুর অধস্তনরা তার ওপর সুযােগ নেন। ফলে তার অফিস অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়। তাই কোনাে বস বা অধস্তন কারােরই এরূপ ঠেলাগাড়ির মতাে ঠেলা খেয়ে চলা উচিত নয়। সব সময় সবারই উচিত নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে ভালাে-মন্দ বিচার করে মেরুদণ্ড সােজা করে নিয়ম অনুযায়ী সঠিক কাজ করা, নিরপেক্ষ হয়ে চলা। নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে পারলেই ভালাে মানুষ এবং ভালাে বস্ হওয়া যায়। নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ অর্থাৎ ভােগে সুখ নেই, ত্যাগে সুখ এই আদর্শই নিরপেক্ষতার প্রতীক। নিরপেক্ষ হতে হলে নিয়ম-কানুন জানতে হয়, মানতে হয়। ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কাজই এসব নিয়ম-কানুন শেখানাে এবং সেগুলাে মানার জন্য ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে সব অংশগ্রহণকারীকে উদ্বুদ্ধ করা। ৩. ট্রেনিং কী এবং কেন ট্রেনিং প্রয়ােজন? ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণের মূলমন্ত্রই হচ্ছে Devotion বা মগ্নতা সৃষ্টি। শুনতে মগ্ন, শিখতে মগ্নতা এবং তা করতে মগ্নতা। অন্যভাবে বলা যায়, শােনার কৌশল, শােনানাের কৌশল, শেখার কৌশল, শেখানাের কৌশল, প্রয়ােগ এবং গ্রহণের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুশীলনের নামই ট্রেনিং। আবার প্রয়ােজনের তাগিদে কোনাে মানুষ বা প্রাণীকে নিজের এবং অপরের কাজের উপযােগী করে তােলার শিক্ষা দেওয়ার নামও ট্রেনিং। ট্রেনিংকে মােটামুটি দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১) নৈতিকতার ট্রেনিং ২) কাজ করার ট্রেনিং। ট্রেনিং প্রশিক্ষণার্থীদের Attitude পরিবর্তন করে, কাজ শেখায়, দক্ষতা বাড়ায়, জ্ঞান বাড়ায়, কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। বড়দের দেখে ছােটরা এবং একজনকে দেখে