ফ্ল্যাপে লিখা কথা আমাদের যাপিতজীবন সুললিত নয়। কি গ্রামীন কি নাগরিক, উভয়মানের জীবনধারা নানারকম হাসি-কান্নার রূপবৈচিত্র্য সজ্জিত ও শোভিত। এসব নিয়ে ঘরে বাইরে যে কথকতা- তারই নিঃশব্দ উচ্চারণ শুনলাম গুরুচন্ডালের গৌরচন্দ্রিকা বইটিতে। উচ্চারণটি আকর্ষণীয়। গড়পড়তা চলিত ভাষার আচ্ছাদনের বাইরে দাঁড়িয়ে লেখক সাধুভাষার আশ্রয় গ্রহণ করেছেন সজ্ঞানে। এই প্রসঙ্গে অল্প কথা এই যে, বিদ্যাসাগর -বঙ্কিমকালে বাংলা ভাষার গদ্যরূপ যে আকার প্রকারে সর্বগামী হয়েছিল, পরবর্রতীকালে তার আধুনিকীকরণ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল কথ্যনির্ভর সরল প্রাঞ্জল চলিত বাংলায় উত্তরণের মধ্য দিয়ে।
আমাদের সংবিধানের ভাষা সাধু, কিছুদিন আগ পর্যন্ত দেশের দুটি দৈনিকের ভাষাও সাধু ছিল। সেখানে ভাষার ঔজস্বিতা ও গাম্ভীর্যের প্রাধ্যান্য লক্ষণীয়। আজকের ভাষা-সাহিত্যের অঙ্গনে প্রায় নির্বাসিত এই সাধু ভাষায় লেখকের ভর করার কারণ ভিন্ন। যে চোখে তিনি সমাজ দর্শন করেছেন, সেটি তার কাছে ভিন্ন এক মাত্রায় কখনো আনন্দের, কখনো বিস্ময়ের, কখনো ক্ষোভের , কখনো বেদনার। তাই সাধুভাষার আড়ম্বরপূর্ণ ঝংকারে ও বর্ণে তিনি তাঁর নিবন্ধগুলো রাঙিয়ে তুলেছেন। প্রতিটি নিবন্ধে প্রাহসনিক পরিমিতি নিয়ে তিনি তাঁর সমাজ-জীবন-চেতনার সাক্ষর রেখেছেন।
বইটির বিষয়বস্তুর সাথে বেশ অন্তরঙ্গ মিল দেখি দুর্জন উবাচ শিরোনামীয় রচনাবলিতে। প্রায়স খোন্দকার আলী আশরাফ ১৯৭৩ সাল থেকে একটানা অনেকদিন সাপ্তাহিক বিচিত্রা’র ওই নামে নিবন্ধ লিখেছেন। তাঁর নিজের কথায় ওগুলো ছিলো-‘দুর্যোধরেন দুঃশাসনের যুগের দুঃস্বপ্নের বয়ান’। আনুপ্রাসিক প্রসন্নতায় ভরা ওই কথারই প্রতিধ্বনি পাই এই বইটিতে। শাজাহান চাকলাদার লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী