“শাম্ব" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ শাম্ব কাহিনী- বিশেষতঃ তাঁর পিতার দ্বারা অভিশপ্ত হওয়া, শাপমােচন ও মুক্তি, বহুবিধ ঘটনা তত্ত্ব তথ্যের জালে আবৃত। আমি তার অনেক বিষয়ই বাহুল্যবােধে ত্যাগ করছি। কেবল তাঁর প্রতি পিতার অভিশাপের কারণ এবং শাপমােচন বিষয়কেই আমি যথাসম্ভব সহজভাবে বলতে চেয়েছি। কৃষ্ণ যেমন আমার কাছে ইতিহাস-প্রসিদ্ধ মহামানব, তেমনি শাম্বকেও আমি প্রাচীনতম কালের একজন আশ্চর্য প্রতিভাশালী, ত্যাগী, “বিশ্বাসী” উজ্জ্বলতম ব্যক্তিরূপে দেখেছি। ইতিহাসে অনেক সময়েই, পরবর্তীকালে অনেক ঘটনা স্থূলহস্তাবলেপে প্রক্ষিপ্তভাবে প্রবেশ করে। যেমন শাম্বর সৌর উপাসনার মধ্যে অনেকে “তন্ত্র”-এর সন্ধান পেয়েছেন বা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। আমি তা গ্রহণযােগ্য বলে মনে করিনি। মুষল-প্রসব বা পর্ব এবং যদুবংশের ধ্বংসের সঙ্গে তার যােগাযােগ কতােখানি যুক্তিযুক্ত আমি সে-বিষয়ও এই কাহিনীতে উপস্থিত করা প্রয়ােজন বােধ করিনি। আমি একটি ব্যক্তির কথাই বলতে চেয়েছি, যিনি অতি দুঃসময়েও বিশ্বাস হারান না, যিনি দৈহিক ও মানসিক কষ্টের ভিতর দিয়েও নিরন্তর উত্তীর্ণ হবার চেষ্টা করেন। শাম্ব আমার কাছে এক “সংগ্রামী ব্যক্তি বিশ্বাস” এখানে আমার বক্তব্য বিষয়, এবং এক বিপন্ন ব্যক্তির উত্তরণকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখতে চেয়েছি, দেখতে চেয়েছি কালের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।
সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮) প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক। কালকূট ও ভ্রমর তার ছদ্মনাম। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে ওঠে। ১৯৮০ সালে তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। এক সময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। দেবেশ রায় তাঁর মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, 'জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক'। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইছাপুরের গান ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে ১৯৪৯-৫০ সালে জেলও খাটতে হয়, জেলখানায় তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ রচনা করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কালকূট মানে তীব্র বিষ। এটি তাঁর ছদ্মনাম। 'অমৃত কুম্ভের সন্ধানে', 'কোথায় পাব তারে' সহ অনেক উপন্যাস তিনি এ নামে লিখেছেন। বহমান সমাজ থেকে বাইরে গিয়ে একান্তে বেড়াতে ঘুরে বেরিয়েছেন আর সে অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ভ্রমণধরমী উপন্যাস । হিংসা, মারামারি আর লোলুপতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে যে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল, সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে অমৃতের সন্ধান করেছেন । তাই কালকূট নাম ধারণ করে হৃদয়ের তীব্র বিষকে সরিয়ে রেখে অমৃত মন্থন করেছেন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে৷ “অমৃত বিষের পাত্রে”, “মন মেরামতের আশায়”, 'হারায়ে সেই মানুষে', 'তুষার শৃঙ্গের পদতলে' ইত্যাদি এই ধারার উপন্যাস। ছদ্ম নামে লেখা শাম্ব উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৮০ সালের আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন তার কোনো তুলনা নেই। তাঁর নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস। 'চিরসখা' নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্যে সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলকে নিয়ে বহু ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যা শিশুসাহিত্য হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোগোলের দুটি কাহিনী চলচ্চিত্রায়িতও হয়।