সুদূর অতীত থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ছিল। পালতোলা নৌপথে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে তাল রেখে চলত নৌ-বাণিজ্য। একবার এখানে আসলে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহনির্ভর বাণিজ্যের কারণে বিদেশী বণিকদের প্রায় ছয় মাসাধিককাল থাকতে হতো চট্টগ্রামে। একই প্রক্রিয়ায় প্রাচীনকালে আরবদের বাণিজ্য চলেছে করাচি, সুরাট, বোম্বে (পরবর্তী মোম্বাই) কলম্বো, মাদ্রাজ, চট্টগ্রাম, আকিয়াব, বার্মা (পরবর্তী মায়ানমার), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীন, জাপানের সাথে। আরব দেশের নৌপথ দিয়ে পরে এসে যোগ দেয় ইউরোপীয় বণিকেরা। সে ঐতিহাসিক পথেই ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার হয়েছে মধ্য ও দূর প্রাচ্যে এবং ঐতিহাসিক এপথ বিস্তারের কারণে চট্টগ্রামের অপর নাম 'ফতেহাবাদ'। 'ফতেহ' অর্থ বিজয়। ইসলামের বিজয় ও আবাদের মাধ্যমে এসেছে এ নাম। চট্টগ্রাম বিজয় ও আবাদের মাধ্যমে এর অপর নাম 'ফতেহাবাদ'। সুদীর্ঘকাল ধরে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক বিবর্তন হয়েছে, ধর্মের বিকাশ ঘটেছে। ভৌগোলিক বিবর্তন হয়েছে অতি সামান্যই। সমুদ্র সরেছে, স্থলভাগের সম্প্রসারণ হয়েছে, পাহাড় গজিয়েছে। সবকিছুর পরেও সমুন্নত শিরে বেঁচে আছে মাটি ও মানুষ। স্বাধীনতাপ্রিয় বীর চট্টলার অমর সন্তানেরা ইতিহাস আলো করে আছেন। অন্যায়ের নিকট তাঁরা মাথা নত করেননি।
কর্নেল (অব.) মােহাম্মদ সফিক উল্লাহ’র জন্ম। ১৯৪১ সালের ২৬ অক্টোবর। জেলা : কুমিল্লা, থানা : চান্দিনা, গ্রাম : কৈলাইন-এর সম্রান্ত এক মুসলিম জমিদার পরিবারের সন্তান। ১৯৫১ সালে স্কুলজীবনে বন্দুক হাতে নেয়া যােদ্ধার বাস্তব যুদ্ধ পরীক্ষা হয় '৭১-এর রণাঙ্গনে। ৮নং সেক্টর-এর ‘ই’ কোম্পানিসহ ৫নং গেরিলা ইউনিট কমান্ড করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যােদ্ধাহত অফিসার বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সেনাসদর, বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি, ২৪ পদাতিক ডিভিশন, আর্মি স্কুল অব এডুকেশন অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরগ্রহণের পর আই.ইউ.বি.এ.টি.তে ট্রেজারার পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন বিদ্বত সংঘের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই মুক্তিযুদ্ধে বাংলার নারী (২০০৩), দ্বিতীয় প্রকাশিত বই একাত্তরের রণাঙ্গন : গেরিলাযুদ্ধ ও হেমায়েতবাহিনী। তিনি ৩১ মার্চ ২০০৮ সালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা সেনানিবাসে মৃত্যুবরণ করেন।