"কাছিমের পিঠে গণতন্ত্র" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: আজ বাংলাদেশের মুখাবয়বের দিকে তাকালে স্তব্ধ হয়ে যাই; চোখে জল আসে। যেখানে আমাদের শিকড় প্রােথিত, যুগ যুগ ধরে তারই মাঠে মাঠে খণ্ডিত কলিজাগার, খুব আয়ােজন করে কর্ষণকেলি, মনুষ্য-দেহের ব্যবচ্ছেদিত হাড় মজ্জার বিক্রয়-হাট, অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের পুনর্পাঠ, এক অধিকার মেরে আরেক অধিকার আদায়, অন্যের মুখের গ্রাস নিজ মুখে পুরে আয়েশ করে চর্বণ এবং গণতন্ত্রের নামে যখন ফণাতন্ত্র দেখি তখন আমাদের শুভ্রসৌম্য; নন্দনপ্রিয় হৃদয় কুঁকড়ে ওঠে, বিলাপ করে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি শুধু, কিছুই বলতে পারি না, কিছুই করতে পারি না। কারণ কাছিমের পিঠে গণতন্ত্র চলছে। কারণ এখনাে যে দেশে গণতন্ত্র চর্চার বদলে ফণাতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে এবং এর কড়া নাড়ছে যুগের পরে যুগ উল্টেপিল্টে একই গােত্রের স্বার্থভােজী ধনতন্ত্রের প্রবর্তকরা- যারা মানবিক ফসলের মূল্য বােঝে না, বানরের মতাে দিনের প্রােজ্জ্বল আলােয় চলতে পারে না, চলে রাতের অন্ধকারাচ্ছন্ন অলিগলিতে হামাগুড়ি দিয়ে। এই বইতে ফণাতন্ত্রের এই বিষাক্ত ছােবল দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠা আমার উর্বর হৃদয়ের বিষাদগ্রস্ত কথাগুলিই কবিতার ছত্রে-ছত্রে নন্দনশিল্পের ঝালর পরিয়ে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি মাত্র।
নকিব মুকশি (Nokib Mukshi)। জন্ম ১৯৮৮ সালের ১৫ জানুয়ারি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের সরদারপাড়া গ্রামে। বেড়ে ওঠা জয়ন্তী ও যুমনা নদীর মধ্যবর্তী পলি-উর্বর চরাঞ্চলে। তিনি স্থানীয় স্কুল-কলেজে পড়াশোনার পর ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত আছেন, পাশাপাশি এক্সিলেন্ট আইডিয়াল স্কুল নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। নকিব মুকশি নিরীক্ষাধর্মী কবিতা লিখতে বেশি পছন্দ করেন। তিনি ভিন্ন ধরনের এক কাব্যদর্শনাশ্রিত ফর্ম (হেজিমনিক ফর্ম) ও সিনট্যাক্সে কবিতা লিখছেন। এ ধরনের কবিতার নাম দিয়েছেন ‘হেজিমনিক কবিতা’। তাঁর হেজিমনিক কবিতাগুলো নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের নাম ‘...দুধের গাই—এজমালি বাগান...’। নকিব মুকশির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : কাছিমের পিঠে গণতন্ত্র, ভাষাচিত্র প্রকাশন, ২০১৩; প্রতিশিসে অর্ধজিরাফ, জেব্রাক্রসিং প্রকাশন, ২০১৯; ...দুধের গাই—এজমালি বাগান..., চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন, ২০২০; জুতার কিরণ, অনুপ্রাণন প্রকাশন, ২০২০; পৃথিবী এক সারোগেট মাদার, ঐতিহ্য, ২০২৪।