ফ্ল্যাপে লিখা কথা শরীরে প্রচণ্ড রক্তশূন্যতা। এগিয়ে এলো এক মুসলমান বন্ধু। ওই বন্ধুটি নিজের রক্ত দিয়ে সুস্থ করে তুলল তার সহপাঠীকে। এরপরই শুরু হয় স্বজাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে ‘জাত গেল’ ‘জাত গেল’ বলে কানাঘুষা। ঘরে বাইরে প্রত্যেকের তীর্যক মন্তব্য -‘হিন্দু ছেলে হয়ে কী করে মুসলমানের রক্ত শরীরের নিল?’ লেখকের মনে প্রশ্ন এসেছিল-যখন রক্ত শূন্যতায় সে মরতে বসেছিল, তখন স্বজাতি হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ তো এগিয়ে আসেনি। তাহলে জাত দিয়েই হবেটাই বা কী ? এমনকি করেই জাতপাত দূরে ঠেলে মানুষকে ভালোবাসার মন্ত্র কলেজ পড়ুয়া এক ছেলে। সেই ছেলে নানা অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে এখন পঁচাত্তর বছরের পৌঢ় । জীবন সায়াহেৃ এসে প্রথম বারের মতো তুলে নিলেন কলম। আর লিখনের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা । ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, দেশভাগ, গণভোট, ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তান শাসনামল, ১৯৬৪ ইংরেজীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, উনসত্তরের গণঅভুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ সহ নানা বিষয়ের আশ্চর্য ডকুমেন্টেশন লেখকের এই আত্নবিবৃতি। বারীন্দ্রকুমার দাশের লেখা ‘উজান-ভাটি : এক শিক্ষকের আত্নস্মৃতি বইয়ের পরতে পরতে রয়েছে এক ব্যক্তিত্ব-নির্মাণের কাহিনি। যে ব্যক্তি তাঁর কৃষিজীবী নিরক্ষর বাবা-মায়ের উৎসাহ-উদ্দীপনায় সততার রাস্তায় অবিচল পথ চলে হয়ে উঠেছে ভাটি অঞ্চলের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ‘বারীন্দ্র স্যার’। সেই স্যারের আত্নবিবৃতি হাওর অঞ্চলের সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি বিশিষ্ট সংযোজন।