ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলা ছোটগল্পের মানচিত্রে অন্নদাশঙ্কর এক নতুন ব্যঞ্জনা, এক স্বতন্ত্র সংজ্ঞা। প্রথম পর্যায়ে তিনি যেন প্রচ্ছন্ন সমাজসংস্কারক। ‘দু’কানকাটা’ থেকে শুরু হল এক ব্যক্তিগত দুঃসাহসিক অভিযান। ‘পরীর গল্প’ এ তিনি ছোটগল্পের প্রথাসিদ্ধ রীতি ও রূপকে আরও বেশি করে , ভেঙে ফেলে মূর্ত করে তুললেন উপলব্ধ জীবন ও স্বপ্নলব্ধ সৌন্দর্যের মধ্যে নিহিত রহস্যময় বৈপরীত্যকে। প্রাতহিক অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে থাকা আধ্যাত্নিকতার স্বরূপ সন্ধান করেছেন ‘‘মীন পিয়াসী’তে। এই রকম ভাবে এক একটি গল্প একটি বিষয়। নিষ্ঠুর পঙ্কিল হিংস্র বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে বাস করেও এক বিচারপতির সৌন্দর্য-সাধনার কাহিনি ‘ও’ যেন লেখকেরেই জীবনকথা। অধিকাংশ গল্পেরই ঘটনাস্থল বাংলার বিভিন্ন মূফঃম্বল শহর, ঘটনাকাল লবণ সত্যাগ্রহ থেকে গান্ধীহত্যা এবং অধিকাংশ চরিত্রই মফঃম্বলের অগ্রসর বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ভুক্ত, তাঁরা চাকুরিজীবী হলেও চাকুরি বর্হিভূত জগৎবিহারী। তাঁদের ব্যক্তিত্বকে বিশিষ্ট করেছে অন্নসংস্থানের মননকর্ম। এখানেই অন্নদাশঙ্করের ছোটগল্পের স্বতন্ত্র মহিমা।
(মার্চ ১৫, ১৯০৪ - অক্টোবর ২৮, ২০০২), একজন স্বনামধন্য বাঙালি কবি ও লেখক। ভারতের উড়িষ্যা জেলার তার জন্ম। তিনি একজন বিখ্যাত ছড়াকারও। অন্নদাশঙ্করের জন্ম হয় ব্রিটিশ ভারতে বর্তমান উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে । তাঁর পিতা ছিলেন ঢেঙ্কানল রাজস্টেটের কর্মী নিমাইচরণ রায় এবং তাঁর মাতা ছিলেন কটকের প্রসিদ্ধ পালিত বংশের কন্যা হেমনলিনী । ছোটবেলায় ঢেঙ্কানলে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় । ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন । এরপর সংবাদপত্রের সম্পাদনা শিখতে কলকাতা বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কাছে যান । তিনি শর্টহ্যান্ড, টাইপরাইটিং এবং প্রুফরিডিং-ও শেখেন । কিন্তু এই কাজ তাঁর ভালো লাগেনি । এরপর তিনি কটকের র্যাভেনশ কলেজ থেকে আই.এ পরীক্ষা দেন এবং তাতে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পরীক্ষাতেও তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম স্থানাধিকারী হন । ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে এম.এ পড়তে পড়তে আই.সি.এস পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয়বারে পূর্ববর্তী রেকর্ড ভেঙে প্রথম স্থান অধিকার করেন । তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এ গৌরব লাভ করেন। সেই বছরেই তিনি সরকারি খরচে আই.সি.এস হতে ইংল্যান্ড যান । সেখানে তিনি দুই বছর ছিলেন । এই সময়ে তাঁর ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী পথে প্রবাসে বিচিত্রায় প্রকাশিত হয় । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন কন্যা অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ডকে বিবাহ করে তিনি তাঁর নাম দেন লীলা রায় । লীলা রায় বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন । অন্নদাশঙ্করের অনেক লেখা লীলাময় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেন । তিনি বছর এই পদে থেকে বিভিন্ন জেলায় কাজ করে কুমিল্লা জেলায় জজ হিসাবে নিযুক্ত হন । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সরকারী কাজে নিযুক্ত থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিচার বিভাগের সেক্রেটারি হন । ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বেচ্ছায় সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেন । ২৮ অক্টোবর , ২০০২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।