বই পরিচিতি ধর্ম পরোক্ষভাবে হয়ত মানুষকে দিয়েছে অনেক কিছু। কিন্তু কেড়েও নিয়েছে প্রচুর। ধর্ম মানুষের ভিতর প্রেমের উদ্বোধন ঘটিয়েছে।আবার বিদ্বেষও কম সৃষ্টি করে নি । ধর্মের সমাজ-ঐতিহাসিক চিত্র তাই শুভ –অশুভের ছায়া-আলোকিত। সমসত্ম ধর্মের ভাবনাই সমগ্র মানবজাতিকে নিয়ে। কিন্তু কার্যত ও শেষ বিচারে র্ধম হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রদায়গত । সব মানুষের জন্য কোন সর্বজনীন ধর্ম সৃষ্টি হয় নি। এই বাসত্মব সীমাবদ্ধতাই ধর্মের মাঙ্গলিক প্রয়াসকে ঘৃণা-বিদ্বেষ-ঈর্ষা-বিরোধের অনিবার্য পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাই দেখা যায় স্বধর্মঅনুশীলনী মানুষ সর্বমানবিক মানুষ হয়ে উঠেছে এমন দৃষ্টান্ত দূর্লভ। এই সীমাবদ্ধতার সূত্র সন্ধানই এই গ্রন্থে উদ্দেশ্য। এই উপমহাদেশের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে ধর্ম কখন থেকে ধর্মমোহে রূপান্তরিত হল কী পরিস্থিতিতে ? ভারতবর্ষের প্রধানতম ধর্মগুলির রূপ ও রূপান্তর , উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ ,প্রচার প্রবর্তন ও প্রসার কীভাবে? সমাজে তার প্রতিক্রিয়াই বা কী? প্রাচীন বা মধ্যযুগে নানা ধর্মের মধ্যে বিভেদ কেমন? তখন কি এই বিভেদ থেকে সংঘর্ষ হয়েছে? ঔপনিবেশিক পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি কেমন করে ক্রমশ বদলে গেল? সেই পরিবর্তনের কী প্রভাব পড়ল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে? স্বাধীনতা লাভের পর ধর্মনিরপ্রেক্ষতার তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েও বাস্তবে কী দেখা যেল? কেন এই সংঘর্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গণহত্যা, সন্ত্রাস এখনও অব্যাহত? সব তথ্যের ইতিহাস অনুসন্ধানও এই গ্রন্থের লক্ষ্য।
সূচিপত্র ভূমিকা মানবজাতির উদ্ভব ও বিকাশ ধর্মের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ বাঙালির অনুসৃত প্রধান চারটি ধর্ম মধ্যযুগে বাঙালির ধর্মচিন্তা বেদএ উল্লেখিত চার শ্রেণির ধার্মিক ধর্ম ও বিজ্ঞান ধর্ম ও দর্শন ধর্ম ও সংস্কৃতি ধর্ম ও নৈতিকতা ধর্ম ও রাজনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা : ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যা চিন্তার স্বাধীনতা : পরিধি ও প্রশ্রয় ধর্মদ্রোহী মুরতাদ আইন প্রসঙ্গে ধর্মদেশনায় দুই ঔপন্যাসিক : বঙ্কিম ও মশাররফ ধর্মদেশনায় দুই সংস্কারক : রামকৃষ্ণ ও বিদ্যাসাগর ধর্মদেশনায় দুই কবি : রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ধর্মদেশনায় দুই লোকায়ত দার্শনিক : লালন ও আরজ আলী ধর্মদেশনায় দুই দ্রোহী : আহমদ শরীফ ও হুমায়ুন আজাদ ধর্মদেশনায় দুই নারী : রোকেয়া ও তসলিমা ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা আগামী বিশ্বে ধর্ম বর্তমান সঙ্কলন সম্পর্কে
প্রথম অধ্যায় ধর্মের উৎসসন্ধানী অভিমত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন / সকল ধর্মগ্রন্থই পুরুষ রচিত # ১০৯ এ.কে. নাজমুল করিম/ ভূগোল ও ভগবান # ১১২ ধর্ম্মের বিবর্ত্তন ও মার্ক্সবাদ # ১১৭ জয়ন্তানুজ বন্দ্যোপাধায়/ সভ্যতার বিবর্তনে ধর্ম # ১২৪ বুলবন ওসমান/ ধর্ম ও সংস্কৃতি # ১৩৮ হুমায়ুন আজাদ/ ধর্ম # ১৪৫ কলিম খান/ মৌলবাদ থেকে নিখিলের দর্শনে # ১৭১ ওয়াহিদ রেজা/ ধর্মচেতনা ও ঈশ্বরবিশ্বাস # ১৭৮ সা’দ উল্লাহ/ ধর্ম ও মিথ # ২০০ নূরুর রহমান/ মূল স্রোতে ধাবমান # ২০৭
দ্বিতীয় অধ্যায় ধর্ম : মানসলোক ও চেতনালোক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় # বেদের দেবতা/২১৭ মীর মশাররফ হোসেন/ গোকুল মির্ম্মূল আশঙ্কা : প্রস্তাব-এক # ২২৩ রমেশচন্দ্র দত্ত/ হিন্দু দর্শন/২২৯ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/ ধর্মের সরল আদর্শ # ২৩৫ মানুষের ধর্ম/২৪৬ ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী/ মানবধম # ২৮৮ নিখিল ভট্টাচার্য/ হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষা এবং মানবতা # ৩০৯ তপন কুমার মুখোপাধ্যায়/ দেশীয় খ্রীষ্ট সম্প্রদায়ের জাতীয় চেতনার উন্মেষ # ৩১৪ সুরজিৎ দাশগুপ্ত/ ভারতবর্ষ ও ইসলাম # ৩২৩ মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ/ পারমার্থিক জগৎ জীবন # ৩২৯ কাজী নজরুল ইসলাম/ মন্দির ও মসজিদ # ৩৩৩ হিন্দু-মুসলমান # ৩৩৮ সৈয়দ মুজতবা আলী/ ধর্ম # ৩৪১ সাবির আহমেদ চৌধুরী/ স্রষ্টাভাবনা # ৩৪৫ গোলাম আহমদ মোর্তজা/ ভারতীয় বৃহত্তম বুদ্ধিজীবী শ্রেণির করুণ পরিণতি # ৩৫১ ওসমান গণী/ ইসলামে যুক্তিবাদী মুতাযিলা ও খারেজী সম্প্রদায় # ৩৬৬ সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী/ মোসলেম ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দু মাওলাইয়াত # ৩৮৫ ইমামুদ্দীন মুহাম্মদ তোয়াহা বিন্ হাবীব/ মানব ঐক্যের পথে প্রধান বাঁধা বিশ্বের তিনটি অভিশপ্ত জাতি # ৩৮৯ মোজাফফর হোসেন/ ধর্মীয় আদর্শ থেকে সংস্কৃতি সমন্বয়ের পথে # ৩৯৩ স্বামী পরদেবানন্দ/ দেবীর ৫১ পীঠ ও তাঁর ভৈরব # ৪০০
তৃতীয় অধ্যায় যুক্তিবাদীদের দৃষ্টিতে ধর্ম আহমদ শরীফ/ নাস্তিকের ধর্মচিন্তা # ৪০৯ শিবনারায়ণ রায়/ নাস্তিকের ধর্মজিজ্ঞাসা # ৪১২ আরজ আলী মাতুব্বর/ সত্যের সন্ধান # ৪৩৬ শয়তানের জবানবন্দি # ৪৪৬ সুকুমারী ভট্টাচার্য/ এখন বেদ মানলে পিছিয়ে পড়ব # ৪৫৮ কৃষ্ণা বসু/ ধর্ম ও নারী # ৪৬৩ তসলিমা নাসরিন/ নির্বাচিত কলাম # ৪৭৪ প্রবীর ঘোষ/ আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না # ৪৮৪ হাফিজুর রহমান/ যে দিকে যাই হোঁচট খাই # ৫১১ মেজবাহ উদ্দিন জওহের/একজন আস্তিকের জবানবন্দী # ৫১৮ হাসান ফকরী/ধর্ম ও ঈশ্বর অস্বীকারে বাধা কোথায় ? # ৫৩৮
চতুর্থ অধ্যায় ধর্ম ও রাজনীতি আনিসুজ্জামান/ ধর্মনিরপেক্ষতা # ৫৪৭ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী/ সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতা # ৫৫১ মওলানা আবদুল আওয়াল/ জামাতে ইসলামীর ধর্মব্যবসা/৫৫৪ বিচারপতি দেবেশচন্দ্র ভট্টাচার্য/বাংলাদেশের সংবিধান ও ধর্ম # ৫৬১ বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন/ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কেন ? # ৫৬৮ কবীর চৌধুরী/ মানুষের জন্য ধর্ম, না ধর্মের জন্য মানুষ # ৫৭৮ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী/মৌলবাদের শক্তি কোথায় ? # ৫৮৩ বদরুদ্দীন উমর/ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার # ৫৯২ আবুল কাসেম ফজলুল হক/ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার # ৬০২ গৌতম নিয়োগী/ রামজন্মভূমি বনাম বাবরি মসজিদ : একটি ইতিহাস-বিরোধী বিতর্ক # ৬৩২ গৌতম রায়/ বামিয়ান ও তালিবান, হিন্দু তালিবান # ৬৫২ কাজী নূরুল ইসলাম/ধর্ম ব্যবহার হচ্ছে গোষ্ঠী স্বার্থ হাসিলে # ৬৫৯
মনিষীদের উক্তি যদি মেনে নেওয়া যায় যে ঈশ্বরই সব কিছুর নির্মাতা, তাহলে কর্মে ইচ্ছা ও উৎসাহ থাকবে না। - গৌতম বুদ্ধ তা তিনি থাকুন, আমার দরকার বোধ হচ্ছে না। -বিদ্যাসাগর মানুষ যত রকম প্রেমের আস্বাদ পেয়েছে তার মধ্যে তীব্রতম প্রেম লাভ করেছে ধর্ম থেকে এবং মানুষ যত রকম পৈশাচিক ঘৃণার পরিচয় দিয়েছে তারও উদ্ভব হয়েছে ধর্ম থেকে। -বিবেকানন্দ আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগণ ঐ ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন। ...এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষ-রচিত বিধি-ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে। -রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আমরা হিন্দু মুসলমান যেমন সত্য। তার চেয়ে বেশী সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোনও আদর্শের কথা নয়; এটি একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে তা মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার জো-টি নেই। -ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ সংস্কৃতি শিক্ষিত ও মার্জিত লোকের ধর্ম। প্রেম, সৌন্দর্য ও আনন্দের চেতনা তারা সংস্কৃতির মাধ্যমেই লাভ করেন। আর সাধারণ মানুষ তা পেয়ে থাকেন ধর্মের মারফতে। -মোতাহের হোসেন চৌধুরী শাস্ত্রে আস্থাবান আস্তিক ঈশ্বর অন্তর্যামী বলে জেনে-মেনেও করে না হেন অপরাধ-অপকর্ম-অন্যায় নেই। আস্তিকেরা কেবল সামান্য পরিমাণে বা মাত্রায় লোকনিন্দার ও রোষের এবং বহুলমাত্রায় সরকারী শাস্তির ভয়েই নানা অপকর্ম থেকে বিরত ও সংযত থাকার চেষ্টা করে মাত্র। তবু প্রলোভন প্রবল হলে সে আস্তিক মানুষ করে না হেন অপকর্ম জগতে নেই। -ড. আহমদ শরীফ
লেখক পরিচিতি মোহাম্মদ আবদুল হাই (জ.১৯৫৯) : লেখক , গবেষক ও শিক্ষাবিদ। প্রতিষ্ঠাতা মহসচিব বিদ্যাসাগর সোসাইটি ও পরিচালক সেন্টার ফর হায়ার এডুকেশষন অ্যান্ড রিসার্চ। বাংলার বাইরে বাংলাচর্চা (২০০৪) , প্রমিত বাংলা (২০০৪), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০০৫), গবেষণা : প্রকরণ ও পদ্ধতি (২০০৬), বিদেশীদের সংস্কৃত ও বাংলা ভাষাচর্চা (২০০৮), Foreigner's Contribution to Sanskit and Bangla (২০০৯), Bangla For Foreigners (২০১০), A Transcendental Travel to Iran (২০১১), বাংলপাদেশে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যচর্চার ইতিহাস (২০১৩) প্রভৃতি গ্রন্থের প্রণেতা। পাবলো নেরুদা (কবি শামসুর রাহমান সহযোগে, (২০০৪), বঙ্গভঙ্গ : শতবর্ষে মূল্যায়ন (২০০৫) , কবীর চৌধুরী: শিল্পসাহিত্যে ক্লানিহীন পরিব্রাজক (২০০৬), রবীন্দ্র সুভাষণ (২০১২) প্রভৃতি গ্রন্থের সম্পাদক। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করলে পরের বছর (২০০০), বিদ্যাসাগর সোসাইটির প্রতিনিধি হিসেবে প্যারিসে How to Conversion With Bangla Language to Other Language নামে বাংলাভাষার সঙ্গে বিশ্বের অপরাপর ভাষার কীভাবে ধ্বনি রূপান্তর করে তাৎক্ষণিক অনুবাদ সম্ভব সে বিষয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন । ২০১১ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মুসলিম বিশ্বের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন। থিয়সফিক্যাল সোসাইটি (চেন্নাই), ইউনাইটেড রিলিজন্স্ ইনিশিয়েটিভ (সানফ্রান্সিস্কো) ও সেক্যুইউনিটি বাংলাদেশ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানরে সক্রিয় সদস্য। প্রবন্ধ সাহিত্যের জন্য ২০০৫ সালে কলকাতা নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার লাভ। ২০১১ সালে কলকাতার খ্রিস্টান সোসাইটি কর্তৃক মাদার তেরেসা সম্মাননায় ভূষিত।