ফ্ল্যাপে লিখা কথা ... এভাবে, আমি অবশ্যই আপনার বিরোধিতা করব যখন আপনি বলেন যে ধর্মীয় দষ্টিভ্রমের কাছ থেকে প্রাপ্ত সান্তনা ছাড়া চলতে মানুষ পুরোপুরি অক্ষম, সেগুলো ছাড়া জীবন-যাতনা এবং মির্মম বাস্তবতা মানুষ সহ্য করতে পারবে না। সেটা সত্য অবশ্যই তাদের জন্য, যাদের মধ্যে আপনি শৈশবকাল থেকেই ধীরে ধীরে মধুর-অথবা অম্লমধুর-বিষ ঢেলেছেন। কিন্তু বিচারবুদ্ধির পরামর্শে যারা বেড়ে উঠেছেন সেই মানুষগুলো কী হবে? যে মানুষগুলো মতিচ্ছন্নতায় ভোগের না মাদকদ্রব্যের সহায়তায় তাদের তা দমন করার দরকার হবে না। সত্য যে, তারা এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে নিজিদের আবিষ্কার করবেন। তাদের মহাবিশ্বের সাপেক্ষে নিজেদের নগণ্যতা এবং পরিপূর্ণ মাত্রায় নিজেদের অসহায়ত্বকে মেনে নিতে হবে; তারা সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নিজেদের দেখবেন না, কোনো ঐকান্তিক প্রতিপালকের স্নেহশীল তত্ত্বাবধায়নের পাত্র হবেন না। তাদের অবস্থান হবে এমন এক শিশুর মতো যে কিনা নিজের উষ্ণ এবং আরামদায়ক পৈতৃক নিবাস ছেড়ে এসেছে। তবে অবশ্যই শৈশবাবস্থাকে অতিক্রম করা হচ্ছে অবধারিত। মানুষ চিরকাল শিশুটি হয়ে থাকতে পারে না, শেষ পর্যন্ত মানুষকে অবশ্যই নির্মম বাস্তবতার মোকাবেলা করতে হবে। আমরা ব্যাপারটিকে বাস্তবতার শিক্ষা নামে অভিহিত করতে পারি। আপনার কাছে কাবুল করার দরকার আছে কি যে এমন সম্মুখ পদক্ষেপ নেওয়ার আবশ্যিকতা নির্দেশ করার হচ্ছে আমার বর্তমান রচনার একমাত্র উদ্দেশ্য?
সিগমুন্ড ফ্রয়েড ১৮৫৬ সালের ৬ মে ফ্রেইবার্গের মােরাভিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন শেষে ১৮৮১ সালে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর থেকেই ফ্রয়েড মস্তিষ্কের শরীর সংস্থান, স্নায়ু রােগসহ মানসিক ব্যাধি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এবং পরিণতিতে মনােবিশ্লেষণ নামে এক নতুন জ্ঞানকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটান, যার প্রভাব অদ্যাবধি মানববিদ্যার সকল শাখায় অবিসংবাদিত। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৩৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর লন্ডনে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।