ফ্ল্যাপে লিখা কথা জুলফিকার নিউটনের উপন্যাস পাঠের পরিক্রমা শেষে সামগ্রিকভাবে কয়েকটি সহজেই মনে আসে। তিনি তাঁর উপন্যাস বিষয়ে একাধিক ক্ষেত্রে নর-নারীর প্রেমবোধের স্বরূপ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন শিল্পীর মানসিকতায়। জুলফিকার নিউটন মানুষে মানুষে ভালবাসা, সখ্য, মানুষের জীবনর সুস্থিতি, আশাবাদ, নানান বৈপরিত্যের ব্যঞ্জনায় আঁকতে সক্ষম এবং সফল। লেখকের আঁকা মানুষগুলো প্রধানত উচ্চবিত্ত সমাজ ও মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের সীমায় সক্রিয় থাকে। লেখক নিদ্র্রিধায় নিজেকে উপন্যাসের বিসয়ে ও চরিত্র সূক্ষভাবে যুক্ত করতে আগ্রহী। নিজের কথাই নিজে বলেন সততায় ও নিষ্ঠায়। নারী চরিত্রে বৈচিত্র্য ও জটিল মনস্তত্ত্বকে জুলফিকার নিউটন যেভাবে আঁকতে উৎসুক , তা তাঁর মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির নতুনত্বের অভিজ্ঞনেরিই সমর্থন। জুলফিকার নিউটনের আঁকা চরিত্রের গ্যালারিও পাঠকের অস্বাভাবিক বা অচেনা বলে মনে হয় না। সামাজিক ও নাগরিক চরিত্রগুলো সবই তিাঁর মা, বাবা, ভাই-বোন ,কাকা-জ্যেঠা ইত্যাদি আত্নীয় স্বজন বা রাস্তা-ঘাটে হাটে -বাজারে অফিস কাছারিতে নিয়ত দেখতে পাওয়া চেনা মানুষের আদলে আঁকা বলে মনে হয়। আর ভাষা? জুলফিকার নিউটনের ভাষার মধ্যে কোনো বানিয়ে তোলার ব্যাপার নেই। যে ভাষায় তিনি গল্প উপন্যাস লেখেন, তার মধ্যে কোথাও কোনো কসরত কিংবা পাঁচ জনের থেকে নিজেকে আলাদা করে দেখবার চেষ্টা আমাদের চোখে পড়ে না। তাঁর ভাষায় কৃত্রিমতার চিহৃ নেই। যে ভাষায় আমরা কথা বলি ,চিঠি লিখি এও সেই স্বাভাবিক ভাষা আর এরই ফলে তাঁর গল্প উপন্যাস এবং অনুবাদ সাহিত্য এমন একটা সতেজ সাবলীল প্রাণময়তার সঞ্চার হয় , পাঠককে যা প্রবলভাবে কাছে টানে।
১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার বারেরা গ্রামের বনেদী কাজি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্কুল, কলেজ এবং বিশ^বিদ্যালয়ে কৃতিমান ছাত্র ছিলেন এবং প্রথম শ্রেণীর সাথে অনার্সসহ এম.এ. ডিগ্রি এবং পরবর্তীতে বিশ^ভারতী বিশ^বিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শনের ওপর উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসুর) সাবেক সাহিত্য সম্পাদক, সিনেট সদস্য, নন্দন পত্রিকার সম্পাদক এবং পরবর্তীতে দেশ বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, আমন্ত্রিত বক্তা, গবেষণা ও বিশেষজ্ঞতার ভূমিকায় সংযুক্ত ছিলেন। গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ এবং প্রবন্ধ-গবেষণা, সাহিত্যতত্ত্ব, দর্শন, সংগীত, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমকালীন ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিক্ষেত্রেই জুলফিকার নিউটনের সংবিৎ সক্রিয় ও সুপ্রকাশ। তাঁর গল্প-উপন্যাস যেমন প্রীতিপদ, অনুবাদ সাহিত্য যেমন সুখপ্রদ, প্রবন্ধ ও গবেষণা তেমনই কোন না কোন দিক থেকে চমকপ্রদ। সব সময়ই তাঁর আলোচনায় থাকে চিন্তাকে উসকে দেবার মত অজস্র উপাদান, নতুনতর দৃষ্টি কোন বিচারে উদ্বুদ্ধ করার মত ক্ষুরধার বিশ্লেষণ। জাতীয় ও আন্তজার্তিক ভিত্তিতে সাহিত্যে মৌলিক গবেষণা অনুবাদ ও জীবনবাদী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের জন্য আনন্দমেলা, বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ, রংধনু স্বর্ণপদক, রূপসী-বাংলা স্বর্ণপদক, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, গান্ধী গবেষণা পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু একাডেমী, রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল একাডেমী, সুভাষচন্দ্র পদক এবং কবীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।