"বাংলাদেশের সমকালীন ঘটনাপ্রবা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: এ প্রকাশনায় মোট ছাপ্পান্নটি কলাম প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রায়শই রাজনীতি, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, কৃষি, খাদ্য ও দারিদ্র্য বিমোচন সংক্রান্ত বিষয়ে খবর প্রকাশ ও বিশ্লেষণ করা হয়। সাম্প্রতিককালে এ বিষয়গুলো নিয়ে কিছু কিছু সংবাদপত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে। এ সমস্ত ক্ষেত্রে প্রকাশিত ঘটনাবলী সম্বন্ধে লেখক কলাম লিখেছেন। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই পরিকল্পনাবিদ ও রাজনীতিবিদরা দারিদ্র্য বিমোচনের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন। বর্তমানে এ বিতর্ক বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রমাণ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস কর্মসূচি, যার আওতায় প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির পূর্বশর্ত হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন সংক্রান্ত কৌশল প্রণয়ন। দীর্ঘদিন মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞতালব্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে লেখকের কয়েকটি কলাম এ বিষয়ে আলোকপাত করেছে। রাজনীতি ও সুশাসন প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সরকারী ক্ষমতা কেন বিষে দল বা ব্যক্তির নয়। ক্ষমতার উৎস হচ্ছে সংবিধান ও সংবিধানের আওতায় আইনের প্রদত্ত প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমত। এ ক্ষমতা সংকীর্ণ ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে বার করলে সুশাসন ব্যহত হয়। কু বা অপশাসনে ইব্র তুরা হত হয়। এতে জনগণের দুর্ভোগ বৃদ্ধি ২ জন নেয় রাজনৈতিক অস্থিরতার। উপরোক্ত বিষয়টি কয়েকটি কলমে বলার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে জাতি ও সশসন সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখায়। ব্যর্থ রাষ্ট্র বা অকর্য, বইসহ অনুরূপ কয়েকটি কলামে এ প্রসঙ্গটিই আলোচিত হয়েছে। অনেকেই একটি যথার্থ প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন। রাষ্ট্র ও সরকার কি সমার্থক? নিশ্চয়ই নয়। তবে সরকারের সুশাসনের ক্রমাগত ব্যর্থতা বিদেশে রাষ্ট্রে ব্যর্থতা হিসাবেই চিহ্নিত হয়। সরকার বা কোন দল হিসাবে নয়। এ বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। লেখকের কলামগুলো বিশ্লেষণমূলক ও গবেষণাধর্মী। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভংগী ত লেবর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট। ভাষা ও শব্দের ব্যবহার রুচিশীল ও সংযত। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি সরকারি কর্মকান্ড ও নীতির সমালোচনা করেছেন যা পক্ষপাতমুক্ত। এ সমালোচনা বা বিশ্লেষণে তাঁর দীর্ঘ। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সহায়ক হয়েছে সন্দেহ নেই। সরকারের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পর্যায়ে এবং মাঠ পর্যায়ের বিচারব্যবস্থার চলমান ধারা সম্বন্ধে প্রকাশিত সংবাদের সংক্ষিপ্ত খর ব্যতীত বিশ্লেষণধর্মী ও গবেষণাপ্রসূত লেখা খুব বেশী নেই বললেই চলে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে বলতে হয় বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত কলামগুলো নিঃসন্দেহে বিরাজমান শূন্যতা অনেকাংশে দূর করেছে।
এ এম এম শওকত আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে ১৯৬৪ সালে কিছুদিন সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেন । ১৯৬৫ সালে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৬ সালে তদানীন্তন সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান-এ যােগ দেয়ার পর সরকারের বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। সরকারি চাকরি থেকে ২০০১ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি গবেষক ও পরামর্শক হিসাবে কাজ শুরু করেন। কলাম লেখক হিসাবে তিনি যাত্রা শুরু করেন ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। দু’টি ইংরেজি ও দু’টি বাংলা দৈনিকে তাঁর কলাম প্রতিমাসে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে । তাঁর লেখার বিষয়বস্তু প্রধানত কৃষি, খাদ্য, দারিদ্র্য বিমােচন, সুশাসন ও মানবাধিকার সংক্রান্ত। ইংরেজিতে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে : ফিল্ড এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (১৯৮২),পলিটিক্স এন্ড ল্যান্ড সিস্টেমস ইন বাংলাদেশ (১৯৮৪), পলিটিক্স, উপজেলা এন্ড ডেভেলপমেন্ট (১৯৮৬), এ্যাগ্রিকালচারাল ক্রেডিট ইন বাংলাদেশ (১৯৯০), অ্যাসপেক্টস্ অব পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন বাংলাদেশ (১৯৯৩), কমপ্রিহেনসিভ বিবলােগ্রাফী অন এ্যাগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (১৯৯৪), দ্য লাের অব দ্য ম্যান্ডারিনস: টুয়ার্ডস এ নন পার্টিজান পাবলিক সার্ভিস (২০০২) এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস: এ পলিটিক্যাল এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পারসপেকটিভ (২০০৪)। উপরােক্ত গ্রন্থাবলির মধ্যে পলিটিক্স এন্ড ল্যান্ড সিস্টেম বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে । ফিল্ড এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট বইটিও খুব শিগগিরই বাংলায় প্রকাশিত হবে বলে আশা করা যায় । সবকয়টি গ্রন্থই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্র ছাত্রীদের জন্য নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জির অন্তর্ভুক্ত।