ভূমিকা স্বর্ণখনির ভেতরে সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু লোহার শাবল। গল্পকারদের জন্যে এই কথাটি মর্মান্তিক সত্য। গল্পের উপকরণ ছড়িয়ে আছে প্রতিদিনের জীবনে, কিন্তু তা যেন পাথরের মাঝে মিশে থাক স্বর্ণের মতোই, তাকে গুঁতিয়ে কুপিয়ে খুঁড়ে বার করে এনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করার পরই অভীষ্টের দেখা মেলে। সেই খননকার্যের জন্যে ব্যবহৃত লেখকমানস কমবেশি লোহার মতোই, অন্যত্র তার কদর কম, তার পরিচয় ও মূল্য উপলব্ধ হয় গল্পের জগতে ঠোকাঠুকির সময়। যে সময়ের খনিতে সে নিমজ্জিত, তার সঠিক নমুনা তুলে এনে তাকে আবার ঢালতে হয় গল্পের ছাঁচ আর নকশায়। লেখকের নিজের বলতে ঐ কল্পনার নকশাটুকুই, বাকি সতবই সমেয়র অতল গর্ভ থেকে ধার করা। তাই হরেক পদের নকশায় লেখা গল্প পাঠকের জন্যে ছেঁকে যোগ করা হয়েছে এই সংকলনে। উদ্দেশ্য, পাঠক যেন গভীরা রাতে গল্প পড়তে গিয়ে কিছুটা শিহরিত হন, দিনান্তে মনমরা হয়ে ঘরে ফিরে এসে একটু হাসির অবকাশ পান, আলস্যসুখে ভরা ছুটির দিনে একটু পরিচিত বিষাদের স্পর্শ পান, পরিচিত পৃথিবীর কুশীলবদের একটু ভিন্ন চোখে দেখার তাড়না অনুভব করেন, কেবল নতুন কিছু দেখার জন্যেই অসম্ভবের ক্যানভাসে আঁকা ছবিতে চেনা জগতকে দেখেন। পাঠকের তৃপ্তি সময়খনকে ভূমিকায় পারিশ্রমিক, আর অতৃপ্তি তার আরো খননের অনুপ্রেরণা। চমৎকার একটি প্রচ্ছদের জন্যে স্যামকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। অনলাইনে লেখক সমাবেশ সচলায়তনের সহলেখক ও পাঠকবৃন্দ বরাবরই আমাকে উৎসাহ যুগিয়ে আসছেন, তারাও ধন্যবাদার্হ। গল্পগুলো গ্রন্তকারে প্রকাশের জন্যে উদার প্রেরণাদায়ী অগ্রজপ্রতিম লুৎফর রহমান রিটনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাঠককে অগ্রিম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি, পাঠ ও পাঠপ্রতিক্রিয়ার জন্যে। মাহবুব আজাদ কাসেল, জার্মানি,নভেম্বর ২০১২
মাহবুব আজাদ পেশাগত জীবনে কিছুদিন অধ্যাপনা ও সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে পেশা বদল করে বাংলা একাডেমিতে যােগদান করেন। দু’বছর আগে উপ-পরিচালক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বাংলা একাডেমিতে যুক্ত থাকাকালে উত্তরাধিকার’-এর সহ-সম্পাদক ও কিশাের ত্রৈমাসিক ‘ধান। শালিকের দেশ’-এর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় গণপ্রচার মাধ্যম থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও ক্যামেরা কৌশল বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে সৈয়দ শামসুল হক। রচিত ‘লাশ’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের সাথেও যুক্ত ছিলেন। নব্বইয়ের শেষ। দিকে আলমগীর কবিরের সাথে সহ-পরিচালক। হিসেবে ‘আলতা বানুর করচা’ প্রাথমিক কাজ শুরু করলেও হঠাৎ দুর্ঘটনায় আলমগীর কবির। মৃত্যুবরণ করলে সেই ছবি আর নির্মাণ হয়নি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীতে তাঁর চলচ্চিত্র ও অন্যান্য বিষয়ে অনেক লেখা প্রকাশিত। হয়েছে। এছাড়া মাহবুব আজাদের একাধিক গ্রন্থ বাংলা একাডেমি ও শিশু একডেমি থেকেও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি শিশু একাডেমি অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন।