মহাবিশ্ব কী অবিশ্বাস্য! শিরোনাম দেখেই বইটি পড়তে মন চায়, তাই না? ‘মহাবিশ্ব কী অবিশ্বাস্য’ এমন একটি উপযুক্ত ও কাব্যিক নাম যা যে কোনো লেখক বা বইয়ের জন্য ঈর্ষণীয়। আলী হাসান এমনই একটি বইয়ের গর্বিত লেখক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পর্দাথ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে তিনি অধ্যাপনা করছেন। মহাবিশ্ব কী অবিশ্বাস্য বইটির ইতিমধ্যেই তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এ থেকে বোঝাই যায় যে বর্তমান সময়ের পাঠক মহাবিশ্ব সম্পর্কে কতোটা আগ্রহী! মহাবিশ্ব নিয়ে বিভিন্ন লেখকের বই রয়েছে। কিন্তু আলী হাসানের বইটি কেন পাঠকপ্রিয়? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে প্রথমে বলা যায় যে, বইটি পড়লেই বোঝা যায় যে, কেন পাঠকপ্রিয়। আর দ্বিতীয়ত বলা যায় এ বইটি একটি ব্যতিক্রমী ও বিপুল তথ্য উপাত্ত সম্মৃদ্ধ একটি বই। ১২৮ পৃষ্ঠার বইটিতে লেখক খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে, সরল গদ্যে ও গল্পের মতো উপস্থাপন করেছেন এই বিশাল, বিপুল, অজেয় মহাবিশ্বকে। মহাবিশ্বের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছোটদের উপযোগী করে লেখা মোট সতেরটি প্রবন্ধ রয়েছে এ বইটিতে। বইটির প্রথম প্রবন্ধ ‘যেভাবে পাওয়া গেল বিশ^কাঠামো’ দিয়ে শুরু করেছেন লেখক। শিরোনামই বলে দিচ্ছে এ প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে। এছাড়াও মহাবিস্ফোরণ থেকে মহাবিশ্ব, তারার জন্ম, নীহারিকা থেকে সূর্য, অতঃপর..., গ্রহ-উপগ্রহের জন্ম, সূর্য যে পরিবারের কর্তা, চাঁদের কিস্সা, মহাকাশের ভূত―ধূমকেতু, খসেপড়া তারার রহস্য, কৃষ্ণবিবর―এক মহাভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদ, মহাজাগতিক ঘড়ি―পালসার, রহস্যময় নক্ষত্র―কোয়াসার, পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব, রহস্যাবৃত তুঙ্গুস্কা বিস্ফোরণ, আইনস্টাইন-এর তত্ত্ব কি ভুল, হিগস-বোসন থেকে ঈশ্বরকণা, ভূমিকম্প শিরোনামের প্রবন্ধগুলো রয়েছে। তবে এটুকু যোগ করা যেতে পারে যে, এ প্রবন্ধের মধ্যে আলী হাসান পিথাগোরাস, প্লেটো, ইউডোক্সাস, অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে স্টিফেন হকিং পর্যন্ত এসে থেমেছেন। মহাবিশ্ব নিয়ে এই সকল মহাজ্ঞানীদের কর্মযজ্ঞের কথা তিনি তার ভাষায় প্রকাশ করেছেন। মহাবিস্ফোরণ থেকে মহাবিশ্ব, তারার জন্ম, নীহারিকা থেকে সূর্য, অতঃপর..., চাঁদের কিস্সা প্রবন্ধগুলো দিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়েছেন আলী হাসান। এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিশ্লেষণধর্মী লেখাগুলো সুক্ষè ও সচেতনভাবে সাজিয়েছেন, যা যেকোনো বয়েসী পাঠকের জন্য প্রযোজ্য। এ বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে যেন পাঠক মহাবিশ্ব ভ্রমণ করছেন। এই যে, আমাদের মাথার ওপর দিনে রাতে চাঁদ- সূর্যের উদয় অস্ত এর বাইরের যে কতো কী কী আছে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আর যা কিছু আবিষ্কার হয়েছে তাও যেন বিশ্বাস হয় না। বিজ্ঞান, ধর্ম, রাজনীতি ও নানা কুসংস্কার সব মিলিয়ে মহাবিশ্ব একটি আলোচিত ও বিস্ময়কর বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। মহাবিশ্বের নানা ছবি যুক্ত করা হয়েছে লেখার সাথে। বইটির সংস্করণ যত বাড়বে ততই পাঠকের কৌতুহল মিটবে।
টাঙ্গাইল জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের থানা নাগরপুর। এরই দক্ষিণ সীমানা ঘেঁষা এক নিভৃত পল্লির অজপাড়াগাঁ বাড়িগ্রাম। যোগাযোগ অত্যন্ত নাজুক। এ গ্রামে ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে অতি সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আলী হাসান। বাবা মরহুম মারফত আলী ব্যবসায়ী, মা মোছাম্মত জিরাতন্নেছা অত্যন্ত মেধাবী ও হস্তশিল্পে পারদর্শী। মায়ের প্রচেষ্টায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর অতিক্রম করে নাগরপুর কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যয়ন শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানকালে বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম এবং নাট্যগোষ্ঠির সংস্পর্শে আসার সুযোগ ঘটে। লেখালেখি শুরুও তখন থেকেই। ১৯৮৮ সালে স্নাতক এবং ১৯৮৯ সালে নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর অধ্যাপনা পেশায় নিয়োজিত। বর্তমান গ্রন্থের অনেকগুলো প্রবন্ধ বিভিন্ন সময়ে ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীম সম্পাদিত ‘বিজ্ঞান সাময়িকী’, ‘দৈনিক প্রথম আলো’, ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকায় প্রকাশিত।